কোলা সুপারডিপ বোরহল, পৃথিবীর কেন্দ্রে মানবসৃষ্ট সবচেয়ে গভীর গর্ত। কেন মাঝপথেই থেমে যায় এর কাজ? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

0 টি ভোট
913 বার দেখা হয়েছে
"তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে করেছেন (7,950 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (7,950 পয়েন্ট)

পৃথিবীর অভ্যন্তর নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। সবার মাথায় প্রশ্ন আসে, পৃথিবীর  কেন্দ্রে প্রকৃতপক্ষে কি কি আছে? সাই-ফাই মুভির মতো আসলেই কি পৃথিবীর কেন্দ্রে রয়েছে কাল্পনিক সভ্যতা? অথবা, কেমন হয় যদি পৃথিবীর একদম কেন্দ্র বরাবর এফোড়- ওফোড় করে বিশাল আকারের  এক্সপ্রেস টানেল বানানো যায়! তাহলে সেটা দিয়ে পৃথিবীর  এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছানো যেতো খুব সহজেই আর অল্প সময়ে। এই প্রয়াস টাই একসময় করেছিলেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা।
 

বিশ্ব ইতিহাস সাক্ষী,  রাশিয়া ও আমেরিকার মাঝে কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রীতিমতো এমন একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সেটি ছিল, কোন পরাশক্তি, পৃথিবীর কে কত গভীরে গর্ত খনন করতে পারে! তৎকালীন অন্যান্য ক্ষমতাধর দেশগুলোও গভীরতম গর্ত খোঁড়ার এক বিশাল প্রতিযোগিতায় নামে। কিন্তু, কেউ ই ভুপৃষ্ঠের ক্রাস্ট স্তর পার করে মেন্টল স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি । তৎকালীন সময়ে, রাশিয়া ও আমেরিকার মাঝে মহাকাশ গবেষণা আর মহাকাশে মানুষ প্রেরণ করা  নিয়েও বেশ কয়েকবার এমন প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। তবে সেদিকে যাবো না, আজকে কথা বলছি কোলা সুপারডিপ বোর হোল নিয়ে।

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরগুলোকে অনেক টা পেঁয়াজের শল্কপত্রের সাথে তুলনা করা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত পৃথিবীর ক্রাস্ট লেয়ার।এর নিচে থেকে শুরু হয় ম্যান্টল লেয়ার। তারপর অবস্থিত রয়েছে পৃথিবীর কোর বা কেন্দ্র ।আশ্চর্যজনক ভাবে পৃথীবীর কেন্দ্রে চাপ ও তাপ এতোই বেশি যে, সেখানে সূর্যের মতো সবসময় অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রা  বিরাজ করে।  অবশ্য এতো গরম কেন্দ্র না থাকলে পৃথিবীর চারপাশে কার্যকর চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হতো না। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে আমাদের কম্পাস গুলো কাজ করতো না আর আমরা সৌর ঝড় বা সান স্টোর্ম থেকেও সুরক্ষা পেতাম না।

প্রসঙ্গে ফিরে আসি, কোলা সুপার ডিপ বোরহোল পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর তম মানবসৃষ্ট গর্ত হিসাবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ জায়গা করে নিয়েছে। রাশিয়ার মুরমান্সক ওব্লাস্ট এলাকার কোলা পেনিনসুলা তে কোলা সুপার ডিপ বোর হোল খননের প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়। তখন আর্কটিক সার্কেল এ বোরহোল খননের সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানীরা। কেননা, সমুদ্রতলের নিচের ক্রাস্ট স্তর সবচেয়ে বেশি পাতলা। সেইসময় বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিলো পৃথিবীর ক্রাস্ট স্তর ভেদ করে ম্যান্টল লেয়ার এ পৌঁছানোর। প্রথমে খননের  লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয় ১৫ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত । কিন্তু, মাত্র ১২হাজার ২৬২ মিটার গভীর খননের পরেই থেমে যেতে হয় বিজ্ঞানীদের। প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর খোঁড়ার পর মাত্র ০.২% ভুপৃষ্ঠের নিচ অবদি   আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত চলে এই বিশেষ প্রজেক্ট । তৎকালীন প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার রা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের  মুখোমুখি হয়েছিল ভূমির সাপেক্ষে একদম লম্ব বরাবর খনন করতে গিয়ে। কেননা, যদি খোঁড়ার পথ কোনো একদিকে বেঁকে যায়, তাহলে সর্বাধিক নিচে যাওয়া সম্ভব হবে না। প্রজেক্টে ৭.৫ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে খনন করা গেলেও গর্তের পথ এরপর বাঁক নিতে শুরু করে। শেষের দিকের এক-দুই কিমিতে খননকাজ প্রত্যাশিত স্থান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে সরে যায়। তবে, বর্তমানে কোলা সুপার ডিপ বোরহোল পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে । কারণ, ১০ হাজার ফিট খনন করার পর গবেষকরা লক্ষ্য করেন, ভুগর্ভস্থ তাপমাত্রা অপ্রত্যাশিত ভাবে অনেক বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মতো। সেজন্য, ভূত্বক থেকে যত গভীরে যাওয়া হবে, ততই এক ক্ষেত্রফলে চাপ এবং বস্তুর তাপমাত্রা সমানতালে বাড়তে থাকবে। বিজ্ঞানীরা সেসময় আশা করেছিলেন, দশ হাজার ফিট নিচে সর্বোচ্চ ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে। কিন্তু, অপ্রত্যাশিত ভাবে খননপথে তাপমাত্রা তখন বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এত উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ  চাপ এ যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজই করতে পারছিলো না।যার ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞানীরা ১৯৯৪ সালে খনন স্থগিত করতে বাধ্য হন। তারপর ২০০৫ সালে পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে প্রজেক্ট টি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় । 

