ইবোলা ভাইরাসের লক্ষণ কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
239 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (135,480 পয়েন্ট)

2 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (135,480 পয়েন্ট)
ইবোলা ভাইরাস নিয়ে তাহলে একটু বিস্তারিত ভাবেই বলা যাক। তবে শুরুতে একটা গল্প, যা আদতে সত্যি।
গল্প হলেও সত্যি
বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প-এর ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন। সময় ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস। এক ভদ্রলোক জনৈক চিকিত্সকের হাতে লেখা নোট নিয়ে ইনস্টিটিউটের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট পিটার পিয়ট-এর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। তাঁর সঙ্গে একটি সাধারণ ফ্লাস্ক। ফ্লাস্কে কিছু আধ গলা বরফের সঙ্গে রক্তের নমুনা। তবে নোটটি পাঠিয়েছিলেন যে চিকিত্সক, তিনি কাজ করতেন আফ্রিকার জাইরেতে, যা আজকের কঙ্গো। সেদিনের সেই ২৭ বছর বয়স্ক পিটার পিয়ট আজ লন্ডল স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেকটার। পিয়ট জানাচ্ছেন, রক্তের নমুনাটি ছিল বেলজিয়ামের এক সন্ন্যাসিনীর, যিনি জাইরে থাকাকালীন এক অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হন। কিছুতেই রোগ ধরা না পড়ায় জাইরের রাজধানী কিনসাশা থেকে তাঁর রক্তের নুমনা একজন যাত্রীর হ্যান্ড লাগেজের মধ্যে করে বেলজিয়ামে পাঠানো হয়।



ফ্লাস্ক খুলে
ফ্লাস্ক খুলে দেখা গেল রক্তের একটি শিশি ভেঙে গিয়ে ফ্লাস্কের বরফ গলা জলে মিশে গেছে। পিয়ট এবং তাঁর সহকর্মীরা এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ থাকায় ল্যাবরেটারির অন্যান্য সাধারণ নমুনার মতো করেই সেটি পরীক্ষা করছিলেন। নমুনাটি মাইক্রোস্কোপের তলায় বসাতেই আসল চিত্রটি বেরিয়ে আসে। দেখা যায়, অপ্রত্যাশিত দৈত্যাকৃতি পোকার মতো কিছু জীবানু রয়েছে তাতে। কোনও ভাইরাসের তুলনায় এই আকৃতি অস্বাভাবিক। সেই মুহূর্তের জন্য নমুনাটি ভয়াবহ মারবার্গ ভাইরাস হিসেবে শনাক্ত হলেও পরবর্তীকালে বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করে পিয়ট বুঝতে পারেন, সেটি মারবার্গ ভাইরাস নয়, অন্য কিছু।
রহস্য সন্ধানে
পিয়ট বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি আসলে নতুন এক আবিস্কারের দোরগোড়ায়। ইতিমধ্যে খবর পাওয়া গেল সেই সন্ন্যাসিনী মারা গেছেন। আরও জানা গেল আফ্রিকার সেই প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষ অজ্ঞাত রহস্যময় রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোগটির উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, ডায়ারিয়া ও রক্তবমি। দু’সপ্তাহ বাদে রাতভর বিমান যাত্রায় এই নতুন ভাইরাসের বিষয়ে জানতে ও রোগ দমন করতে কয়েকজন সঙ্গী-সহ পিয়ট কিনসাশায় গিয়ে পৌঁছান। তবে যাত্রা সেখানেই শেষ হয়নি। তাঁদেরকে আরও ১,০০০ কিমি উত্তরে নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অঞ্চলের একটি গ্রামে যেতে হয়েছিল। পিয়টদের নামিয়ে দিয়ে জাইরের প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত চিকিত্সকের বিমানের পাইলট সেদিন ‘বিদায়’ শব্দটি উচ্চারণ করে ইবোলা নদীর ধারের সেই গ্রাম ছেড়ে রুদ্ধশ্বাসে পালিয়ে এসেছিলেন।



