আমরা এতোটুকু জানি যে, মানবদেহ একটা চক্রাকার ঘড়ির সাথে তাল মিলিয়ে চলে, আর সেটাই মানুষকে ঘুম আর জেগে থাকার চক্র মেনে চলতে সহায়তা করে। এর পেছনের কারণটা কিন্তু আমরা জানিনা। ঘুমের সময়টাতে আমাদের দেহ টিস্যু মেরামত করে, অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণমূলক কাজ করে। বলতে গেলে, আমরা আমাদের জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ নাক ডেকেই কাটাই। আবার, কোনো কোনো প্রাণী তো একেবারেই ঘুমায় না। আমরা কেন ঘুমাই?
বেশ কিছু ধারণা প্রচলিত আছে এ ব্যাপারে, কিন্তু কেউই একদম পাকা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। কেউ কেউ বলেন, বিবর্তনের সুবাদে যেসব প্রাণী শিকারীদের হাত থেকে লুকানোর সামর্থ্য অর্জন করেছে, তারা ঘুমানোর সুযোগ বের করে নিতে পেরেছে। কিন্তু যাদেরকে সবসময়েই সতর্ক থাকতে হয়, তারা ঘুম ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে বিশ্রাম নেয়ার বা নতুন উদ্যম অর্জন করার সামর্থ্য পেয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা যদিও জানেন না আমরা কেন ঘুমাই, কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন, ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব আসলে কতখানি যেমন, মস্তিষ্কের স্থিতিস্থাপকতা ঠিক রাখা,মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক শ্বাসক্রিয়া, রক্ত সঞ্চালন, শারীরিক বৃদ্ধি ও সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই সময় আমাদের শরীরের পাঁচ শতাংশ বেশি রক্ত মস্তিষ্কের দিকে সঞ্চালিত হয়।
আমাদের ঘুম নিয়ে কিছু তত্ত্ব
Repair and Restorative theory – Oswald এর মতে ঘুম মস্তিষ্ক সহ আমাদের শরীর কে মেরামত করে থাকে। উনার মতে ঘুম এর বিভিন্ন ধাপ এ শরীরের বিভিন্ন অংশের মেরামত চলে। আমরা সারাদিন বিভিন্ন কাজে যে পরিমান শক্তি ক্ষয় করি, ঘুমের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার হয়ে থাকে। সারাদিন শরীর ও মন স্বাস্থ্যকর ও পরিপূর্ণভাবে যেন কার্যসম্পাদন করতে পারে তার জন্যে “ঘুম” আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া গুলোর জন্যে – যেমন তাপমাত্রা স্বাভাবিক করণ, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা, পরিপাকক্রিয়া ইত্যাদির জন্যে শক্তি যোগায়। যার ফলশ্রুতি তে আমরা সবাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক কাজকর্ম করতে পারি। এমন কি গবেষণায় পাওয়া যায় যে ঘুম এর সময় আমাদের মস্তিষ্ক সব বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে থাকে যা দিনের বেলায় বিভিন্ন কাজ সমপন্ন করার সময় মস্তিষ্কে জমা হয়। ধরা হয় এই বর্জ্য নিষ্কাশন এর ফলেই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টি সম্পন্ন হয়।
Evolutionary theory or Adaptive theory – এই তত্ত্ব অনুসারে বলা হয়, সব প্রাণীরই ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে উঠেছে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে এবং প্রাণী রা তখনই ঘুমায় যখন জেগে থাকা তার জন্যে বিপদজনক। এই তত্ত্ব অনুসারে, ঘুম আমাদের জন্যে একটি প্রতিরক্ষামূলক কাজ করে।
Information Consolidation theory – এই তত্ত্ব বলে মানুষ যখন ঘুমায় তখন তার মস্তিষ্কে সারাদিনের সংগ্রহকৃত সব তথ্য বিশ্লেষণ চলে। এবং এই তত্ত্ব আরও বলে যে ঘুম আমাদের পরবর্তী দিনে সব কাজ করার জন্যে তৈরি করে থাকে। গবেষকরা আরও বলেন, ঘুম আমাদের স্মৃতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নির্দিষ্ট পরিমান ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় মনে করা এবং মনে রাখতে অসুবিধা হয়েছে।
যদিও কোন একটি তত্ত্বও “আমরা কেনো ঘুমাই?” এ প্রশ্নের উত্তর সরাসরিভাবে দেয় না, তবে ঘুম আমাদের যেসকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যসম্পাদন করে তা দ্বারা আমরা যথেষ্ট ব্যাখ্যা পাই যে ঘুম কেন আমাদের জন্যে এতো প্রয়োজনীয় এবং এতো বোধগম্য হওয়ার কথা যে ঘুম এতো দরকার দেখেই আমরা ঘুমাই।
বুঝাই যাচ্ছে এখন, বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া তথ্য ও তত্ত্ব থেকে বোঝা যায় যে “ঘুম” আমাদের জীবনে অপশনাল কোন বিষয় নয় অথবা
বিলাসিতা নয়, বরং ঘুম আমাদের জীবন ধারনের একটি মৌলিক অংশ যা প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে থাকা আবশ্যক। “ঘুম” এর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগীয় কার্যকারী উপাদান রয়েছে, তাই ঘুম এর গুনাগুণ ব্যহত হলে মানুষের জীবনে বিভিন্ন দিকে এর প্রভাব পরে থাকে। একটি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্যে পরিমিত খাওয়া, ঘুম ও শারীরিক শ্রম এর কোনো বিকল্প নেই।
তত্ত্ব সম্পর্কিত তথ্যঃ
Marzia Al Hakim,Consultant Psychologist
Psycure Organization
তথ্য সংগ্রহেঃ মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান