Sanjan Toufiqa-
প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির সময় কম বেশি বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। বিদ্যুৎ চমকানো ও প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ার ব্যাপারটি খুব জটিল। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, আকাশ থেকে বাজ (বিদ্যুৎপ্রবাহ) নিচে পড়ে। এটা পুরো ঘটনার একটি দিক মাত্র।বাজ পড়ার ঘটনাটি আসলে দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করে।
বজ্রপাত মূলত একটি বৈদ্যুতিক ঝলকানি। এটি এতোটাই উত্তপ্ত যে— একটি ফ্ল্যাশ চারদিকে বাতাসকে সূর্যের পৃষ্ঠের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি তাপমাত্রায় তাপিত করতে পারে। এই উত্তাপের ফলে পার্শ্ববর্তী বাতাসকে দ্রুত প্রসারিত এবং কম্পনের সৃষ্টি করে। যার কারণে আমরা প্রচন্ড গর্জন শুনতে পায় এবং আমরা একটি বাজ ফ্ল্যাশ দেখার পরে অল্প সময়ের মধ্যে শুনতে পাই।
এবার চলুন বজ্রপাত কীভাবে সংগঠিত হয় বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই।
মেঘের নিচের দিকে প্রচুর ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ ও তার বিপরীতে মাটিতে ধনাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ জমা হওয়ার কারণে অথবা মেঘের ভেতরের পানি ও বরফকণার ঘর্ষণ এবং অন্যান্য কারণে মেঘের নিচের দিকে ঋণাত্মক ও ওপরের দিকে ধনাত্মক বিদ্যুৎ চার্জের সমাবেশ ঘটে। দুই বিপরীতধর্মী চার্জের পারস্পরিক আকর্ষণে মেঘের উভয় দিকের মধ্যে একটি বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি হয়। সৃষ্ট বিদ্যুৎক্ষেত্র বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠলে মেঘের মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এটা একই মেঘের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু অন্যদিকে মেঘের নিচের দিকের ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জের আকর্ষণে মাটিতে ধনাত্মক চার্জের সমাবেশ ঘটে এবং এ দুয়ের মধ্যেও একটি বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি হয়।
বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী হওয়ায় মেঘের বিদ্যুৎ মাটিতে আসতে পারে না। তবে মেঘে অনেক বেশি চার্জ জমা হলে একপর্যায়ে মাঝখানের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ মাটিতে সঞ্চিত ধনাত্মক বিদ্যুতের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য একটি প্রবাহ লাইন সৃষ্টি করে। প্রথমে মেঘের কিছু বিদ্যুৎ চার্জ নিচে নামতে শুরু করে। ধাপে ধাপে এই বিদ্যুৎ নিচে নামতে থাকে।এই বিদ্যুৎকে তখন ‘স্টেপড লিডার’ বলা হয় । প্রতিটি ধাপ প্রায় ৫০ গজ দীর্ঘ এবং এগুলো এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের এক ভাগ সময় স্থায়ী হয়।
স্টেপড লিডারে কয়েক টন ঋণাত্মক বিদ্যুৎ থাকে। এরা ধাপে ধাপে নামতে থাকলে এর প্রভাবে মাটি থেকে ধনাত্মক বিদ্যুৎ উঁচু গাছ, ঘরবাড়ি বা টাওয়ার বেয়ে ওপরের দিকে উঠে ওদের সঙ্গে মিলিত হয়। এই পাল্টা বিদ্যুৎপ্রবাহের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার মাইল।এভাবেই ঊর্ধ্বমুখী ধনাত্মক চার্জের প্রবাহ ও নিম্নমুখী ঋণাত্মক চার্জের সমন্বয়ে শক্তিশালী বিদ্যুৎপ্রবাহের লাইন সৃষ্টি হয় এবং বজ্রপাত সংঘটিত হয়।
সুতরাং,বজ্রপাতের সময় প্রথমে ওপর থেকে নিচে ও পরক্ষণেই নিচ থেকে ওপর দিকে বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, এই জটিল প্রক্রিয়া থেকে বলা চলে, বাজ পড়ার ঘটনা দ্বিমুখী।