বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য লাভজনক নয়। এটি দ্বারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আসলে কতটা লাভবান হল সেটি বুজা যাচ্ছে না।
প্রথমেই লক্ষণ করুণ:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর নির্মাণ ব্যয়:
>> বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক "এইচএসবিসি"।
কক্ষপথ ক্র‍য় :
>> স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ এবং তা কক্ষপথে রাখার জন্য রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ বছরের জন্য ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে কক্ষপথটি ক্রয় করে।
★ এছাড়া রকেটটি কক্ষপথে পৌছানো এবং বাংলাদেশে গ্রাউড স্টেশন তৈরীতে রয়েছে আরো অজানা পরিমাণে ব্যয়।
নিজস্বভাবে এই স্যাটেলাইট টি ব্যবহারের কারণ ছিল:
[1]. টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করা।
[2] ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস দেয়া।
[3] যেসব জায়গায় অপটিক কেবল বা সাবমেরিন কেবল পৌছায় নি সেসব জায়গায় এ স্যাটেলাইটের সাহায্যে নিশ্চিত হতে পারে ইন্টারনেট সংযোগ।
[4] প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বা ট্রান্সমিশন টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন ব্যাহত না হয়।
[5] ব্যাবসায়িক আয় করা।
২০১৮ সালে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। আর আজ ২০২০ সাল প্রায় ২ বছর হয়ে গেল, কিন্তু কতটুকু লাভ হল বাংলাদেশের জনগণের???
★৫ নম্বর পয়েন্ট অনুযায়ী কথা ছিল ২০ ট্রান্সপন্ডার নাকি বিদেশি দেশের কাছে ভাড়া দিলে অনেক টাকা আসবে!!!!!!!
এটা আগেই অনুমেয় ছিল যে বাংলাদেশের আশেপাশের যেদেশগুলো নিতে পারে সেসব সম্ভাব্য দেশ হল (১) মায়ানমার, (২)নেপাল,(৩)শ্রীলংকা (৪)মালদ্বীপ(৫) ভূটান এসব দেশ। কিন্তু ২৭৬৫ কোটি টাকা কেবল নির্মাণ ব্যয় এমন ব্যয়বহুল একটি স্যাটেলাইট কি ভাড়া নিবে এদের কেউ???
ব্যবসা তো আর আবেগ দিয়ে হয় না।
বাংলাদেশের পাশের দেশ ইন্ডিয়ার নিজে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপ ও নির্মাণে সক্ষম। ইত্যমধ্যে একের অধিক স্যাটেলাইট মহাকাশে রয়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাব্য ব্যাবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হবে ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ কি পারবে ভারতের থেকে কম দামে নিজের ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিতে??? পারবে না। সবাই জানতো। আর চীনের কথা নাই বলি।
বাংলাদেশের কাছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট অনেকটা শ্বেত হাতি পালার মত।
কেবল দেশের টিভি চ্যানেল দিয়ে কি এত ব্যয়বহুল একটি স্যাটেলাইট এর খরচ পুষিয়ে লাভ করা সম্ভব? উত্তর না।
উপরেই বলেছি এই স্যাটেলাইট এর কাজ কি। সেখানে কেবল প্রথম পয়েন্ট বাদে বাকি কোনগুলি অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেস শতভাগ???? উত্তর শতভাগ তার কাছাকাছিও এখন অর্জন করা যায় নি।
★২ পয়েন্টের >ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস দেয়া কি সম্ভব হয়েছে ২০২০ এর মধ্যে কয়জন হোম ডিশ ব্যবহার করছে?? তাদের সংখ্যা কত? মন্তব্য বলবেন।
★ স্যাটেলাইট এসে গেছে কিন্তু ইন্টারনেটের ব্যবস্থা কি ঠিক হয়েছে। যারা বাংলাদেশে থাকেন তারা খুব ভালই অনুধাবন করতে পারে। বলার প্রয়োজন নেই।
★ সরকার বলেছিল ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে নাকি এই স্যাটেলাইটের ব্যয় তুলে নিতে পারবে বাংলাদেশ। এখন এটি স্পষ্ট যে সেটা হবার সম্ভবনা নেই এখন আর।
★ সরকারের লোকেরা এটাও বলেছে এতে সাইবার নিরাপত্তা বাড়বে। হয়তো, বাস্তবে কতটা জানি না ।
এই স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে নাকি দেশের যে অর্থ আগে বাইরে চলে যেত সেই অর্থ দেশেই থাকবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। এটিই ছিল প্রথম দিকে এই স্যাটেলাইটের প্রতি দেশের মানুষের চিন্তা ইতিবাচক করবার জন্য প্রথম দিকের যুক্তি।
এই ব্যাপারটি বুজানোর জন্য একটি গল্প বলে উত্তর শেষ করছি।
এক গরিব কৃষক ছিল। তার একটি মাত্র ছোট জমি ছিল।নিজের কোন গরু ছিল না। অন্যের গরু দিয়ে হাল চাষ করতো বিনিময়ে যার গরু তাকে কিছু দিতে হত। সংসারে অভাব থাকলেও তার মনে ছিল বড়লোক হবার ইচ্ছা। কারণ বড়লোককে সবাই সম্মান করে।
আর বড়লোক হতে হলে পুঁজি বাড়াতে হবে কমাতে হবে ব্যয়। তো, সে খুজে বের করলো কিভাবে তার সংসারের খরচ কমানো যায়।তখন সে দেখলো তার সন্তানেরা দুধ খায় আর এতে তার খরচ হয় কিছু অর্থ।
তখন সে ভাবলো যদি সে একটি আস্ত গরু কিনে ফেলে তাহলে কেমন হয়? সেই গরু দিবে দুধ সেই দুধ দিয়ে মিটবে সন্তানের চাহিদা আবার গরু দিয়ে হাল চাষ করে বাড়বে সংসারের আয়। কিন্তু তার তো এমন অবস্থা যে কোন গরু কিনবার জো নেই।
তাই তাকে বাধ্য হতে হল মহাজনের কাছে ঋণ নিতে। মহাজন তাকে তার একমাত্র ছোট জমিটি বন্ধক নিয়ে তাকে অনেক ঋণ দিলে তা দিয়ে সে একটি ভাল গরু কিনে নিয়ে আসে। এখন গরু আসার কয়েক মাসের মধ্যে কৃষকের মাথায় হাত। কারণ গরুও যে খাবার দরকার পড়ে সেটা সে আমলে নেয় নি। সে বাজার থেকে অনেক টাকা দিয়ে এমন গরু কিনেছে যার খাবারের পেছনে, গোয়ালঘর নির্মাণে এত অর্থ ব্যয় হয়েছে যে এখন সে গরুটা বেচে ঋণের টাকা শোধ করতে পারলেই বাচে। আশা করি বুজতে পেরেছেন,ব্যাপারটা।
ধন্যবাদ।
- Aslam Mahmud