বর্তমান এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে স্মার্টফোনের অন্যতম একটি সমস্যা হলো- ব্যবহারের মাঝখানে খুবই গরম হয়ে যায়। আবার হ্যাং হয়ে যায়। স্মার্টফোন গরম হওয়ার আর হ্যাং হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। তবে নানা কারণে অতিরিক্ত গরম বিপদের কারণ হতে পারে। তাই আমাদের স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হবার কারণ এবং সমাধান জানা দরকার।
কি পরিমান গরম হওয়া স্বাভাবিক:
আপনার ফোন কম দামি বলে বেশি গরম হয়, তা ঠিক নয়। স্বাভাবিকভাবে স্মার্টফোন ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হতে পারে। তবে স্ট্যান্ড বাই মোডেও যদি ফোনটি ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হয় তবে বুঝবেন আপনর ফোনে সমস্যা আছে।
ব্যাটারি:
মোবাইল কম্পানিগুলো বর্তমানে স্মার্টফোন দিন দিন পাতলা করছে। তবে তার তুলনায় ব্যাটারির প্রযুক্তি তেমন উন্নত হয়নি। ব্যাটারি যত বেশি দুর্বল হবে ফোন তত বেশি তাপ উৎপন্ন করবে। ব্যাটারি চার্জ নেওয়ার সময় অথবা ডিচার্জ হওয়ার সময়েও ফোন বেশি গরম হয়ে থাকে।
প্রসেসর:
স্মার্টফোন গরম হওয়ার একটি করণ হচ্ছে প্রসেসর গরম হওয়া। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন স্মার্টফোনের মূল অঙ্গ হচ্ছে প্রসেসর। প্রসেসর এমন একটি ডিভাইস যা সবসময় কাজ করে থাকে। আপনি ফোন ব্যবহার করেন আর নাই করেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রোড দিয়ে প্রসেসর তৈরী হয়ে থাকে। প্রসেসর স্মার্টফোনের বডির সাথে লাগানো থাকে যার ফলে তাপ অনুভব হয়।
দুর্বল নেটওয়ার্ক:
ফোন গরম হওয়ার আরেকটি করণ হচ্ছে দুর্বল নেটওয়ার্ক। আপনার ফোনে যদি নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকে তখন সিগনাল যায় আর আসে। আবার ওয়াইফাই ব্যবহারে সিগন্যালের জন্য অনেক বেগ পেতে হয়। দুর্বল নেটওয়ার্কের জন্য ফোনে বেশি চাপ পরে, যার ফলে স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে থাকে।
স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম থেকে মুক্তির উপায়:
- সবসময় খেয়াল রাখবেন যে ফোনে যেন চার্জ থাকে। একসাথে বেশি অ্যাপস চালু করে রাখবেন না। ফোনের অতিরিক্ত অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ডে বেশি জায়গা নিয়ে নিচ্ছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখুন। স্মার্টফোন বেশি ব্যবহার করলে বা ফোনে অতিরিক্ত গেমস খেললে গরম হয় এটা একেবারেই ঠিক নয়।
- র্যাম ও ক্যাশ মেমোরি সবসময় পরিস্কার রাখুন। অপ্রয়োজনীয় ম্যাসেজ ডিলিট করুন। ফোনে কোন অ্যানিমিশন চালু থাকলে বন্ধ করুন। ফোনে এমন কভার ব্যবহার করুন যেন কভারটি চামরার হয়। বাহিরের তাপে যেন ফোন গরম না হয়ে যায় সেই দিকে খেয়াল রাখুন।
- সবসময় ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি, সবসময় ডেটা চালু করে রাখা উচিত নয়।
হ্যাং হওয়ার কারণ:
মোবাইল ফোন হ্যাং হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মাঝে কিছু কারণ হচ্ছে:
- আপনি যদি অতিরিক্ত মেমোরি কার্ডের (Memory card /External Memory) পরিবর্তে ফোন মেমরিতে অর্থাৎ (Internal Memory/ROM) বেশি পরিমানে অ্যাপ্লিকেশন ইনষ্টল করেন তবে রোমের ঘাটতির কারণে ফোন হ্যাং হয়ে যেতে পারে।
- মোবাইল স্পেস কম থাকা। আমরা অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে থাকি তার প্রধান কারণ হচ্ছে অনেক আপ্লিকেশন ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু দেখা যায় মোবাইলের স্পেস কম থাকলে আপনি এই ধরনের সমস্যা বেশি পরবেন। অর্থাৎ আপনি যখন একই সময়ে অনেকগুলো আপ্লিকেশন ব্যবহার করেন তখন প্রয়োজনের তুলনায় মেমরি (RAM) কম হলে মোবাইল হ্যাং হতে পারে।
- যদি কুকিজ, চিজ, লগ টাইপ ফাইল এবং অপ্রয়োজনিয় ফাইলগুলো নিয়ম করে পরিষ্কার করা না হয় তাহলে। কারণ এগুলো মেমরি জ্যাম করে মোবাইল হ্যাং হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- আপনার মোবাইল কনফিগারেশন বা মেমরির কেপাবেলিটির তুলনায় ভারি অ্যাপলিকেশন, যেমন গেম, ভিডিও অ্যাপ চালালে মোবাইল হ্যাং হয় যেতে পারে।
আরো কিছু কারণ:
- নিয়ম মতো মোবাইল চার্জ না দেয়া।
- লম্বা সময় ফোন ঘাটাঘাটি করা।
- ভারি ফাইল ডাউনলোড করা।
- হাত থেকে পরে গেলে।
- ইন্টারনাল কোনো সমস্যা হলে।
হ্যাং সমস্যার সমাধান:
- কোন কিছু ইনষ্টল করতে চাইলে চেষ্টা করুন সেটা আপনার অতিরিক্ত (Memory card /External Memory) মেমোরি কার্ডে ইনষ্টল করতে। অর্থাৎ আপনার ফোন মেমরিকে যতটা সম্ভব ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন।
- যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করেন না, বা আপনার প্রয়োজন নেই সেগুলো আনইনষ্টল করে দিন।
- আপনার যতই সখ থাকুক যদি আপনার মোবাইলের (RAM) কম থাকে তাহলে কখনোই ভারি অ্যাপলিকেশন চালাবেন না। তাহলে আর ফোন হ্যাং হবে না।
- এটা সব সময় খেয়াল রাখুন আপনার ফোনে জেনো একই সঙ্গে অনেক অ্যাপলিকেশন না চলে।
নিয়ম করে চার্জ দিন।
রাবার জাতীয় বেক কাভার অথবা বাম্পার ব্যাবহার করুন। তাহলে হাত থেকে পরলেও মোবাইল হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
তথ্যসূত্র: ডিএমপি নিউজ, প্রথম আলো ও পরিবর্তন ডটকম।