চকলেট খাওয়ার কিছু উপকারিতা
প্রতিদিনই আমরা কম বেশি চকলেট খেয়ে থাকি। বিশেষত বর্তমান সময়ে এটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অংশ হয়ে উঠেছে। চকলেটে উচ্চ ফ্যাট এবং চিনির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তা ব্রণ, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি ধমনী রোগ এবং ডায়াবেটিসের এর মতো বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে ।
চকোলেটের মূল উপাদান কোকোতে জৈবিকভাবে সক্রিয় ফেনলিক যৌগ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এটি যেমন বার্ধক্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তেমনি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, রক্তচাপের মতো পরিস্থিতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
তবে চকলেটের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও রয়েছে। ভালো মানের ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। ৭০-৮৫ ভাগ কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটকেই বলে ডার্ক চকলেট।
ডার্ক চকোলেটের মধ্যে কোকো সামগ্রী যত বেশি থাকবে, তার উপকারিতা তত বেশি। ডার্ক চকোলেটে সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম ফ্যাট এবং চিনি থাকে যা একে সাধারণ চকলেটের থেকে বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ করে ।
ডার্ক চকলেট খাওয়ার উপকারিতা :
এ চকলেটের প্রধান উপাদান হল: ফাইবার, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। দিনে অল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট ও ৫০ ভাগ পর্যন্ত হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
এছাড়াও নিয়মিত চকলেট খেলে দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও শারীরিক প্রদাহ রোধেও ডার্ক চকলেট সহায়তা করে।
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে সক্রিয় জৈব উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এসব অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে এবং ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখে।
কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভানল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা মানুষকে আর উদ্দীপিত করে তোলে। নেচার নিউরোসায়েন্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তি যারা তিন মাস উচ্চ ফ্ল্যাভানলযুক্ত কোকোয়া পানীয় পান করেছেন, তাদের স্মৃতিশক্তি বেড়েছে।
চকলেটে থাকা ট্রিপটফেন নামের একটি উপাদান বিষণ্নতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে শরীরে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্ট্রেস হরমোন কমে যায়।
এ ছাড়া চকলেটে ফিনাইল ইথাইলামাইন নামক উপাদান আছে, গবেষকেরা যার নাম দিয়েছেন ‘লাভ কেমিক্যাল’। তাই সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যও নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।
চকলেট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা:
চকলেট কেনার সময় অবশ্যই কম মিষ্টি যুক্ত টা নিতে হবে । সর্বোচ্চ মাত্রার কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটই ভালো। সম্ভব হলে অরগানিক চকলেট খাওয়া উচিত।
চকলেটের লেবেলে যদি লেখা থাকে ‘প্রসেসড উইথ অ্যালকালি’ তবে তা পরিহার করতে হবে। এই পদ্ধতিতে তৈরি চকলেটে কোকোয়ার প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভানল অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ভেঙে ফেলা হয়।
কোকোয়া বাটার–বিহীন চকলেট কিনুন।
তবে এত সব উপকারী গুণাগুণ আছে বলেই যত খুশি চকলেট খাওয়া যাবে, তা নয়। পরিমিত মাত্রায় চকলেট খাওয়া ভালো।
উল্লিখিত সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলো একক অধ্যয়ন থেকে এসেছে। চকোলেট খাওয়া সত্যই মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। এছাড়াও, চকোলেট বারগুলিতে কেবল কোকো ছাড়াও আরো অনেক উপাদান থাকে। বিশেষ করে আমাদের দেশীয় চকোলেট গুলোতে চিনি এবং ফ্যাট এর পরিমাণ বেশি থাকে। এ জাতীয় চকলেট গুলোর ক্ষেত্রে উপাদানগুলির উপকারিতা এবং ঝুঁকিগুলি বিবেচনা করা দরকার।
©মুশফিকুর রহমান | সাইন্স বী
তথ্যসূত্র: healthline, Prothom alo, The guardian