আসলে এই নিয়ম চালু হওয়ার পেছনে ইতিহাসবিদরা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
সংখ্যাগত কারণ: ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিটি এসেছে আমাদের হাতের যে ১০টি আঙ্গুল আছে তার কারণেই, কারণ এর ফলে কোনও কিছু গণনা করতে সুবিধা হয়।
আজ থেকে অন্তত প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, সুমেরীয় সভ্যতা তাদের জটিল গাণিতিক এবং জ্যামিতিক হিসাব করার জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করার পরিবর্তে ১২ এবং ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতো।
এই ১০ ভিত্তিক পদ্ধতির একটি সীমাবদ্ধতা হলো, এই সংখ্যাটিকে ২ ও ৫ ছাড়া অন্য কোনও সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। সেই তুলনায় কিন্তু দেখতে গেলে ১২ কে ২, ৩, ৪, ৬ দ্বারা এবং ৬০ কে ২ থেকে ৬ পর্যন্ত সব সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা যায়। ফলে এসব পদ্ধতিতে ভগ্নাংশের কাজের হিসেব করা অনেকটাই সহজ ছিল।
এছাড়া সুমেরীয় সভ্যতার মানুষদের পরবর্তীতে ব্যাবলনীয়রা তাদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আর যে বাকি চারটি আঙ্গুল আছে তার তিনটি করে বিভাজন হিসাব করে এক হাতে মোট ১২ পর্যন্ত গণনা করত। এক হাতের ১২টি সংখ্যাকে যদি অন্য হাতের ৫টি আঙ্গুল দ্বারা গুণ করা হয় তাহলে দুই হাত মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ পাওয়া যায়। এটিও এই মিনিট-সেকেন্ড গণনা করার ক্ষেত্রে এই ৬০ সংখ্যাটি নির্বাচন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
জ্যামিতি ও জ্যোতির্বিদ্যা : সুমেরীয় সভ্যতা পতন হয়ে যাওয়ার পরে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্যাবলনীয়রা কোণ পরিমাপ করার জন্য ডিগ্রীর আবিষ্কার করে। সে সময় তারা মনে করত যে, পৃথিবী ৩৬০ দিনে মাত্র একবারই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অর্থাত্‍ যদি প্রতিদিনের কৌণিক আবর্তনকে ১ ডিগ্রি হিসেবে ধরা হয়, তাহলে একবার পূর্ন প্রদক্ষিণ করতে ৩৬০ ডিগ্রি সম্পন্ন হয়।
ইতিহাসবিদদের ধারণা অনুযায়ী, এখান থেকেই প্রথম বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রির ধারণাটি আসে। বৃত্তের এক ষষ্ঠাংশ, অর্থাত্‍ ৬০ ডিগ্রি একটি প্রকৃত কোণ তৈরী করে। অর্থাত্‍ যদি ৬০ ডিগ্রী করে বৃত্তের ভিতরে ছয়টি ত্রিভুজ আঁকা হয়, তাহলে প্রতিটি ত্রিভুজই সমবাহু ত্রিভুজ হয়। এই কারণেই তখন থেকেই জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিদ্যায় এই ৬০ সংখ্যাটির একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
৩৩৫ থেকে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট একটি বিশাল এলাকা জয় করেছিল, তার ফলে ব্যাবিলনের এই জ্যোতির্বিদ্যা গ্রীস এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর যখন ইসলামের আবির্ভাব ঘটে তখন মুসলিম বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদরাও রোম এবং ভারত থেকে ১২ এবং সময় পরিমাপের ক্ষেত্রে এই ৬০ সংখ্যাটিকে গ্রহণ করে। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্র : কোয়ারা.কম।