এর কারণ মূলত দুরকমের। একটি বৈজ্ঞানিক, আরেকটি অর্থনৈতিক। প্রথমে আসি বৈজ্ঞানিক কারণ নিয়ে।
সাদা রঙের বস্তু যে তাপ শোষণ করে, তা অন্যান্য রঙের তুলনায় খুবই অল্প। ফলে বিমানের কাঠামো সাদা রঙের হলে বিমানের দেহের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়.
প্রত্যেকটি বিমানকে ফ্লাইটের আগে এবং পরে যেকোনো প্রকার ফাটল বা অন্য কোনো সমস্যার জন্য কঠিন পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোনো বিমানের ক্ষুদ্র অংশে যদি ফাটল থেকেও থাকে, তাহলে বিমানটি সাদা রঙের হলেই এটিকে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে সহজ কারণ ফাটল হলে যে ছায়া দেখা যায় সেটি প্রায় সবসময়েই সাদার চেয়ে অন্ধকার থাকে। এজন্য একটি কালো বা বাদামী রঙের বিমানে ফাটল খুঁজে বের করা একটি সাদা রঙের বিমানে ফাটল খুঁজে বের করার চেয়ে বহুগুণে কঠিন।
এমনকি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে (জলে কিংবা স্থলে) বিমানের রঙ সাদা হলে সেটি খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
২০১১ সালে US Study প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, সাদা রঙের বিমানের ঔজ্জ্বল্য বেশী থাকায় উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় পাখিদের পক্ষে এটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখা সহজ হয় ফলে সাদা রঙের বিমানের সাথে পাখির সংঘর্ষের হারও অন্যান্য রঙের বিমানের তুলনায় অনেক কম।
এই গেলো আমাদের বৈজ্ঞানিক কারণ, এবারে একটু অর্থনৈতিক কারণ দেখা যাক।
সাদা রঙ এর খরচ অন্যান্য রঙের খরচের চেয়ে কম। প্রত্যেক এয়ারলাইন্সই সবচেয়ে কম খরচে সবকিছু ঠিক রাখতে চায়, তাই বিমানের কাঠামো রঙ করার ক্ষেত্রে সবাই সাদাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
অনেক সময়েই দেখা যায় যে কোনো এয়ারলাইন্স নতুন বিমান কিনতে পারছে না কিন্ত ব্যাবসা বাড়ানো দরকার, তখন তারা অন্য কোনো অপারেটরের ব্যাবহৃত বিমান অল্প দামে কিনে নেয়। এই সেকেন্ড হ্যান্ড বিমানগুলো রঙীন হলে কম দাম পায়, কারণ সেক্ষেত্রে যারা বিমানটি কিনছে, তাদের আবার বিমানটিকে সাদা রঙ করাতে হবে, কারণ সাদা রঙের সুবিধা ছাড়া অসুবিধা নেই। বয়স্ক বিমান বেচে দেয়ার ক্ষেত্রে ভালো দাম পাওয়ার জন্যও বিমানগুলো সাদা রঙের করা হয়। (এটি বিমান সাদা রঙ করার মূল কারণ অবশ্যই নয়। পার্শ্ব কারণ)
রঙীন জামাকাপড় যেমন দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে এর রঙ কিছুটা ফ্যাকাসে হতে শুরু করে, তেমনি বিমানের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। কিন্ত বিমানের রঙ সাদা হলে এই ফ্যাকাসে ভাবটা কম দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়।