কম তাপমাত্রায় মস্তিষ্কের অধিক কার্যকারিতার কারণ নিয়ে গত কয়েক দশকে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে, বাড়ছে এই জগতে মানুষের জানার পরিধি। এই ইস্যুতে গত দুই দশকে গবেষণা হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও, গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ সব কারণ।
প্রথমত, অধিক তাপমাত্রা মানুষের মানসিক ধকল বাড়িয়ে দেয়, প্রভাবিত করে কগ্নিটিভ ফাংশন । কগনিটিভ ফাংশন প্রভাবিত হওয়ার কারণে, অধিক তাপমাত্রায় মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কম থাকে, মনোযোগে ঘাটতি তৈরি হয়, কম তাপমাত্রার অঞ্চলের মস্তিষ্কের চেয়ে কম থাকে স্মৃতিশক্তি। ফলে তাপমাত্রা আসলে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মৌলিক জিনিসগুলোকে প্রভাবিত করে।
দ্বিতীয়ত, কম তাপমাত্রার পরিবেশে সাধারণত সূর্যের আলোর উপস্থিতি কম থাকে। মানুষের মস্তিষ্কের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হলো কম তাপমাত্রায় মস্তিষ্কে নিরাপত্তাহীনতার অনুভুতি তৈরি হয়। ফলে কম আলোতে অধিক কার্যকর থাকে মস্তিষ্ক, মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ তৈরি হয় পরিস্থিতির নিরিখে। ফলে কম তাপমাত্রার অঞ্চলের মানুষের মস্তিষ্ক অধিক কার্যকারিতা দেখায় যেকোনো সমস্যার বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধানে।
তৃতীয়ত, যেকোনো কাজ করতে শরীরের অন্যান্য অংশের মতো মস্তিষ্কেরও শক্তির প্রয়োজন হয়। মস্তিষ্কের এই শক্তির যোগানের প্রাথমিক উৎস হচ্ছে গ্লুকোজ। পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তির সরবরাহ পেলে মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে কার্যকরভাবে ভাবতে পারে, বের করতে পারে ভালো সমাধান।
মানুষের শরীর অধিক তাপমাত্রায় থাকলে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরকে শীতল করা হয়, আবার ঠান্ডায় থাকলে শরীরে চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামার যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়াতেও শক্তির যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে গ্লুকোজ। শরীরকে উষ্ণ করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে শরীরকে শীতল করতে অধিক শক্তি খরচ হয়। ফলে অধিক তাপমাত্রার অঞ্চলে যে মানুষটি আছেন, তার শরীরে উৎপাদিত শক্তির একটা বড় অংশই চলে যাচ্ছে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রাখতে। ফলে মস্তিষ্ক কম শক্তি পাচ্ছে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য। কম তাপমাত্রার অঞ্চলে থাকা মানুষটির শরীরের তাপীয় ভারসাম্য রাখতে কম শক্তি খরচ হওয়ায়, মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে অধিক শক্তি পায়, মসৃণ হয় কগনিটিভ ফাংশন।
চতুর্থত, অধিক তাপমাত্রায় মানুষের শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়, বাড়ে মানসিক ও শারীরিক চাপ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নিসঃরণের হার। পাশাপাশি, ডোপেমিনের নিঃসরণেও গোলযোগ দেখা দেয় অধিক তাপমাত্রায়, অনিয়মিত হয়ে পড়ে সেরোতোনিনের কার্যক্রমও। ফলে অধিক তাপমাত্রায় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়, দ্রুত মেজাজ হারানোর প্রবণতা দেখা যায়, বাড়িয়ে দেয় মানসিক অসুস্থতার সম্ভাবনাও। এর পাশাপাশি, অধিক তাপমাত্রায় ক্রিয়াশীল মস্তিষ্কের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, ফলে বেড়ে যায় যেকোনো সমস্যা সমাধানে সংঘাতময় পথ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা।
তথ্যসুত্রেঃ মাহবুব মাসুম, রোর মিডিয়া