ঘরে সবাই কমবেশি খালি পায়েই হেঁটে থাকেন। তবে বাইরে বের হলে পা খালি রাখার উপায় নেই। জুতা তো পরতেই হবে। তবে জানেন কি, প্রতিদিন খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা কতটুকু। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর হয় খালি পায়ে হাঁটলে।
ঘাসের উপর পা ফেলে হেঁটে চলার আনন্দ অনেকে উপভোগ্য হলেও, কংক্রিটের শহরে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা ও মাঠ না থাকায় খালি পায়ে হাঁটার জো নেই। তবে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় ঘরের মধ্যে হলেও খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস গড়ুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট খালি পায়ে হাঁটলে শরীর নানাবিধ উপকার পাবে। ধীরে ধীরে হাঁটার অভ্যাস গড়ুন। বাইরে খালি পায়ে হাঁটার সুযোগ না থাকলে; ঘরেই খালি পায়ে হাঁটলে বিভিন্ন শারীরিক সুবিধা পাবেন।
খালি পায়ে হাঁটলে শরীরে যা ঘটে জেনে নিন-
>> বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। খালি পায়ে হাটলে মানব দেহের ইলেকট্রনের বিস্তার বাড়ে। এই ইলেক্ট্রনগুলো নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্ট এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। মানব দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ইলেক্ট্রন দিয়ে তৈরি, যা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
>> কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে খালি পায়ে হাঁটলে। এটি উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে যায় নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটলে।
>> খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগ এবং হতাশা দূর হয়। শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত নিবিড় হবে; ততই শরীরের অন্দরে নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।
>> কিছু গবেষণায় দেখা যায়, খালি পায়ে হাঁটলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এমনকি শরীরের তাপ, ফোলাভাব এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্যি করে খালি পায়ে হাঁটা।
>> পায়ের তলায় থাকা একাধিক সেন্সারি নার্ভ, খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভিতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
>> মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি। এর ফলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়; তেমনই বুদ্ধিও বাড়ে।
>> খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে রক্তচলাচল বাড়ে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
>> পেশি ও হাড় মজবুত করতে খালি পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই। এ সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায়। অর্থাৎ বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছে যেতে শুরু করে হার্টে। ফলে পেশি এবং হাড় আরও শক্ত হয়। সেই সঙ্গে হৃদরোগের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।
>> গবেষণায় জানা গেছে, দৈনিক ভোরে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে পায়ের তলায় থাকা একাধিক প্রেসার পয়েন্টে চাপ পড়ে। এসব প্রেসার পয়েন্টের সঙ্গে চোখের সরাসরি যোগসূত্র আছে। ফলে পায়ের তলায় যত চাপ পরে; ততেই দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে।
>> নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটলে মানসিক অবসাদ কমে। সেইসঙ্গে ইনসোমোনিয়া প্রতিরোধ করে। যারা অনিদ্রায় ভুগে থাকেন; তারা নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে উপকার পাবেন।
ন্যাশনাল গো বেয়ারফুট ডে
আজ ন্যাশনাল গো বেয়ারফুট ডে বা জাতীয় খালি পায়ে হাঁটার দিন। প্রতিবছরের পহেলা জুনে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় এই দিবসটি। জুতা ছুড়ে ফেলে খালি পায়ে হাঁটার মাধ্যমে এ দিনটি উদযাপন করা হয়।
ন্যাশনাল গো বেয়ারফুট দিবস ২০০৪ সাল থেকে উদযাপিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। দাতব্য সংস্থা সোলস ফর সোলস কর্তৃক সারাবিশ্বে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ২০০৪ সালে সুনামির আঘাতে কোটি কোটি মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। তাদের সম্মানে ও সহায়তায় ২০০৫ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৯ মিলিয়ন জুতা দান করা হয়।
সোলস ফর সোলস একটি অলাভজনক সংস্থা, যা বিশ্বের লাখ লাখ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে জুতা উপহার দিয়ে থাকে। বিশ্বের এমনও মানুষ আছে, যাদের কাছে জুতা ব্যবহার শুধু বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের সম্মানে বিশ্বব্যাপী গো বেয়ারফুট দিবস পালিত হয়ে আসছে।
সূত্র: হেলথলাইন/স্টাইলক্রেজ