গর্ভ ভাড়া নেওয়া কিংবা সারোগেসি- কথাটা আমরা কম বেশি হয়তো অনেকেই শুনেছি কিংবা শুনিনি। হয়তোবা শুনে থাকলেও অনেকেই জানি না এর মানে কী!
আসলে সারোগেসি হলো এমন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে একজন মা নিজের গর্ভে অন্যের সন্তান বড় করে ও জন্ম দেয়।
নিঃসন্দেহে কোনো নারীর কাছে "মা" হওয়াটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। কিন্তু কী ধরণের পরিস্থিতির শিকার হয়ে সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ না করে গর্ভ ভাড়া নিতে হয়? তার আগে সারোগেসি সম্পর্কে হালকা জেনে নেওয়া যাক।
সারোগেসি দুই ধরনের হয়।
১. Traditional Surrogacy/ Partial Surrogacy: সারোগেসি চিকিৎসা প্রথার শুরুটা হয় এই ধরনের সারোগেসি তে৷ পার্শিয়াল সারোগেসি তে বাবার শুক্রাণু আর সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু থেকে শিশুর জন্ম হয়। এ পদ্ধতিতে সন্তানধারণে মা কোনো ভূমিকা পালন করে না। এক দিক থেকে সারোগেট মা-ই হয় সন্তানের বায়োলজিকাল মাদার। পার্শিয়াল সারোগেসিতে মহিলার ডিম্বাণু, গর্ভ-এই দুটোই ভাড়া নেওয়া হয়।
২. ট্রু-সারোগেসি/ জেস্টেশনাল/ আইভিএফ সারোগেসিঃ আইভিএফ পদ্ধতিতে মায়ের ডিম্বাণু ও বাবার শুক্রাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর তা সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। যেহেতু গর্ভ ভাড়া দেওয়া মহিলার ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি, তাই সারোগেট মা সন্তানের বায়োলজিকাল মাদার হওয়ার দাবী রাখে না। বাবা-মা র শুক্রাণু আর ডিম্বাণু নিষিক্ত করে যে ভ্রূন হয়, তার পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে সংশয় থাকে না। আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু-শুক্রাণু নিষিক্ত করাকে টেস্টটিউব বেবি মনে করা যাবে না।
সারোগেট মাদার কে?!
মূলত যে সন্তান জন্মদানের জন্য গর্ভ ভাড়া দিয়ে থাকে তাকে সারোগেট মাদার বলা হয়। এখন দু'ধরনের সারোগেসি (Traditional, Gestational)-র মধ্যে পার্শিয়াল সারোগেসিতে সারোগেট মাদার বায়োলজিকালি সন্তানের মা হলেও জেস্টেশনাল সারোগেসিতে তা সম্ভব নয়। IVF ( In Vitro Fertilization) এর কারণে বর্তমান সময়ে মায়ের ডিম্বাণু বের করে শুক্রাণুর সাথে মিলিয়ে ভ্রূন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে সারোগেট মাদার কে বায়োলজিকাল মাদার বলা যাবে না।
কখন দরকার একজন সারোগেট মাদারেরঃ
১. বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও মিসক্যারেজ হওয়া
২. এমন কোনো রোগ যা আপনার গর্ভধারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বা গর্ভধারণ করলে আপনার শারীরিক জটিলতা সহ যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে৷
৩. Hysterectomy- অপারেশনের কারণে জরায়ু অপসারণ হওয়া
৪. আইভিএফ চিকিৎসায়ও গর্ভধারণ না হওয়া
৫. অকাল মেনোপজ ইত্যাদি।
যদিও আজকাল অনেক সেলিব্রিটি মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে সারোগেসি-র আশ্রয় নিয়ে থাকে, তবুও কোনো সমস্যা ছাড়া সারোগেসি না করানোই ভালো।
সারোগেসি-তে মেডিক্যাল রিস্কঃ
১. একের অধিক ভ্রূন প্রতিস্থাপিত হলে মাল্টিপল বার্থের সম্ভাবনা থাকে। মাল্টিপল বার্থ এর সাথে শিশুর প্রিম্যাচিউর বার্থ, লো বার্থ ওয়েট, স্বাস্থ্য সমস্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
২. ডিম্বাশয়ে একাধিক ডিম্বাণু উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ফার্টিলিটি ড্রাগস দেওয়া হয়। খুবই কম দেখা গেছে যে এটি দেহে Ovarian Hyper-Stimulation Syndrome (OHSS) এর সৃষ্টি করে। OHHS এর ফলে রক্ত জমাট বাধা, কিডনি ফেলিওর, কখনো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে এটি খুবই বিরল অবস্থা। তাই এটা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা থাকে না।
৩. সারোগেট মায়ের জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ব্লিডিং, কিংবা সিজারিয়ান সেকশন হতে পারে।
সারোগেসি চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে অনেক নিঃসন্তান দম্পতি নিজেদের সন্তান পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারছে। যদিও অনেক দেশে সারোগেসি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আইন-কানুন রয়েছে, অনেক দেশে আবার এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিষিদ্ধ, অনেক দেশে আবার শুধু জেস্টেশনাল সারোগেসি বিদ্যমান। আবার সারোগেসি পদ্ধতি গে- সমকামীদের জন্য অনেকটাই আশীর্বাদস্বরূপ। কোনো গে-কাপল যদি নিজেদের সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করতে চায় তখন তাদের মধ্যে একজন শুক্রাণু দিয়ে আর সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু ব্যবহার করে সন্তান পেতে পারে।
সারোগেসি নিয়ে আপনার ধারণা কী? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
লেখকঃ Metheela Farzana Melody | Science Bee
#science #bee #Facts #আপডেট #kritisanon #mimi #baby