মাছ বৃষ্টি হয় কেন? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
2,011 বার দেখা হয়েছে
"জীববিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (141,850 পয়েন্ট)

3 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (141,850 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

মধ্য আমেরিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হন্ডুরাস। মায়া সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিখ্যাত এই দেশটি কয়েক দশক ধরে মানুষের বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিস্ময়ের কারণ- মাছ বৃষ্টি! পানির বদলে মাছের বৃষ্টি, এ-ও কি সম্ভব? এই অদ্ভুত অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হন্ডুরাসে হয়ে আসছে প্রায় ১০০ বছর ধরে।

হন্ডুরাসের একটি ছোট্ট শহরের নাম ইউরো। এই শহরে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু ছিল না। ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি কোন এক বছরের মে কিংবা জুন মাসে ইউরো শহরে প্রচণ্ড ঝড় হয়, ভারি বৃষ্টিপাত আর বজ্রের গর্জনে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। ঝড় থেমে যাবার পর শহরের লোকজন রাস্তায় বের হয়ে ভারি অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখতে পায়। জলজ্যান্ত মাছ রাস্তায় লাফালাফি করছে, তাও এক-দুইটি নয়, শত শত! সেই থেকে শুরু, এরপর থেকে প্রতি বছর অন্তত একবার করে ইউরো শহরে হতে থাকে আজব এই মাছের বৃষ্টি। প্রথমদিকে সবাই ভাবত, বৃষ্টির তোড়ে আশেপাশের জলাশয় থেকে বুঝি মাছেরা ভেসে রাস্তায় চলে আসে। কিন্তু একসময় লোকে চাক্ষুষ দেখতে পায়, আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতন শয়ে শয়ে মাছ পড়ছে।

একটা অত্যন্ত গরিব শহর, যেখানকার লোকেদের একমাত্র খাবার ভূট্টা আর মটরদানা। সেখানে আকাশ থেকে মাছের বৃষ্টি ঈশ্বরের আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। রাস্তায় পড়ে থাকা এই মাছগুলো শহরবাসী মহানন্দে রান্না করে খায় এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে পরের বৃষ্টির জন্য। কেবল হন্ডুরাসই নয়; মাছ বৃষ্টির ঘটনার আলামত মিলেছে আরও কয়েকটি দেশে। গেল বছর মাছ বৃষ্টির অভিজ্ঞতা লাভ করেছে শ্রীলঙ্কা। আর সম্প্রতি থাইল্যান্ডেই মাছ বৃষ্টি হওয়ার খবর জানা গেছে। তবে তা আদৌ মাছের বৃষ্টি ছিল নাকি মাছবাহী লরি খুলে রাস্তায় মাছ পড়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল তা নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে এই দুটি স্থানের কোনটিতেই হন্ডুরাসের মতো নিয়মিত এমন ঘটনা ঘটে না।

কিন্তু মাছ বৃষ্টির মতো এত অদ্ভুত একটা ব্যাপারের পেছনে আসল কারণটা কী? প্রতি বছর এমন নিয়ম করেই বা ঘটে কেন? 

প্রথমদিকে হন্ডুরাসের খাদ্য-বৃষ্টি ছিল সবার কাছে একটি অলৌকিক ঘটনা। শহরবাসীদের কেউই ঠিক ব্যাখ্যা বের করতে পারেননি এই ঘটনার। কয়েক বছর পর সবাই ধারণা করতে থাকে, এই মাছগুলো সব পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের। ভারি বর্ষণের কারণে এরা জলাশয় ছেড়ে উপরে উঠে আসে। আমাদের দেশেও বর্ষাকালে এমন ব্যাপার লক্ষ করা যায়। আষাঢ় মাসের দিকে যখন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়, আশেপাশের পুকুর, খাল-বিল থেকে কই মাছ মাটিতে উঠে আসে। জীবন্ত কই মাছ মাটির ওপর লাফালাফি করে। এই ঘটনাকে গ্রামের মানুষ বলে ‘মাছ উজানো’। এই ব্যাখ্যাটা খুব সুন্দর মিলে যেতে পারত হান্ডুরাসের সাথে। কিন্তু কেউ কেউ মাছগুলোকে দেখে শনাক্ত করে যে, এগুলো তাদের এলাকার মাছ নয়। তারা এ ধরনের মাছের খোঁজ কখনোই কাছে-পিঠে কোনো জলাশয়ে পায়নি। মানুষের মনের মধ্যে আবারও অলৌকিকতার ব্যাখ্যা স্থান পেতে থাকে।

১৯৭০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ইউরোর এই মাছ-বর্ষণের ঘটনা একেবারে চাক্ষুষ দেখে। এসময় আবারো তারা একই ব্যাখ্যা নিয়ে আসে যে, মাছগুলো আর যেখানকারই হোক আকাশ থেকে পড়ছে না। মাটিতে পড়ে থাকা মাছগুলোর ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার লক্ষ্য করেন। মাছগুলো দৃষ্টিশক্তিহীন! তার মানে, এরা অবশ্যই সমুদ্রের খুব গভীরের মাছ। এত গভীরের যেখানে আলো পৌঁছায় না মোটেই।

এর পর এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়াটা বেশ সহজ হয়ে যায়। অনেক  ব্যাখ্যার মাঝে এখন পর্যন্ত যে ব্যাখ্যাটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য, সেটি হল পানির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোর প্রভাব। পানির উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাওয়ার সময় মাছসহ পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোকে উঠিয়ে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে পানি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ে মাছ, ব্যাঙ কিংবা অন্যান্য জলজ প্রাণী। সে অনুযায়ী হন্ডুরাসের ইউরো এলাকার মাছগুলো এসেছে সাগর থেকে। পাশে আছে আটলান্টিক মহাসাগর। যা ওই এলাকা থেকে ১২৫ মাইল দূরে।

