আবহাওয়া অফিস বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দেখালেই বন্দরের জেটিতে থাকা বড় বড় জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে ছোট ছোট জাহাজ, ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়। সাধারণ মানুষের কাছে বড় জাহাজকে বিপদের সময় গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া ‘অমানবিক আচরণ’ মনে হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ কাজটি করে জাহাজের নিরাপত্তা ও ক্ষতি কমানোর জন্য।
জেটিতে বাঁধা বড় জাহাজগুলো প্রচণ্ড ঝড়ে রশি ছিঁড়ে একটি আরেকটির ওপর আছড়ে পড়লে, ধাক্কা দিলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে। বন্দর চ্যানেলে যদি কোনো জাহাজ ডুবে যায় তবে বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সবচেয়ে বড় কথা মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) হচ্ছে কৃত্রিম বা প্রটেকটেড হারবার না থাকলে বড় জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
মোটা দাগে কারণগুলো -
১. জাহাজ বিশেষ ধরনের দড়ি দিয়ে বাধা থাকে বন্দরে, ঝড়ের সময় এই দড়িগুলো সহজেই ছিড়ে যায় ফলে পাশাপাশি থাকা জাহাজগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। যা শুধু জাহাজের মানুষের জীবনই বিপন্ন করবে না, সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের বিপর্যয়ও ঘটাতে পারে। যদি তাদের তেলের ট্যাংক ছিদ্র হয়ে যায়। তবে বাড়বে আরো বিপদ।
২. প্রত্যেকটা পোর্টের জাহাজ চলাচলের জন্য একটা চ্যানেল থাকে। এই কারণে ঝড়ের সময় দড়ি ছিড়ে যদি জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চ্যানেলে আড়াআড়ি ভাবে আটকে যায়, তাহলে ঝড়ের পর জাহাজটি না সরানো পর্যন্ত ওই বন্দর আর ব্যবহার করা যাবে না। যা খুব সময় এবং ব্যয় সাপেক্ষ।
২০১৭ সালের ৩০ মে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানা ঘূণির্ঝড় মোরার ঢেউয়ের তোড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান কারী ‘এমভি ক্রিস্টাল গোল্ড’ নামের একটি দৈত্যকায় জাহাজ নোঙর ছিঁড়ে পারকি সৈকতে উঠে আটকা পড়ে।
তারপর বহু চেষ্টা করেও জাহাজটি আর সমুদ্রে নামানো বা ভাসানো যায়নি। পরে এই জাহাজটি ভাঙ্গার জন্য নিলামে ক্রয় করে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ নামে একটা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় এবং পরিবেশের ক্ষতির শঙ্কায় এটি কাটাও যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় জাহাজটি সমুদ্র সৈকতের জন্য গলার কাঁটা হয়ে আছে।
এই কারণে সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে মালবাহী জাহাজকে সমুদ্রতীরে না এসে গভীর সমুদ্রে সমুদ্রে অবস্থান করতে বলা হয়।
©Abdullah Mohammad Abu Darda