আমরা অনেকেই লক্ষ করেছি কিছু কিছু বিমান আকাশ দিয়ে চলার সময় লম্বা সাদা দাগের মত সৃষ্টি করে। দেখতে যেন অনেকটা সাদা মেঘের সূতা। এই বিমানগুলো হলো জেট বিমান এবং এরা তুলনামূলক অধিক উচ্চতায় চলাচল করে।জেট বিমান অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন বিমান যা প্রায় সুপারসোনিক কিংবা ট্রান্সোনিক গতির হয়ে থাকে। এরা এত দ্রুত গতি অর্জন করে নিউটনের ৩য় সূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে। প্রচন্ড বলে বিমান থেকে নির্গত পদার্থের প্রতিক্রিয়া বলের কারণেই জেট বিমান গতি লাভ করে। এত দ্রুত গতিতে চলার সময় জেট বিমান আকাশে সাদা দাগ সৃষ্টি করে। কিন্তু এমন কেন হয়?
জেট বিমান থেকে উষ্ণ, আর্দ্র গ্যাসীয় পদার্থ নির্গত হয়। নির্গত গ্যাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, সালফারের বিভিন্ন অক্সাইড, নাইট্রোজেন, ভুসা, অব্যবহৃত জ্বালানী প্রভৃতি থাকে। কিন্তু অধিক উচ্চতায় বায়ু চাপ এবং তাপমাত্রা জেট বিমান থেকে নির্গত গ্যাসের তুলনায় অনেক কম থাকে। ফলে নির্গস গ্যাসে বিদ্যমান জলীয় বাষ্প নিম্ন তাপমাত্রায় ঘনীভূত হয়ে জমে যেতে শুরু করে। যা সাদা মেঘের মত অবস্থা সৃষ্টি করে। একে দূর থেকে দেখলেই আমাদের কাছে সাদা দাগের মত মনে হয়। জেট বিমানের সাদা মেঘের রেখা সৃষ্টি আর শীতকালে আমাদের নিঃশ্বা্সের ধোঁয়া দেখতে পাওয়াটা প্রায় একই রকম। শীতকালে মুখ থেকে বের হওয়া উষ্ণ জলীয় বাষ্প ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে যায় বলেই ধোঁয়ার মত দেখা যায়। সাইন্স বী
সাদা দাগ এর পরিমাণ, পুরুত্ব এবং স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিমান চলাচলের উচ্চতা, সেই পরিবেশের তাপমাত্রা ও জলীয়বাষ্পের পরিমাণের উপর। এমনকি বিমান দ্বারা সৃষ্ট সাদা দাগের ধরন থেকে আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। পাতলা ও স্বল্পস্থায়ী রেখা নির্দেশ করে ঐ উচ্চতায় জলীয় বাষ্প কম, তার মানে আবহাওয়া স্বাভাবিক। অন্যদিকে পুরু ও দীর্ঘস্থায়ী সাদা দাগ নির্দেশ করে ঐ উচ্চতায় অধিক জলীয় বাষ্প বিদ্যমান, এর মানে বৃষ্টি ও ঝড় হতে পারে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে জেট বিমানের এই সাদা বলয় রেখা গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নেও ভূমিকা রাখে।
- সংগ্রহে আয়েশা আক্তার