পৃথিবীতে অনেকগুলো নো ফ্লাই জোন রয়েছে, নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত তাদের মধ্যে অন্যতম। তিব্বতের উপর দিয়ে বিমান কেন চলতে পারে না সে বিষয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে চলুন তিব্বত সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেই।
তিব্বতের উপর দিয়ে বিমান কেন চলতে পারে না
তিব্বত হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি আঞ্চলিক পৰ্যায়ের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল । যদিও তিব্বতের জনগণ তা মানতে রাজি নয় যে, তারা চীনের অংশ । আয়তনে ১২,০০,০০০ বর্গ-কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (চীনের জিংজিয়াং অঞ্চলের পর দ্বিতীয় সৰ্ববৃহৎ অঞ্চল) । পার্বত্য এবং দুর্গম পরিবেশের অঞ্চল হওয়ার জন্য চীনের সবচেয়ে কম ঘনবসতিপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল । উত্তর তিব্বতীয় ঢালু গড়ে ৪,৫৭২ মিটার (১৫,০০০ ফু) এর ও বেশি।নেপালের সাথে তিব্বত সীমান্তে মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত ।
বিবরণ
হিমালয় পর্বতমালা ( উচ্চতা ২৯,০২৯ ফুট ) এশিয়ার একটি পর্বতমালা যা তিব্বতীয় মালভুমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভূটান এশিয়ার এই ছয় দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালায় মাউন্ট এভারেস্ট, কেটু, কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রভৃতি বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গগুলি অবস্থান করছে।
তিব্বতের উপর দিয়ে বিমান কেন চলতে পারে না?
তিব্বত হলো এমন একটি জায়গা যেখানে ৬০০০ মিটারেরও এর বেশি উঁচু উঁচু পাহাড় রয়েছে। এমন অনেক পাহাড় রয়েছে যেগুলোর উচ্চতা ৮০০০ মিটারের চাইতেও বেশি হয়ে থাকে । সুউচ্চ পাহাড়ের জন্য তিব্বত বিখ্যাত। আর সম্পূর্ণ তিব্বত এমন উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা । যে পাহাড়গুলো বছরের প্রায় আট মাস-ই তুষার আবৃত থাকে ।
আমরা জানি যে, আমাদের বায়ু মণ্ডল ৫টি স্তরে বিন্যস্ত। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের স্তরটি হচ্ছে ট্রপোস্পিয়ার যার উচ্চতা পৃথিবীর থেকে ৭ মাইল উপরে। আর পৃথিবী থেকে এভারেস্ট এর উচ্চতা ৫ মাইলেরও বেশি। যার ফলে বিমান চলতে হলে দুই স্তরের মাঝে চলতে হবে। এখানে অক্সিজেনের পরিমান কম হওয়ায় বিমান এই স্তর দিয়ে চলতে পারেনা।
এবার আসা যাক কমার্শিয়াল প্লেন এর কথায়: একটি কমার্শিয়াল প্লেন সাধারণত ভূমি থেকে ৮০০০ মিটার উপর দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু তিব্বতের পাহাড় গুলো এর থেকেও বেশি উঁচু। যে কারনে প্লেনের কাছে পাহাড় গুলো দেয়ালের মতো।
বেশিরভাগ প্লেনের উচ্চতা 20,000 ফিটেরও বেশি উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে । বেশিরভাগ বিমানে যাত্রীর কাছে 20 মিনিটের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় ( জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ) । বিমান চলাচলের নিয়ম অনুযায়ী, অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেলে ২০ মিনিটের পূর্বে ১০০০০ ফিট নেমে আসতে হবে । তিব্বতে পর্বতমালার বিস্তৃতি, ২৮,০০০-৩০,০০০ ফুট উচ্চতায় । এক্ষেত্রে বিমান চালকদের পাহাড় এর উপর দিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানকে যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে হয়, সেখান থেকে অক্সিজেন পাওয়া যায়, ২০ মিনিটের মধ্যে বায়ুমন্ডলের এমন উচ্চতায় নেমে আসা কঠিন হয়ে পড়ে । বিমান পরিবহনকারীরা এই ধরণের হট্টগোল চায় না, তাই তারা তিব্বতের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া এড়িয়ে চলে ।
কিন্তু মজার বিষয় হলো তিব্বতে কিন্ত বিমানবন্দর রয়েছে । অর্থাৎ তিব্বতের উপর দিয়ে বিমান না গেলেও তিব্বতে কিন্ত বিমান ওঠা-নামা ঠিকই করে। তিব্বতের কয়েকটি বেসামরিক বিমানবন্দর হচ্ছে লাসা গঙ্গার বিমানবন্দর, কামডো বাগডা বিমানবন্দর, নিয়িংছি বিমানবন্দর, এবং গুন্সা বিমানবন্দর। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ৪৪৩৬ মিটার উচ্চতার নাজ্ঞু দাগ্রিং বিমানবন্দর হচ্ছে ২০১৪ সালে পৃথিবীর সবথেকে উঁচু বিমানবন্দর।