লাইটিক চক্রের মোট পাঁচটা ধাপ।
১ম ধাপে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সাথে যুক্ত হয়। ২য় ধাপে ভাইরাসের বেসপ্লেট ব্যাকটেরিয়ামের সংস্পর্শে আসে। ৩য় ধাপে ভাইরাল ডিএনএ ব্যাকটেরিয়ামের কোষে প্রবেশ করে। ৪র্থ ধাপে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ামের ডিএনএ এর উপর প্রভাব বিস্তার করে তাকে বাধ্য করে ভাইরাসের প্রোটিনের আবরণ বা খোলস ও ভাইরাসের ডিএনএ বানাতে। আর পঞ্চম ও শেষ ধাপে ব্যাকটেরিয়ামের কোষ ভেঙে ভাইরাসগুলো বেরিয়ে যায়।
এই চক্র পুরোপুরি শেষ হতে নেয় ৩০ মিনিট সময় লাগে, যদি আক্রান্ত ব্যাকটেরিয়া বরফে থাকে। সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে এবং ১টা সাইকেলে ~১০০টা ভাইরাস তৈরি হয়।
নিচে এই ধাপগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো।
ভাইরাসের ব্যাকটেরিয়ার উপর অবতরণ:
এই ধাপের একটা গালভরা নাম আছে, “পৃষ্ঠলগ্নীভবন” বা ইংরেজিতে ল্যান্ডিং। এই ধাপে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ামের কোষপ্রাচীরের উপরে এসে বসে। ব্যাকটেরিয়ার কিছু রিসেপটিং এর জায়গা, যেখানে ডিএনএ প্রবেশ করানো সহজ, সেইখানে ভাইরাস তার পায়ের মত স্পর্শক তন্তু দিয়ে সংযুক্ত হয়।
স্পর্শকতন্তুর সংকোচন ও বেসপ্লেটের ভাইরাসের সাথে যুক্ত হওয়া:
এই ধাপে ভাইরাস তার স্পর্শকতন্তুগুলোকে সংকুচিত করে এবং বেসপ্লেটকে ব্যাকটেরিয়ামের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এই সময়টাতে বেসপ্লেট নিচে নামার পাশাপাশি স্পর্শক তন্তুগুলো উপরে উঠে যায়, একটা টানটান করা সুতার মাঝ বরাবর উপরের দিকে চাপ প্রয়োগ করলে যেমন হয় অনেকটা সেরকম।
ভাইরাসের DNA অণু ব্যাকটেরিয়ামের দেহে প্রবেশ:
ভাইরাসের স্পর্শক তন্তু আরো সংকুচিত হয়। বেসপ্লেট ব্যাকটেরিয়ার গায়ে লেগে যায়। তখন ভাইরাসের লেজ থেকে লাইসোজাইম নিঃসৃত হয় যেটা ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর এর মিউকোপেপটাইডকে গলিয়ে ফেলে। পরে সেখানে একটা নালিকার সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়াটা আমাদের বাসায় ব্যবহৃত হওয়া ড্রিল মেশিনের কাজের প্রক্রিয়ার মত। একে বলা হয় ড্রিলিং(drilling)। বাস্তবের ড্রিল মেশিন যে ছিদ্র করে, তাতে আমরা পেরেক ব্যবহার করি। আর ভাইরাল ড্রিল মেশিনের পেরেক হচ্ছে তার DNA! সেই নালিকা দিয়ে ভাইরাল DNA ব্যাকটেরিয়ামের কোষে চলে যায়।
ভাইরাসের আবরণ ও DNA অণু তৈরি:
ভাইরাল DNA ব্যাকটেরিয়ামে প্রবেশ করার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াল DNA এর উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং পলিমারেজ এনজাইমের সহায়তায় ব্যাকটেরিয়াল কোষের DNA এর নিউক্লিওটাইড ব্যবহার করে নতুন ভাইরাল DNA তৈরি করতে থাকে। ভাইরাসের DNA অণুগুলো থেকে RNA তৈরি হয়। এই RNA থেকে পরে প্রোটিন তৈরি হয়। প্রোটিন তৈরি হয় রাইবোসোম এ। এই প্রক্রিয়ায় ভাইরাসের আনুমানিক ৫০টি জিন কাজ করে। ভাইরাসের পুরো প্রোটিন আবরণের পৃথক পৃথক অংশ (লেজ, স্পর্শক তন্তু ও মাথা) আলাদাভাবে তৈরি হয়। পরে এই অংশগুলো সংযুক্ত হয়ে পুরো খোলসটা তৈরি করে। আর খোলস তৈরি হওয়ার পর আগে তৈরি হওয়া DNA এর একটি কপি খোলসের ভিতর প্রবেশ করে। এইভাবে অনেকগুলো ভাইরাস তৈরি হয়। সবশেষে লাইসোজাইম এনজাইম তৈরি হয় যা ব্যাকটেরিয়ামের কোষপ্রাচীর গলিয়ে ফেলে।
অপত্য ভাইরাসের বহির্গমন:
এতগুলো ভাইরাস তৈরি হওয়ায় সেই ভাইরাসের চাপে ব্যাকটেরিয়ামের কোষপ্রাচীর ভেঙে ভাইরাস বের হর হয়ে আসে।