নাসা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের গ্যালাক্সির ছবি প্রকাশ করে বিশ্বের মানুষকে চমকে দিয়েছে। এর আগে নাসা বেশ কিছু টেলিস্কোপ মহাশূন্যে পাঠিয়ে দূরবর্তী অনেক গ্যালাক্সির ছবি ধারণ করেছে। তবে সেগুলো হয়তো ৩০-৪০ কোটি বছর আগে সৃষ্ট গ্যালাক্সি। তার মধ্যে চমক ছিল। মানুষ এখন মহাজগতের আরও অনেক তথ্য জানার সম্ভাবনা দেখছে।
এখন মানুষ ভাবছে, প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের মহাকাশের কোনো গ্যালাক্সির ছবি ধারণ করা যদি সম্ভব হয়, তাহলে এই মহাজগতের সৃষ্টির সূচনালগ্নেরও একটি চিত্র হয়তো তুলে ধরা সম্ভব হবে। কারণ, মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে এই মহাবিশ্বের সূচনা ঘটেছিল। এখন ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের ছবি এসে গেছে। তাহলে আর মাত্র কয়েক কোটি বছর আগের মহাজগতের ছবি পাওয়া তো সময়ের ব্যাপারমাত্র।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আরও আগের কোনো গ্যালাক্সির সৃষ্টি-মুহূর্তের ছবি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে হয়তো ধরা পড়বে, কিন্তু বিগ ব্যাংয়ের সূচনালগ্নের ছবি তোলা সম্ভব হবে না। কেন? সেটাই বলছি। সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সায়েন্স টাইমসে এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত লেখা ছাপা হয়েছে। কেনেথ চ্যাংগের সংক্ষিপ্ত লেখাটি ১৯ জুলাই দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
বিগ ব্যাংয়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য মহাকাশবিজ্ঞানীরা আগেও বিভিন্ন সময়ে ব্যাখ্যা করেছেন। নাসার কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্ল্যাংক মিশন এ বিষয়ে অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। ফলে বিগ ব্যাংয়ের অনেক বিষয়ই জানা গেছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে বিগ ব্যাংয়ের ছবি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ কেন ধারণ করতে পারবে না?
এর প্রধান কারণ হলো, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ অসাধ্যসাধন করতে পারছে। কারণ এই টেলিস্কোপ দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে বিচ্ছুরিত ইনফ্রারেড আলোকরশ্মি বেছে নিতে পারে।
কিন্তু কসমোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগ ব্যাংয়ের সময় বিচ্ছুরিত মাইক্রোওয়েভের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ইনফ্রারেড আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক বড়। ফলে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে সেটা ধরা পড়বে না।
তাই বিগ ব্যাংয়ের চিত্র পাওয়ার জন্য হয়তো আমাদের আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে। নতুন গুণসম্পন্ন টেলিস্কোপ হয়তো অনাগত ভবিষ্যতে এই অসাধ্যসাধন করবে।
লেখক: আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো এবং মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক