আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য কিছু কিছু জিনিস ২ বারের মতো পরখ করে দেখি যে আসলেই সেটা করেছিলাম কিনা,যেমনঃ দরজায় তালা দিয়েছিলাম তো?- আরেকবার দেখে আসি। গ্যাস স্টোভ বন্ধ করেছিলাম তো?- আরেকবার দেখে আসি। এইরকম আরেকবার পরখ করে দেখাটা আমাদের জন্য খুবই সাধারণ একটা বিষয়। কিন্তু যদি এমন হয় আপনি ২ বা ৩ বারের জায়গায় ৪ বার বা ৫ বার কিংবা এমন হলো আপনি বার বার পরখ করে দেখার পরও বাইরে গিয়ে আবার বাসায় ফেরত এসেছেন এইটা দেখার জন্য যে আপনি আসলেই চুলা বন্ধ করেছেন কিনা তাহলে এটা স্বাভাবিক না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এমন আচরণকে OCD(obsessive Compulsive disorder) বা বাংলায় আবেশিক অনুকর্ষী ব্যাধি বলে।
এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যাক্তিরা যুক্তিহীন অবসেশন (অনর্থক চিন্তার পুনরাবৃত্তি) এবং কম্পালসনের (সেই চিন্তা অনুযায়ী কাজ করার অদম্য ইচ্ছা) এক চক্রের মধ্যে আটকে পড়েন। বর্তমানে শতকরা ৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। নারী এবং পুরুষ সমানভাবে এই ডিসওর্ডারের শিকার হতে পারেন। সাধারণত কৈশোর এবং তার পরবর্তী সময়ে এই ডিসওর্ডারের প্রকটতা দেখা যায়। অনেকের মধ্যে শুধু কম্পালসন বা অবসেশন দেখা যায়।তবে বেশিরভাগই কম্পালসন এবং অবসেশন ২টাতেই ভুগেন। উদাহরণ হিসেবেঃ OCD এর কমন একটি ধরন হচ্ছে শুচিবায়ু (অনেকে OCD কে শুচিবায়ু হিসেবেই ধরে থাকেন তবে এটি ভুল)। বার বার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে চাওয়াটা হচ্ছে অবসেশন আর আমার হাত মনে হয় অপরিষ্কার, জীবানু লেগে আছে এই ধারণাটা বার বার মাথায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বার বার আসাটা হচ্ছে কম্পালসন। ঠিক তেমনি উপরে লেখা বার বার পরখ করে দেখাটা হচ্ছে অবসেশন আর বাসা সুরক্ষিত আছে নাকি তা বার বার মাথায় চারা দেয়াটা হচ্ছে কম্পালসন।
আপাতত OCD কে সাধারণ ডিসওর্ডার মনে হলেও এর বিস্তার ব্যপাক।অনেক রকম ফোবিয়া এবং ধারণা এদের মনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে রাখে।যেমনঃ অনেকের মধ্যে ক্ল্যসট্রোফোবিয়া বা বদ্ধ জায়গার ভয় প্রচণ্ড পরিমাণে থাকে। যার ফলে রোগী ভীড় ট্রেনে-বাসে উঠতে ভয় পায়। এছাড়া, ফাঁকা জায়গায় একা যেতে ভয় (অ্যাগোরাফোবিয়া), অন্ধকারের ভয় (নিক্কোফোবিয়া), কঠিন রোগ-ব্যাধির ভয় (প্যাথোফোবিয়া), একাকীত্বের ভয় (মোনোফোবিয়া), রক্ত দেখলে ভয় (হেমাটোফোবিয়া), ঊচ্চস্থানের ভয় (অ্যাক্রোফোবিয়া) ইত্যাদি বহুবিধ আতঙ্ক OCD রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। এই ধরনের আতঙ্ক-জনিত উৎকণ্ঠার শারীরিক লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয় দমবন্ধ ভাব, বুক-ধড়ফড়ানি, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া। সাধারণত এইসবকে OCD এর লক্ষন হিসেবে সাইক্রাটিস্টরা গন্য করে থাকেন।
এবার আসি OCD কেনো হয় তা নিয়েঃ DSM-5 বা মানুসিক রোগের ডায়াগনস্টিক এন্ড স্ট্যাস্টিক্যাল ম্যানুয়েলের ৫ম সংস্করণ অনুযায়ী, আমাদের মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষ দিয়ে তৈরি অনেকগুলি স্নায়ু আছে। এমনই একটি স্নায়ু হল কর্টিকো-স্ট্রায়াটো-থ্যালামো-কর্টিক্যাল (সি-এস-টি-সি) । কোনও কাজ বা চিন্তা করার সময়ে কোথায় থামা উচিত তা এই স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। OCD-র সমস্যায় ‘সি-এস-টি-সি’ সার্কিট ঠিকমতো কাজ করে না এবং রোগী বুঝে উঠতে পারেন না কোথায় তার কাজ বা চিন্তায় ইতি টানা উচিত। আর তাই একই চিন্তা বারবার আসতে থাকে ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা দেখা যায়।অনেক সময় OCD কে জেনেটিক বলেও ধারণা করা হয়। কারণ দেখা যায় মা বা বাবা কেউ OCD তে আক্রান্ত হলে সন্তানের মধ্যেও তার লক্ষন পাওয়া যায়।
এবার আসি সমাধানে, অন্য সকল ডিসঅর্ডারের মত এই ডিসঅর্ডারও হেলাফেলা না করে মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় সময় মত থেরাপির অভাবে OCD আরো ভয়ংকর আকার ধারণ করে।অনেকে প্যানিক এটাক ও অ্যাংজাইটি এটাকের শিকার হয়। থেরাপির মধ্যে সাইক্রিয়াটিস্টরা সাধারণত বিভিন্ন রিলাক্সেশন মেডিটেশন করতে বলেন এবং নিকোটিন, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন পুরোপুরি বর্জন করতে বলেন। সর্বোপরি আক্রান্ত ব্যাক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়।
© নাদিয়া ইসলাম
সোর্সঃ
https://www.mayoclinic.org/.../symptoms-causes/syc-20354432
https://www.hopkinsmedicine.org/.../obsessivecompulsive...
https://www.helpguide.org/.../obssessive-compulsive...
https://my.clevelandclinic.org/.../9490-obsessive...