বাঁধাকপির মূলত বাংলাদেশের একটি শীতকালীন সবজি, যা পাতাকপি নামে বেশি প্রচলিত। এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। সাধারণত রান্না করে, সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে বা ভেজে, নানান ধরনের সুপ তৈরি করে খাওয়া যায়। ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটকেমিকেলসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর এই সবজি। বাঁধাকপিতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের ভিটামিনই আছে। এতে রয়েছে রিবোফ্লোভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও কে। আসুন জেনে নেই বাঁধাকপির উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
বাঁধাকপির উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চান তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি রয়েছে।
বাঁধাকপি হাড় ভালো রাখতে সহায়তা করে:
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
আলসার নিরাময়ে উপকারী:
বাধাকপি আলসার প্রতিরোধে বিশেষভাবে সহায়ক। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বাঁধাকপির রস আলসারের জন্য সবচেয়ে উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
বাধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধ করে:
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে বাধাকপি একটি অপরিহার্য সবজি। যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, তাদের জন্য কাঁচা বাধাকপি খাওয়া উত্তম।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
বাধাকপি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে। বাধাকপিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল দূর করে শরীরকে ক্যান্সার মুক্ত রাখে।
হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
বাধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাধাকপির রস নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দূর হয়। এছাড়া বাধাকপি বুক জ্বালা-পোড়া, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে।
চোখ ও ত্বকের যত্নে:
বাধাকপি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি যা চোখের সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী। বাধাকপি ফাইটোকেমিক্যালসের অন্যতম উৎস, যা শরীর ও ত্বকের কোষকে প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করে।
চুলের জন্য বাধাকপি:
উজ্জ্বল চক চকে চুলের জন্য বাধাকপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সবজি। বাধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন আছে যা চুল পরা সমস্যা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
টক্সিন দূর করে:
পাতাকপিতে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে। যা ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমের এর মাধ্যমে লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে। পাতাকপিতে ৬৭ প্রকারের গ্লুকোসিনলেট রয়েছে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আইরনের ভাল উৎস:
পাতাকপিকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। শরীরের প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ আয়রন এই পাতাকপি থেকেই পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত আয়রন না থাকলে শরীরে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি ও মস্তিষ্কের সমস্যা হয়।
তাই, এখন থেকে প্রতিনিয়ত পাতাকপি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন। এতে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ও হবে এবং আপনি একটি ভালো ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সংগৃহীত