আইনস্টাইন কি আসলেই মৌমাছি নিয়ে কোনো উক্তি করেছেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
1,051 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (3,190 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (3,190 পয়েন্ট)
কথিত আছে আইনস্টাইন নাকি বলেছেন যদি পৃথিবী থেকে সব মৌমাছি হারিয়ে যায় তাহলে মানব সভ্যতা টিকবে মাত্র চার বছর। কিন্তু আসলেই কি আইস্টাইন এমন কথা বলেছেন? আর কী হবে যদি সত্যি সত্যি মৌমাছি হারিয়ে যায়?

মৌমাছি মধু ও মোম উৎপাদন এবং ফুলের পরাগায়ণের জন্য প্রসিদ্ধ। পৃথিবীতে ৯টি স্বীকৃত গোত্রের অধীনে প্রায় বিশ হাজার মৌমাছি প্রজাতি আছে, যদিও এর বেশিরভাগেরই কোন বর্ণনা নেই এবং এর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। আন্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সকল মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানেই মৌমাছি আছে।

প্রত্যেকটি মৌচাকে মৌমাছিরা বসতিবদ্ধ হয়ে একটি বড় পরিবার বা সমাজ গড়ে বাস করে ৷ বর্তমানে পৃথিবীতে মৌমাছির প্রায় বিশ হাজার প্রজাতি আছে। আকার ও কাজের ভিত্তিতে মৌমাছিরা তিন সম্প্রদায়ে বিভক্ত:

১৷ রানি মৌমাছি, যা একমাত্র উর্বর মৌমাছি

২৷ ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি

৩৷ কর্মী মৌমাছি বা বন্ধ্যা মৌমাছি

সাধারণত অনেক ধরণের ফুল বা ফল হওয়ার জন্য বা ফুল থেকে ফলে পরিণত হওয়ার জন্য পরাগরেণুকে (প্রজননের উপাদান) ফুলের গর্ভমুন্ডে এসে পড়তে হয়। পরাগরেণু গর্ভমুন্ডে আসলেই ফুল, ফুল ইত্যাদি পরিপূর্ণ হয়ে গড়ে উঠে। এই প্রক্রিয়াকেই মূলত পরাগায়ন বলে।

পরাগায়ন দু-ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো স্ব-পরাগায়ন ও আরেকটি হলো পর-পরাগায়ন।
স্ব-পরাগায়ন মানে যে নিজে নিজে পরাগায়ন সম্পন্ন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকে পরাগরেণু ও গর্ভমুন্ড একই ফুলের বা একই গাছের হতে হবে। এবং পর-পরাগায়ন মানে হলো যেখানে পরাগায়ন সম্পন্ন হতে অন্যের সাহায্য লাগে। যেমন মৌমাছি, বাতাস বা অন্যান্য পোকামাকড়। এই প্রক্রিয়াতেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়। বাতাসের মাধ্যমে পরাগরেণু উড়ে গিয়ে অন্য কোন ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়লে সেখানে নতুন ফল বা ফুল উৎপন্ন হয়। কিংবা পোকামাকড় একটা ফুলের উপর বসলে ফুল থেকে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বা মুখে পরাগরেণু লেগে যায়, পরে আবার উড়ে উড়ে অন্যকোন ফুলের উপর বসলে পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়ে। পড়লে সেখানে ফল বা ফুল উৎপন্ন হয়।

আর মৌমাছির কাজই হচ্ছে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো। কারণ তারা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সবসময়। ফলে তারাই সবচেয়ে বেশি ফুলে ফুলে ঘোরে। তারা ফুলে ফুলে ঘুরলেই আমাদের জন্য খাবার তৈরি হয়।

আমাদের পৃথিবীর একতৃতীয়াংশ খাবারের যোগানে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রয়েছে মৌমাছির। গবেষণা বলছে, পৃথিবীর সর্বশেষ মৌমাছিটি মারা যাওয়ার ঠিক তিন মাসের মধ্যে সারাবিশ্বের ফুড চেইন পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারে, বিশৃঙ্খল সৃষ্টি হবে। আমরা আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ খাবারই হাতের নাগালে পাবো না। বলা হচ্ছে, তখন অনেক দামি হিরা, জহরতের চেয়ে খাবারের দাম বেশি থাকবে। আর, একসময় আমাদের সংরক্ষণ করা খাবারও শেষ হবে! শুধুই কী খাবার? মৌমাছি না থাকলে আমরা কোন ধরণে কটন সমৃদ্ধ জামা-কাপড়ও তৈরি করতে পারবো না। কারণ মৌমাছি না থাকলে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম কাঁচামাল তুলা কখনো উৎপন্ন হবে না। ফলে জামা-কাপড়ের তীব্র সংকট দেখা দিবে।

পরিবেশের ভারসাম্য পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, খাবারের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। একসময় হয়তো আমাদের পৃথিবী আর বসবাস উপযোগী থাকবে না। মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহের মতো মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে কীটনাশকে রয়েছে নিওনিক্স নামক উপাদান যা মৌমাছিদের মেরে ফেলে। কীটনাশক ফসলকে রক্ষা নয় বরং ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে উপকারী কীটকে।

আচ্ছা এতক্ষণ তো মৌমাছি না থাকলে কী হবে সেটা সম্পর্কে জানলাম। এখন মূল প্রশ্নে ফেরত আসা যাক। আইনস্টাইন কী আসলেই এমন কোনো ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন? সঠিক উত্তর হচ্ছে না। ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট Snopes এর মতে আইনস্টাইন এমন কোনো ধরণের উক্তি কখনও করেননি। তার উক্তির লিস্ট ঘেটেও ৪ বছর কিংবা মৌমাছি নিয়ে কোনো ধরণের উক্তি খুজে পাওয়া যায়নি৷ এমনকি ১৯৫৫ সালে আইনস্টাইনের মৃত্যু থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কোনো ম্যাগাজিন বা নিউজপেপারও এমন কোনো নিউজ আসেনি। কিন্তু ১৯৯৪ সাল থেকে ম্যাগাজিন গুলোতে আইনস্টাইনকে কোট করে এই উক্তিটি ছড়ানো শুরু হয়। এরপর ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানের পর এই গুজব আরো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷

তাহলে সব কথার এক কথা এই যে মৌমাছি যদি কোনো কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে ৪ বছরের মধ্যে মানব সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমন কোনো উক্তি আইনস্টাইন করেননি। এর পাশাপাশি মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে গেলে পৃথিবীর অভাবনীয় ক্ষতি হবে ঠিকই কিন্তু ৪ বছরের মধ্যেই যে আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাব এমন ভবিষ্যৎ বাণীরও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি৷

লেখকঃ Promity | Science Bee

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+1 টি ভোট
3 টি উত্তর 916 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
1 উত্তর 409 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 1,123 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 884 বার দেখা হয়েছে
11 জুন 2022 "জীববিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Nishat Tasnim (7,950 পয়েন্ট)

10,775 টি প্রশ্ন

18,459 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

266,085 জন সদস্য

30 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 30 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Nafis Hasan

    220 পয়েন্ট

  2. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  3. sobujalam

    110 পয়েন্ট

  4. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  5. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...