শুচিবাই বা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)
বিষন্নতার চেয়েও ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি ওসিডি
☑ যেকোনো বিষয়ে মনের মাঝে বারবার আসা চিন্তাকেই অবসেশন বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি মনের অজান্তে হয়ে থাকে। একে আবিষ্কারের নেশা হিসেবেও আখ্যা দেওয়া যায়। কেননা চিন্তাটি বারবার মনে এসে একটি তাড়না তৈরি করে বলেই মানুষ কিছু আবিষ্কার করতে পারে,সেটি কোনো যন্ত্রই হোক বা লেখা কোন বই বা উপন্যাসই হোক।
⭕ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার :
☑ ধরা যাক, কারো মনে হলো তার হাতে বা গায়ে ময়লা লেগে আছে। যদিও তিনি ভালো করেই জানেন কোথাও ময়লা নেই, তারপরও চিন্তাটি বারবার আসতে থাকে এবং তিনি বারবার হাত ধুতে যান। এমনকি বারবার সাবান ব্যবহার করতে থাকেন। এখানে ময়লার চিন্তাটি হলো অবসেশন, আর হাত ধোয়াকে বলা হবে কম্পালশন। এ দুটি মিলিয়েই রোগটির নাম দেওয়া হয়েছে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা ওসিডি যাকে বাংলায় শুচিবাই বলা হয়।
✖ অবসেশন বা এধরনের চিন্তার বিষয় যেকোন কিছু হতে পারে।ভালো-মন্দ,সুন্দর -অসুন্দর বা নতুন যেকোন কিছু।তবে রোগের ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয়গুলো হয় সাধারণত হয় ময়লা, ধর্ম,যৌনতা , রাগ ইত্যাদি নিয়ে।
✖ ধরা যাক ধর্ম যৌনতা নিয়ে অসাভাবিক কোনো চিন্তা বারবার কারো মনে আসছে,যেটিকে তিনি সত্য নয় বলেই জানেন। যেটিকে তিনি বারবার মন থেকে সরাতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না।তখন তার মনের অবস্থা কি হতে পারে।
✖ অনেকে নামাযে দাঁড়িয়ে বারবার নামায ছেড়ে দেন,উল্টাপাল্টা চিন্তা মনে আসার কারণে। অনেকে জানেন তার কোনো অসুখ নেই তবু বিভিন্ন পরীক্ষা করতে থাকেন, ডাক্তারের কাছে যেতে থাকেন। দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে সন্দেহ দানা বাধা,তা যথাযথ হয়েছে কিনা ক্রমাগত পরীক্ষা করতে থাকেন।
✖ এভাবে একটি চিন্তা বারবার মনের মধ্যে বারবার আসতে থাকে, যে চিন্তাটি তিনি করতে চান না। অর্থাৎ চিন্তাটি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধ এ আসতে থাকে। চিন্তাটি ব্যক্তির কাছে অপ্রয়োজনীয় বা অহেতুক মনে হয় এবং সেই সংগে মনের মধ্যে এক প্রচণ্ড বিরক্ত তৈরি করে।
✖ ওসিডির ফলে মানুষের মনে এক বদ্ধমূল ধারনা হয়,যা তার কাছে শেষ পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বা চিরাচরিত অভ্যাসে পরিণত হয়। অথচ তিনি জানেন যে তার এহেন আচরণের কোন অর্থই হয় না। সেটা সম্পূর্ণ বাড়াবাড়ি।
⭕ওসিডি বা শুচিবায়ের কারণ :
☑ অন্য অনেক মানসিক রোগের মতো ওসিডির সঠিক কোনো কারণ এখনও আবিষ্কৃত হয় নি।কেউ বলেন মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ফাংশন কম হওয়ার কারণে,কেউ বলে কিছু কিছু নিউরোকেমিক্যালের তারতম্যের কারণে,কেউ আবার জেনেটিক বিষয়গুলোকে কারণ হিসেবে দাড় করাতে চেয়েছেন।এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য কারণ হচ্ছে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সামান্য তারতম্যের কারনে শুচিবায় হয়।
‍☠ ওসিডি সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিস অর্ডারের থেকেও অনেক প্রচলিত অসুখ এবং মোট জনসংখ্যার ১-৩ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হয়। ‍☠
⭕ওসিডি বা শুচিবায়ের চিকিৎসা ঃ
☑যেহেতু আপাত দৃষ্টিতে অন্য কোনো অসুবিধা দেখা যায় না,তাই সমাজে এটিকে কেউ রোগ হিসেবে মানতে চান না।ভুক্তভোগীর ভেতরের কষ্টকে অনেক সময় অবহেলা করা হয় এই ভেবে যে ঐ চিন্তা না করলেই হয়।অনেক সময় রোগী নিজেও তার সমস্যাটি প্রকাশ করতে চান না।বলার মতো না, এমনটা ভেবে নিজেই সমস্যা নিয়ন্ত্রন করতে চান।
☑ যতো আগে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই ভালো। ওষুধ বা সাইকোথেরাপি দুটোই প্রয়োজন। নির্দিষ্ট করে বললে ক্লোফ্রানিল বা এসএসআরআই গ্রুপের যেকোনো ওষুধ, সেই সাথে সাইকোথেরাপি সিবিটি বা কিউ এক্সপোজার ও রেসপন্স প্রিভেনশন।
☑ চিকিৎসার অভাবে রোগী আত্নহত্যা পর্যন্ত করতে পারে।
⭕ওসিডি সম্পর্কে সঠিক ধারনার জন্য কিছু বইয়ের উল্লেখ করা হল :
◻ Brain lock by Jeffrey M. Schwartz
◻ The OCD worldbook : your guide to breaking free from Obcessive Compulsive Disorder,3rd Edition paperback by Bruce M. Hyman.
© Sabeen Ayesha, Science Bee Family