রকমফের
আজ জানা গেছে এই ভাইরাস ফিলোভিরিডি পরিবারভুক্ত। এরা পাঁচ রকমের হয়- জাইরে ইবোলা ভাইরাস, বুন্ডিবুগিও ইবোলা ভাইরাস, সুদান ইবোলা ভাইরাস, রেস্টন ইবোলা ভাইরাস এবং টাই ফরেস্ট ইবোলা ভাইরাস। এদের মধ্যে প্রথম তিনটি আফ্রিকায় ব্যাপক সংক্রমণ ঘটিয়েছিল। সাম্প্রতিক পশ্চিম আফ্রিকার আক্রণের পিছনে রয়েছে জাইরে ইবোলা ভাইরাস।
যেখানে ছড়িয়েছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উদ্বেগজনক রোগ বলে ঘোষণা করেছে। ভাইরাসটি অত্যন্ত জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পরে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী। ১৯৭৬ সালে কঙ্গোর সেই প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের পর বিভিন্ন সময়ে রোগটি নানা জায়গায় হয়েছে। কিছুদিন আগে পশ্চিম আফ্রিকার বিস্তির্ণ অঞ্চল এই রোগের শিকার হয়। এছাড়াও গিনিয়া, সিয়েরা লিওন, লিবেরিয়া, নাইজেরিয়া ও সেনেগালে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
যেভাবে ছড়ায়
ইবোলা ভাইরাসের বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে। যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে করা হয় টেরোপোডিডা পরিবারভুক্ত বাদুর এই ভাইরাসের ন্যাচারাল হোস্ট। মানুষের শরীরে রক্ত, কোনও ক্ষরণ, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বাদুর, বাঁদর, সজারুর মতো সংক্রমিত প্রাণীর অঙ্গ বা শরীরের কোনও ক্ষরণ থেকে প্রাথমিক সংক্রমণ ঘটতে পারে। আক্রান্ত একজন মানুষের সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা রক্ত ও ক্ষরণের মাধ্যমে রোগটি অন্য মানুষে ছড়ায়। এই কারণেই সন্দেহজনক বা নিশ্চিত ভাবে ইবোলা আক্রান্ত রোগীর চিকিত্সায় যুক্ত স্বাস্থ্য পরিসেবার কর্মীরা দ্রুত আক্রান্ত হন। ইবোলা আক্রান্ত মৃত রোগীর সত্কারের অংশ নিয়েছে এমন মানুষরাও আক্রান্ত হয়ে রোগ ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে পারেন। আক্রান্ত মানুষটি ততদিন ছোঁয়াচে থাকেন যতদিন তাঁর রক্ত, সিমেন ও বুকের দুধ-সহ শরীরের বিভিন্ন রসে ইবোলার অস্তিত্ত্ব থাকে। সুতরাং রোগ থেকে সেরে উঠেও কোনও মানুষ অন্তত ৭ সপ্তাহ তার সিমেনের মাধ্যমে অন্য মানুষে এই ভাইরাস ছড়াতে পারেন।



লক্ষ্ণণ
সংক্রমণ ঘটা থেকে শুরু করে লক্ষ্ণণ প্রকাশ পর্যন্ত সময়কাল (ইনকিউবেশন পিরিয়ড) ২-২১ দিন। উপসর্গ শুরু না হওয়া পর্যন্ত কোনও মানুষকে ছোঁয়াচে বলে মনে করা হয় না। প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে পড়ে হঠাৎ জ্বর, ক্লান্তি, পেশি, মাথা ও গলায় ব্যথা। এর সঙ্গে বমি, ডায়ারিয়া, গায়ে রঅ্যাস, কিডনির প্রতিবন্ধকতা ও লিভারের কার্যকারীতায় সমস্যা। কখনও কখনও শরীরের ভিতরে বা বাইরে রক্তপাতও হয়। যেমন, মাড়ি বা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ। ল্যাবরেটারিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে আক্রান্ত রোগীর শ্বেত কণিকা বা হোয়াইট ব্লাড করপাসল্ এবং প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায় এবং লিভার এনজাইম বাড়ে।
প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের পরে ৩৮ বছর কেটে যাওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি বিশ্ব ইবোলা রোগের সবচেয়ে সাংঘাতিক মহামারী দেখল। গিনিয়া, লিবেরিয়ার মতো পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলির ৬০০-রও বেশি লোক এই রোগে মারা গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাম্প্রতিক অবস্থাকে নজিরবিহীন বলে মনে করছে । যেভাবে রোগটি ছড়াচ্ছে তাতে রোগ দমন আগের চেয়েও বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে। নির্দিষ্ট কোনও চিকিত্সা ব্যবস্থা ও ভ্যাক্সিন না থাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দমনে সত্তরের দশকের চেয়ে আমরা খুব বেশি এগিয়ে নেই। তাছাড়া রোগটি যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে ভারতও যে বিপদমুক্ত এটা বলা সমীচিন নয়।
0 টি ভোট
করেছেন (28,740 পয়েন্ট)
২১ দিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ প্রকাশ না-ও পেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে ফ্লুর মতো হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা অনুভব করে। কিছুদিন পর তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা, ত্বকে দানা দানা ওঠা, মুখে ঘা, ডায়রিয়া এবং মারাত্মক বমি শুরু হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে শরীরের ভেতরে-বাইরে রক্তপাত শুরু হতে পারে। এটি লিভার, কিডনি, হৃৎপিণ্ড অকেজো করে দেয়, ফলে রোগীর মৃত্যু ঘটে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 232 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
1 উত্তর 173 বার দেখা হয়েছে
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 192 বার দেখা হয়েছে
22 নভেম্বর 2021 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,480 পয়েন্ট)
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 272 বার দেখা হয়েছে
21 নভেম্বর 2021 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,480 পয়েন্ট)
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 298 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,459 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

266,351 জন সদস্য

75 জন অনলাইনে রয়েছে
3 জন সদস্য এবং 72 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Nafis Hasan

    220 পয়েন্ট

  2. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  3. sobujalam

    110 পয়েন্ট

  4. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  5. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...