ইউরোতে অবশ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার চেয়ে ধর্মীয় ব্যাখ্যাটাই লোকে বেশি মানে। তাদের বিশ্বাস, ১৮৬০ এর দশকে এক সাধু ইউরোতে আসেন, নাম জোস ম্যানুয়েল সুবিরিয়ানা। এখানকার লোকেদের দুঃখ-দুর্দশা আর দারিদ্রতা দেখে তার মন গলে যায়। দরিদ্রদের ক্ষুধা মেটাতে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শুরু করেন। তিন দিন তিন রাত প্রার্থনার পর অবশেষে ঈশ্বর মুখ তুলে চাইলেন যেন। আকাশ থেকে দৈবাৎ শুরু হল মাছের অঝোর বৃষ্টি। এই ঘটনাকে স্মরণ করে হন্ডুরাসে ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় ইউরোবাসীদের একটি বিশেষ উৎসব- লুভিয়া দি পিসেস। এ দিনে বৃষ্টিপাতের সাথে আসা মাছগুলোকে শহরবাসী রান্না করে খায়, সবাই মিলে আনন্দ করে। শহরের রাস্তায় মিছিল ও প্যারেড হয় সাধু ম্যানুয়েলের ছবি ও ব্যানার নিয়ে।

শুধু হন্ডুরাস নয়, এই ধরনের মাছ বা প্রাণীদের বৃষ্টির নজির রয়েছে আরো অনেক দেশেই। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরের ২৩ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় মাছবৃষ্টি হয়। ১৩০ কিলোমিটারের চেয়েও লম্বা এলাকা। ১৯৯৫ সালের গিনেস বুক অব অডিটিসে এর উল্লেখ আছে। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ইপসউচ ও ১৯৬৬ সালে নর্থ সিডনিতেও মাছবৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে হয়েছিল প্রায় ৮০০ সার্ডিন মাছের বৃষ্টি। টর্নেডো কিংবা সাধুর আশীর্বাদ, কারণ যাই হোক না কেন, মাছ বৃষ্টির ব্যাপারটা কিন্তু বেশ দারুণ। চিন্তা করেই দেখুন, বাংলাদেশের আকাশ থেকে বঙ্গোপসাগরের রূপালি ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে এসে মাটিতে পড়ছে। রাত জেগে লোকে ঝুড়ি ভরে মাছ কুড়াবে। অন্যরকম একটা উৎসব লেগে যাবে। 

হান্ডুরাস সম্পর্কে কিছু তথ্য :

হন্ডুরাসের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক ঘিরে রয়েছে ক্যারিবিয়ান সাগর, নিকারাগুয়া, গুয়েতেমালা ও এল সালভেদর। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক বেশি কোন্দলে জড়িত থাকায় এই দেশটি বিভিন্ন আক্রমণের সম্মুখীন হত। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর মতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝণগ্রস্ত দেশের একটি। ৮২ লক্ষ মানুষের মাঝে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষই বেকার, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৭%। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর মতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝণগ্রস্ত দেশের একটি। কফি, কলা আর বিভিন্ন রকমের ফল উৎপাদনে বেশ সুনাম রয়েছে দেশটির। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কলা কোম্পানি আস্তানা ছিল হন্ডুরাসে, তাই হন্ডুরাসকে এক সময় বলা হত বেনানাটিক রিপাবলিক!

তথ্যসূত্র : রোর বাংলা

0 টি ভোট
করেছেন (28,740 পয়েন্ট)
মাছ বৃষ্টি হয় কেন?বৃষ্টি হলে পুকুর বা নদীতে পানি বেড়ে যায়। ... দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে পুকুর বা জলা'শয়ের পানিতে অক্সিজেন এবং খাবারের ঘাটতি তৈরি হয়। কই মাছ বৃষ্টির পানি পাওয়ায় সে অক্সিজেন ও খাবারের জন্য স্রোতের স'ঙ্গে রিওট্যাক্সিসে সাড়া দেয়। শুধু কই-ই নয়; শিং, মাগুর, গুতুম মাছও বৃষ্টির সময় স্রোতের দিকে এবং পুকুর পাড়ে উঠে আসে।
0 টি ভোট
করেছেন (5,210 পয়েন্ট)
বিজ্ঞানীদের মতে, মাছ-বৃষ্টি অস্বাভাবিক হলেও প্রকৃতিতে এটা ঘটে থাকে। মাছসমৃদ্ধ কোনো কম গভীরতার জলাশয়ের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্র বয়ে গেলে এমন জলঘূর্ণি ঘটতে পারে। এ সময় পানিতে থাকা ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙসহ সবকিছুই ঘূর্ণিবায়ুর সঙ্গে আকাশে উঠে ঝড়ের সঙ্গে অনেক দূরে যেতে পারে।

ধন্যবাদ ্

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+3 টি ভোট
3 টি উত্তর 4,939 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
1 উত্তর 512 বার দেখা হয়েছে
06 জুলাই 2022 "পরিবেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Mahfuzur Rahman RM (9,390 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
5 টি উত্তর 699 বার দেখা হয়েছে
27 অক্টোবর 2021 "রসায়ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Anupom (15,280 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
2 টি উত্তর 805 বার দেখা হয়েছে
+6 টি ভোট
3 টি উত্তর 26,658 বার দেখা হয়েছে

10,775 টি প্রশ্ন

18,456 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

265,718 জন সদস্য

161 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 159 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Farhan Anjum

    140 পয়েন্ট

  2. Saif Sakib

    110 পয়েন্ট

  3. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  4. ATALavnia445

    100 পয়েন্ট

  5. medflexhealthso

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...