ছুটতে থাকা এই কর্পোরেট জীবনে সবচেয়ে বেশি পরিচিত শব্দ হচ্ছে ‘চাপ’ বা ‘স্ট্রেস’। চাকরির চাপ, পড়াশোনার চাপ, ফলাফলের চাপ, প্রতিযোগিতার চাপ; কত না চাপে ঘিরে আছে দৈনন্দিনতা! আর এই মাত্রাতিরিক্ত চাপের ফলে উদ্ভূত একটি সমস্যা হচ্ছে ‘প্যানিক অ্যাটাক’।
একটু বিচলিত হওয়া কিংবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়াটাকেই কিন্তু প্যানিক অ্যাটাক বলা হচ্ছে না। এর গভীরতা আরেকটু বেশি। আকস্মিক আতঙ্কের গভীর উপস্থিতির কারণে শারীরিক বেশকিছু প্রতিক্রিয়াকে প্যানিক অ্যাটাক বলা যেতে পারে। প্রথমে এর লক্ষনগুলো কী হতে পারে, তা দেখে নেয়া যাক।
- হঠাৎ করেই প্রচন্ড ভয় পাওয়া। প্যানিক অ্যাটাক কখনোই জানান দিয়ে আসে না কিংবা এটি ঘটার আগে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, আচমকা এই আঘাত বেশ প্রাবল্য নিয়ে আসে এবং কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, পুরুষের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়ে থাকে।
- পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়। প্যানিক অ্যাটাকের ফলে ব্যক্তির মনে হবে যে সে পাগল হয়ে গেছে এবং আশেপাশের কিছুর সাথেই আর তার সঙ্গতি নেই। এতে করে তার ভয় আরো বাড়তে থাকে।
- এ সময় শরীর অস্থির হয়ে উঠবে। মস্তিষ্কের অর্ধেক নির্দেশ দেবে দৌড়ুতে এবং বাকি অর্ধেক বলবে স্থির থাকতে। মস্তিষ্ক ও দেহের অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
প্যানিক অ্যাটাক ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার নাম; Source: Reader’s Digest
- হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাবে। স্নায়বিক কিছু নির্দেশের ফলে অ্যামিগডালা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এজন্যই হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, অ্যামিগডালা বলতে মস্তিষ্কের এমন একটি অংশকে বোঝায় যা যেকোনো ধরনের ভয় বা আকস্মিক প্রতিক্রিয়ার জন্য কাজ করে থাকে। তাই প্যানিক অ্যাটাকের সময় কারো কারো এও মনে হতে পারে যে তাদের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।
- মৃত্যুভয় ব্যক্তিকে হঠাৎ করেই যেন গ্রাস করে ফেলে। বয়ে চলা ভয়ের স্রোত তাকে ভাবতে বাধ্য করে যে সে হয়তো মারাই যাচ্ছে। প্রতিটি মানুষের অবচেতনে থাকা অজানা ও অদেখা সবচেয়ে গভীর ভয়ই মৃত্যুভয় এবং এসময় তা প্রকট হয়ে ওঠে। এসময় অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ অনেক বেশি বেড়ে যায় বলেই সবচেয়ে ভীতিকর ভাবনার উদ্ভব হয়।
- আত্মরক্ষার এক অদ্ভুত তাগিদ দেখা দেয়। ব্যক্তির মনে ‘যে করেই হোক বাঁচতে হবে’- এমন ভাবনা শুরু হয়। মনে হয় দৌড়ে পালালেই এ থেকে বাঁচা যাবে।
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক হবার সময় যথেষ্ট অক্সিজেন না পাওয়ার বিষয়টি ঘটা স্বাভাবিক। আমেরিকান সাইকোলজি অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, এটি তখন হয় যখন অ্যাটাকের জন্য ব্যক্তি অতি দ্রুত শ্বাস নিতে থাকে এবং অতিশ্বাসকার্যের কারণে যথেষ্ট অক্সিজেন মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে না।
- মাথা ঘোরা। মনে হতে থাকে যেন ব্যক্তির চারপাশ ঘুরছে এবং তখন সে ভারসাম্য হারিয়ে পড়েও যেতে পারে। কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যায়। বমিভাবও এক্ষেত্রে স্বাভাবিক একটি লক্ষণ। রক্ত চলাচল বেশি বেড়ে গেলে এমনটা হয়।
- অনেক বেশি ঘামতে থাকা এবং শরীর কাঁপা। এসময় ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি দুর্বল অনুভব করে।
- অনেক বেশি গরম কিংবা ঠান্ডা লাগা। এমনকি প্যানিক অ্যাটাক মাত্র ৫-১০ মিনিট স্থায়ী হলেও এই অনুভূতি বেশ কয়েকঘন্টা ধরে চলতে পারে।
- বুকে ব্যথা। একে হার্ট অ্যাটাকের সাথেও গুলিয়ে ফেলা হয়। ভীতিকরভাবে এই দুই ব্যথার ধরনও অনেকটা একরকম। তবে পার্থক্য ধরা যায়, প্যানিক আটাকের ক্ষেত্রে বুকের মধ্যিখানে ব্যথা হয় যখন হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বা হাত এবং বুকের বাঁ পাশে ব্যথা হয়ে থাকে।