তবে প্রজেক্টটি বন্ধ হওয়ার আগে গবেষকরা বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য প্রকাশ করতে পেরেছেন।খোঁড়ার পর পরই বিজ্ঞানীর দাবি করেন, তারা তরল পানি খুঁজে পেয়েছেন। কি? অবাক হচ্ছেন। পানি মাটির নিচে থাকবে এটা আবার দাবি করার কি আছে! তবে কথা হলো, ৫ কিমি নিচে ক্রাস্ট স্তর অনেক বেশি পরিমাণে ঘন। এত ঘন ক্রাস্ট এর মাঝে পানির উপস্থিতি একটু আশ্চর্যজনক ই বটে। আর, প্রায় ৬হাজার ৭০০ মিটার গভীরে বেশ কিছু ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। যা বিজ্ঞানীদের বেশ অবাক করেছে। এতো বেশি পরিমাণ তাপমাত্রা এবং চাপের মাঝে কোনো জীব বেঁচে থাকতে পারে, এটা এর আগে কোনো বিজ্ঞানী কল্পনাও করতে পারেননি।সাথে বোরহোল খননের সময় ভূগর্ভে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস পাওয়া গেছে।

২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কোলা সুপার ডিপ বোরহোল পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।বিজ্ঞানীরা বোরহোল প্রজেক্ট সমাপ্ত করার পূর্বে বোরহোলের মুখ সিলগালা করে রেখে যান এবং খননের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলেন। তবে, প্রজেক্ট টা নিয়ে কিছু তত্ত্ব লোকমুখে প্রচলিত আছে। তখন নাকি গভীরতম খনন স্থানের সাথে একটা মাইক্রোফোন জুড়ে দেওয়া হয়েছিলো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শব্দ শোনার জন্য। যাতে নাকি ধরা পড়ে অদ্ভুত কিছু শব্দ। প্রজেক্টের বিজ্ঞানীদের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলা, বোরহোলের মুখ সিলগালা করা আর সৃষ্ট শব্দের জন্য অনেক কন্সপাইরেসি থিওরি তখন জনপ্রিয় হতে থাকে- যার বাস্তবতা পরখ করা সম্ভব হয় নি আর প্রজেক্টের গবেষকরাও এই নিয়ে কোনো তথ্য প্রদান করতে পারেন নি। 

লিখেছেন: খালিদ বিন ওয়ালিদ | Team Science Bee

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি ভোট
1 উত্তর 322 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 786 বার দেখা হয়েছে
+28 টি ভোট
1 উত্তর 304 বার দেখা হয়েছে
20 অক্টোবর 2020 "তত্ত্ব ও গবেষণা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন HABA Audrita Roy (105,570 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 6,006 বার দেখা হয়েছে

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

272,579 জন সদস্য

76 জন অনলাইনে রয়েছে
5 জন সদস্য এবং 71 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Shariar Rafi

    420 পয়েন্ট

  2. Tazriyan

    190 পয়েন্ট

  3. Shourov Viperr

    110 পয়েন্ট

  4. Khandoker Farhan

    110 পয়েন্ট

  5. Eyasin

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...