কুকুর হলো নেকড়ের নির্বাচনী প্রজননের ফল। কুকুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম- (Canis lupus familiaris) আর নেকড়ের- (Canis lupus) ভারতীয় নেকড়ে- (Canis lupus pallipes ). শুধু সাবস্পেসিএস আলাদা। নেকড়েরা বিশাল চারণভূমি (Homerange) নিয়ে থাকে। সেটা প্রতিরক্ষা করার জন্য হাউল (ডাক/আওয়াজ/চিল্লাচিল্লি) করে। এটি ওদের নিজের এলাকা জাহির করার একটা পদ্ধতি। এমন ভাবেই তাদের মধ্যে এই আচরণ প্রকৃতিস্থ হয়েছে, তারা কোথাও থেকে উচ্চ শব্দের আওয়াজ শুনলেই হাউল করে (তা সাইরেন হোক বা অন্য কিছু )।
কুকুরের শ্রবণ রেঞ্জ হচ্ছে 40Hz থেকে 60000Hz পর্যন্ত। যেখানে মানুষের হচ্ছে 20Hz থেকে 20000Hz পর্যন্ত। আযান যখন প্রচারিত হয় তখন আমরা যে শব্দ শুনি তার বাইরেও কিছু noises তৈরী হয়। যেগুলো আমরা শুনতে পাই না আমাদের শ্রবণ সীমার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে। যে শব্দ সমূহ সৃষ্টি হয় তা অনেক প্রকট এবং কান ঝলাপালা করে এমন কিছু শব্দ। এগুলো তৈরী হয় amplifier সার্কিট থেকে যা কুকুরের শ্রব্য সীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। সেজন্য কুকুরের দল আযানের সময়ে সম স্বরে হাউল করে। কুকুরকে আমরা নিজেদের প্রয়োজনের মতো করে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। কিন্তু তাদের হাউল এর এই আচরণ রয়ে গেছে। তাই আযানের আওয়াজ শুনলেই তারা হাউল করার চেষ্টা করতে থাকে। আরও খেয়াল করলে দেখবেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু মাত্র ফজরের আযান এবং দিনের শেষ দুই আযানেই ওরা বেশি চিৎকার করে. এই দুটি সময়ই নেকড়ের একটিভ সময়। কোনো একটা কারণে কুকুর তার বন্য প্রজাতির মতো হাউল করতে অক্ষম, বার্ক বা ভৌ ভৌ করতে থাকে।
অনেকেই বলেন, আযানের সময় শয়তান ছুটাছুটি করে পালায় আর ককুর সেটা দেখতে পাই তাই কুকুর চিল্লাচিল্লি করে বা হাউল করে। এখন, এই কথা গুলো সত্য, কিন্তু এখানে এটাকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়ছে। (এখানে কিছু ধর্মীয় রেফারেন্স দিতে পাড়তাম, কিন্তু গ্রুপ রুলসের বাহিরে বলে দিলাম না।) কুকুর যহুর বা আছরের আযানের সময় চিল্লাচিল্লি বা হাউল করে না কেনো? কারণ তখন দিনের কোলাহল পূর্ণ সময়, মাইকের অতিরিক্ত শব্দ কুকুরের শ্রবণশক্তিতে প্রভাব কম ফেলে। আবার অনেকে এখন বলতে পাড়েন, তাহলে সাউন্ড সিস্টেম দোকানের মাইক দেখে কুকুর হাউল করে না কেনো, সেই মাইকের সাউন্ড কি কুকুরের শ্রবণযোগ্য? দুইটা কারণে এর ভিন্নতা দেখা যাই-
প্রথমত, সাউন্ড সিস্টেমের মাইক গুলো প্রতিনিয়তই তারা চেক করে তারপর ভাড়া দেই, মাইকের সিকুয়েন্স ঠিক আছে কি না চেক করে, অপরদিকে মসজিদের মাইক এইযে একবার লাগানো হয়, বড় কোনো সমস্যা না হলে আর সেটা চেক করা হয় না। এটা একটা কারণ।
দ্বিতীয়ত ভাড়ায় চালিত মাইক দিয়ে মূলত দিনের কোলাহল পূর্ণ সময় মাইকিং করা হয়। রাতের গভীরে যদি মাইকিং করা হয় তবে তাদের মাইকের শব্দেও কিন্তু কুকুর হাউল করে। কোনোকিছু প্রচারের জন্য মাইকিং করলেও কি শয়তান ছুটাছুটি করে? আর এতেই প্রমাণিত হয় যে, কুকুরের হাউল করার পিছনে শয়তানের ছুটাছুটি থাকলেও ফজর, মাগরিব এবং এশার আযানের সময় হাউল করার পিছনে আযানের কোনো দোষ নাই, দোষটা হলো মাইকের। আজানে কুকুরের আপত্তি নেই, আপত্তি শুধু উচ্চস্বরে মাইকের আওয়াজে। খালি গলায় আজান দিলে কিন্তু কুকুর চিৎকার করে না।
এবার কুসংস্কার নিয়ে বলি-
দাদী, নানী বা আমাদের মুরুব্বীদের কাছ থেকে এটা শুনে অভ্যস্ত যে কুকুরে কান্না মানে কারও মৃত্যু আসন্ন। তাঁদের মতে, কুকুর তখনই কাঁদে যখন আশপাশে কোনও ‘অশরীরী আত্মা’ ঘুরে বেড়ায়। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়, সেটার উপস্থিতি টের পায় কুকুররা।
তাই তাদের আশেপাশে ‘আত্মা’ ঘুরে বেড়ালেই কুকুর নাকি কাঁদতে শুরু করে। আর কুকুর কাঁদলেই লোকজন তখন তাদের তাড়ানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলছে?
বিজ্ঞান বলছে- প্রথমত, কুকুর কাঁদে না। ওরা ঐভাবে ডাকে। রাতে এ ভাবে আওয়াজ করে দূরে তার সঙ্গীদের কাছে কোনও বার্তা পৌঁছনোর চেষ্টা করে। এ ছাড়া এ ভাবে আওয়াজ করে তার অবস্থানটা সঙ্গীদের জানায়।
দ্বিতীয়ত, ওরা প্রাণী। ওদেরও চোট-আঘাত লাগতে পারে। ব্যথা হতে পারে। শরীরে কোনও কষ্ট হতে পারে। সেই পরিস্থিতিকে জানান দিতেই ও ভাবে আওয়াজ করে সঙ্গীদের ডাকে।
তৃতীয়ত, কুকুররা একা থাকতে পছন্দ করে না। তাই যখনই একাকিত্ব বোধ করে, তখনই সঙ্গীদের ও ভাবে আওয়াজ করে ডাকে।
কুকুর মানুষ দেখলেও হাউল করে কেনো??
কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি খুবই প্রখর। যদি আপনার একটা পোশাকের ঘ্রাণ শুঁকিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, আপনি যত ভালো পারফিউম ইউজ করেন না কেনো, কুকুর ঠিকই আপনাকে ধরে ফেলবে।
আবার কুকুর মানুষের চাহনি দেখে শত্রুকে চিনে নিতে সক্ষম। আপনি তিন তের উনচল্লিশ বছর প্রেম করেও আপনার প্রেমিকার চোখ দেখে যা বুঝতে না পাড়বেন, কুকুর মূহুর্তের মধ্যেই তা বুঝে নিতে সক্ষম। কে তার প্রতি বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতে তাকাইছে আর কে তার ক্ষতি করতে চাচ্ছে। এসব কারনেই কুকুর মানুষ দেখলেও হাউল বা চিল্লাচিল্লি করে।
লেখাঃ মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম হৃদয়