সমতল পৃথিবী (ইংরেজি ভাষায়: Flat Earth) বলতে এখানে পৃথিবী গোলাকার নয়, বরং সমতল, এই ধারণাকে বোঝানো হচ্ছে। অনেক আগে সবার ধারণাই এমন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে গ্রিকরা পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে সঠিক ধারণা পোষণ করতে শুরু করে। এই সময় থেকেই পৃথিবীর অনেক স্থানে সমতল পৃথিবীর ধারণা পরিত্যক্ত হতে শুরু করে।
চারপাশে তাকালে পৃথিবীকে সমতল মনে হয়। কারণ পৃথিবী এতো বড় গোলক যে, কোন নির্দিষ্ট স্থান থেকে চারপাশটা সমতল মনে হয়। বিজ্ঞানের যে পরীক্ষাগুলোতে পৃথিবীর উপরিতলের ছোট কোন অংশ নিয়ে কাজ করা হয় সেখানে সমতলই ধরা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ফলাফলের খুব একটা হেরফের হবে না। কিন্তু বৃহৎ দূরত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই গোলাকার ধরতে হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর তলকে সমতল ধরা হবে না গোলাকার ধরা হবে তা, কোন ধরনের কাজ করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। এ কারণেই প্রাচীন যুগে কেবল নাবিক বা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছাড়া কারও পৃথিবী গোলাকার এটা চিন্তা করার প্রয়োজন পড়তো না। অবশ্য দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদরাও এ নিয়ে চিন্তা করেছেন।
খ্রিস্টান ধর্মে এক সময় বিশ্বাস করা হতো, পৃথিবী সমতল। বর্তমানে এই বিশ্বাসকে "সমতল পৃথিবীর পুরাণ" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৪৫ সালে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক সংস্থা ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ২০টি ভুলের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় সমতল পৃথিবী পুরাণ ২ নম্বরে স্থান পেয়েছে। এখন বুদ্ধিজীবীদের অনেকে বলছেন, ৩য় খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর থেকে খুব ব্যতিক্রম ছাড়া পাশ্চাত্যের কেউই সমতল পৃথিবীর ধারণায় বিশ্বাস করতো না।
এ যুগে মনে করা হয়, মধ্য যুগের মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবী সমতল। অর্থাৎ গ্রিক যুগের পর কোন কারণে সমতল পৃথিবীর ধারণা ফিরে আসে। জেফ্রি রাসেল বলেন, মধ্য যুগে যে সমতল পৃথিবীর ধারণা ছিল তা ঊনবিংশ শতকে মানুষের কল্পনায় এসেছে। ১৮২৮ সালে প্রকাশিত ওয়াশিংটন আরভিং-এর The Life and Voyages of Christopher Columbus রূপকথাটি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এরা সবাই অবশ্য সমতল পৃথিবীর ধারণাকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি নামে একটি সংগঠন আছে যার সদস্যরা সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাস করে এবং এ বিশ্বাস প্রসারের জন্য কাজ করে।
©