তেলের গুণাগুণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেশ কিছু মতভেদ বের হয়ে আসে। ইন্টারনেটেও একই অবস্থা। এক সাইট ইতিবাচক বলছে তো আরেক সাইট তেমন কোনো গুণাগুণের কথা উল্লেখই করছে না। তবে কিছু প্রসঙ্গ মিলে গেছে। চুলকে ময়েশ্চারাইজ করাটা তার মধ্যে অন্যতম। চুল লম্বা বা ঘন করার পেছনে তেলের কোনো ভূমিকা নেই। বানথাই বারবার অ্যান্ড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ কাজী কামরুল ইসলামও একই মত পোষণ করেছেন। চুলে তেল দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোন চুলে তেল দিতে হবে, কোন চুলে দেওয়া উচিত না—সেটাও আমাদের অনেকের অজানা।’
কর্মক্ষেত্রে আমাদের এক সহকর্মী সারা দিন চুলে তেল দিয়ে ঘোরার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। বেশিক্ষণ চুলে তেল রাখলে বেশি উপকার পাবে এই আশায়। কিন্তু এ বিষয়েও দ্বিমত রয়েছে। শ্যাম্পু করার ৩০ মিনিট আগে চুলের গোড়ায় তেল দিয়ে মালিশ করলেই হবে। মালিশের ফলে মাথার ত্বকে সঞ্চালন বেড়ে যাবে। গোড়াটা শক্ত হবে। ৩০ মিনিটের বেশি তেল রেখে লাভ নেই। কারণ মাথার ত্বক এই সময়ের চেয়ে আর বেশি তেল শোষণ করতে পারে না। বরং বেশিক্ষণ চুলে তেল রাখলে চুলে ময়লা এসে আটকে যাবে। চুলের গোড়া ময়লা হয়ে যাবে। দুর্বল হয়ে পড়বে চুল। কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তেল যদি দিতেই হয় তাহলে শুষ্ক চুলে দিন। তৈলাক্ত চুলের গোড়ায় তেল না দিয়ে আগায় দিয়ে রাখুন।’ প্রতিটি মানুষের শরীর থেকে তেল বের হয়। একে বলে সিবাম সিক্রেশন। চুল অনেক লম্বা হলে সেই তেলটা চুলের আগায় পৌঁছাতে পারে না। মাসের পর মাস এই কাজ হওয়ায় চুলের আগা শুকনো হয়ে গিয়ে ফেটে যায়। এটাকে স্প্লিট এন্ডস বলা হয়। যাঁদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, চুলের গোড়ায় তেল না দিয়ে আগায় দিন।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যায়। এসব তেলের চেয়ে খাঁটি নারকেল তেল ভাঙিয়ে যদি চুলে লাগান, কিছুটা হলেও উপকার বেশি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া নারকেল এনে সেটাকে কুরিয়ে, ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এক কাপের মতো দুধ নিতে পারেন। সেটাকে চুলায় ফুটিয়ে অর্ধেক কাপে নিয়ে আসতে হবে। ৪৫ মিনিট মাথায় এটি লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল কখনো রুক্ষ হবে না বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা। একটা বাড়তি চকচকে ভাব আসবে। একদিন পরপরই লাগাতে পারেন। না পারলে সপ্তাহে অন্তত এক দিন এটি চুলে দিয়ে দেখতে পারেন। লাগিয়ে দেখতে পারেন। এটা ছেলেরাও করতে পারেন। তবে যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের দরকার নেই।
খুশকির সমস্যা অনেকেরই আছে। যাঁদের অনেক বেশি পরিমাণে হয়, তাঁদের ডাক্তার দেখানো উচিত। খুশকি কখনো পুরোপুরি সেরে যায় না। যত্ন নিলে কমে যাবে, না নিলে বেড়ে যাবে। তেলের মাধ্যমে খুশকির প্রবণতা কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবেন। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাঁদের চল্টা চল্টা উঠে খুশকিটা তৈরি হয়। তাঁদের উচিত ত্বকে ভালো করে তেল মালিশ করা। খুশকি হয় দুই রকমের—শুকনো ও ভেজা। শুকনো খুশকি যাঁদের, তাঁরা ভালো করে চিরুনি দিয়ে প্রথমে চুল আঁচড়ে নিন। খুশকিগুলো পড়ে গেলে তেল একটু গরম করে নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিতে পারেন। ভালো করে মালিশ করে নেবেন। এরপর ৩০-৩৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন। তেলের মাধ্যমে খুশকি দূর করার আরেকটি ঘরোয়া পদ্ধতি হলো এক টেবিল চামচ জলপাই তেল আর এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় দিন। একইভাবে ৩০-৩৫ মিনিট রাখুন। খুশকি দূর হয়ে যাবে অনেকটাই।
রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা চুলে তেল লাগানো নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাথায় তেল মালিশ করার মাধ্যমে চুল গজায় ও বাড়ে এবং এটা পরীক্ষিত। গরম তেল মালিশের ফলে চুলের গোড়ার লোমকূপ খুলে যায়। এতে করে টক্সিন বের হয়ে যেতে পারে। এতে করে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।’ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তেলের নানা উপকারিতা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে একটি জায়গায় সবাই একমত। তাঁরা মনে করেন চুলকে নরম ও ময়েশ্চারাইজার করার জন্য তেল বেশ ভালো কাজ করে। এ কারণে চুলকে নরম রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন চুলে তেল লাগাতে হবে।
©প্রথম আলো