বৈজ্ঞানিক ডকুমেন্টেশন-সহ সর্বাধিক সময়ের জন্য না-ঘুমানোর রেকর্ডটি করেছিলেন Randy Gardner। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়াগোতে ১৭ বছরের হাইস্কুল ছাত্র গার্ডেনার ১৯৬৪ সালে ২৬৪.৪ ঘন্টা (১১ দিন ২৪ মিনিট) না ঘুমিয়ে এই বিশ্বরেকর্ড করেন। শেষ দিনে প্রেস কনফারেন্স চলাকালীন গার্ডেনার কোনও রকম শারীরিক অসুবিধে না দেখিয়ে পরিপূর্ণ প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, না ঘুমালে যে খারাপ কিছু হয় না আমি সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি। যদিও গার্ডেনারের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখছিলেন যে চিকিৎসক, সেই ডাঃ রসের দাবী, Randy মারাত্মক রকমের বৌদ্ধিক ও ব্যবহারে পরিবর্তন হয়েছিল। এই সব পরিবর্তনের মধ্যে ছিল মুডের দোলাচল, মনঃসংযোগ ও শর্ট টার্ম মেমোরির সমস্যা, প্যারানোইয়া এবং হ্যালুসিনেশন। শেষ দিনে বৌদ্ধিক অবস্থার বিচার করতে যখন তাঁকে ১০০ থেকে ক্রমান্বয়ে ৭-কে বিয়োগ করে সংখ্যাগুলি বলে যেতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি ৬৫ পর্যন্ত এসে থেমে যান। এমন কেন হল জানতে চাইলে Randy বলেন যে, তিনি ঠিক কি করছিলেন তা তাঁর মনে ছিল না।
এবারে আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক। দেখা যাক, আমাদের কেন ঘুমের প্রয়োজন হয়।
# কেন ঘুমঃ
গবেষকেরা অন্তত এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, শরীর ও মনের শক্তি পুনঃসঞ্চয় করতে ঘুমের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া সব ধরনের শারীরবৃত্তীয় কাজের মধ্যে সমতারক্ষার জন্যও ঘুমানো দরকার। একেবারে সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, স্মৃতি ধরে রাখতে, আবেগকে ঠিকভাবে পরিচালিত করতে এবং সর্বোপরি মনঃসংযোগ বাড়াতে ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এ ছাড়াও স্বাভাবিক হরমোন নিঃসরণ করতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, পুষ্টি ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতেও ঘুমের প্রয়োজন। মানুষ ছাড়াও সমস্ত স্তন্যপায়ী ও পাখি এবং বহু সরীসৃপ, উভচর ও মাছেদের জীবনচক্রে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী এবং অন্য বেশ কিছু প্রানীর (যেমন, কিছু প্রজাতির মাছ, পাখি, পিঁপড়ে) অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেও নিয়মিত ঘুম আবশ্যক। শীতঘুম, কোমা কিংবা অজ্ঞান অবস্থার চেয়ে খুব সহজেই ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত অবস্থায় ফেরত আসা যায়। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, তীব্র আলো বা জোরালো শব্দের মতো পরিবেশগত পরিবর্তনে আমাদের ঘুম ভেঙে গেলেও বাকি অবস্থাগুলি অব্যাহত থাকে।
সদ্য জন্মানো শিশু দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়, বয়স একটু বেড়ে ৩-৬ বছর হলে ঘুমের পরিমান কমে দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টায় গিয়ে দাঁড়ায়। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের পরিমাণ এবং ঘুমের গুণগত মানও কমতে থাকে। এই সময় ঘুম হয় হালকা। তা ছাড়া সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলাদের ঘুমের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক একজন মানুষের গড়পড়তা দৈনিক ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। এই হিসেবে কোনও মানুষ যদি ৭৫ বছর বাঁচেন, ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে সেক্ষেত্রে তিনি ২৫ বছরেরও বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটাবেন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া