মুনতানি মাটি, ইংরেজিতে ফুলার’স আর্থ নামে পরিচিত এই মাটি জাতীয় পদার্থটি এর বিভিন্ন গুণাগুনের জন্য রূপচর্চায় বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইডে সমৃদ্ধ এই মুলতানি মাটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা প্রাকৃতিকভাবে দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে সুন্দর করে তোলে। মুলতানি মাটির ব্যবহার ত্বককে উজ্জ্বল করার সাথে সাথে ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি এটি চুলের যত্নেও সমানভাবে কার্যকরী। এই আর্টিকেলে আপনাদের রূপচর্চায় মুলতানি মাটি, এর কিছু গুণাগুন এবং ত্বক ও চুলের যত্নে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানাবো।
রূপচর্চায় মুলতানি মাটি
ত্বকের যত্নে
– মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে সাহায্য করে। ফলে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। যাদের ত্বক অয়েলি তারা মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। এই প্যাকটি তেল নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে আর যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মুলতানি মাটির সাথে কাঁচা দুধ এবং আমন্ড পেস্ট মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। তবে ত্বক বেশি শুষ্ক হলে মুলতানি মাটি ব্যবহার না করাই ভালো।
– ব্রণের দাগ দূর করতে পরিমাণ মত মুলতানি মাটি, টমেটোর রস, কাঁচা হলুদ এবং স্যানডালউড পাউডার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি খুব ভালো ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে। সপ্তাহে ২-৩ দিন এটি ব্যবহার করুন। ধীরে ধীরে মুখের দাগ দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল এবং সুন্দর হবে।
– মুখে সূর্যের পোড়া দাগ বা পিগমেনটেশন দূর করতেও মুলতানি মাটি সমানভাবে কার্যকরী। আমন্ড অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগান। এটি ত্বকের পিগমেনটেশন দূর করার সাথে সাথে ত্বক নরম করতেও সাহায্য করে।
– মুলতানি মাটি স্ক্রাব হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। আমন্ড কিছুটা গুঁড়া করে এর সাথে গ্লিসারিন এবং এক চা চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে হালকাভাবে ঘষুন। এই স্ক্রাবটি কনুই বা ঘাড় থেকে কালো দাগ তুলে ফেলতে হেল্প করতে। সামান্য চিনি দিয়ে নাকের দুইপাশে ঘষলে ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইট হেডস দূর করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করবে।
– এটি মুখের রোমকূপের ময়লা ভিতর থেকে পরিষ্কার করে যার ফলে ব্রণের সংক্রমণ কমে যায়। এছাড়াও এর ফলে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
– ত্বককে বার্ধক্যের ছাপ থেকে রক্ষা করতে এক চা চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক চা চামচ টক দই এবং একটি ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এবার এটি সারা মুখে ভালো মত লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বক টানটান করে এবং স্কিন টোন সমান করতে সাহায্য করে।
– ব্রণের সমস্যা যদি খুব বেশি হয়ে থাকে তাহলে কিছু নিম পাতা বেটে মুলতানি মাটির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।
– অনেকেরই একটা কমন সমস্যা হল যে হাত পায়ের রঙ মুখের রঙ থেকে কালো হয়। এই সমস্যা সমাধানে পরিমাণ মত মুলতানি মাটি, বেসন এবং কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি হাত পায়ে ভালো মত লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট বা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন গোসলের আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি হাত পায়ের ত্বক উজ্জ্বল এবং নরম করে।
– রুক্ষ এবং প্রাণহীন চুলের জন্য ৪ চা চামচ মুলতানি মাটি, আধা কাপ টক দই, অর্ধেক লেবুর রস এবং ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সারা চুলে ভালো মত লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।
– প্রাকৃতিক ভাবে সোজা চুল পেতে এক কাপ মুলতানি মাটির সাথে ৫ চা চামচ চালের গুঁড়া এবং একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো মত মেশান। প্রয়োজনে একটু পানি দিন পেস্ট তৈরি করার জন্য। এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় এবং চুলে ভালো মত লাগান এবং লাগানোর সময় একটি মোটা চিরুনি দিয়ে চুল নীচের দিকে আঁচড়াতে থাকুন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং এরপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল সিল্কি এবং সোজা হবে।