সম্মোহনের কয়েকটি পর্যায় আছে।
১. মারণ: মারণ হল অপছন্দের লোক কিংবা কোনো শত্রুকে সম্মোহিত করে নিকেশ করে ফেলা।
২. ত্রাটন: ত্রাটন হল ত্রাণ। এর মানে হচ্ছে, সম্মোহন করে শত্রুর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া। সুযোগ নিয়ে তাকে বশীভূত করা।
৩. স্তম্ভন: স্তম্ভন মানে তোল্লাই দেওয়া বা বার খাওয়ানো।
এই পদ্ধতিতে ঘোরতর অপরাধীকে সম্মোহন করে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় যে, সে অপরাধবোধ স্বীকার করে মহান হতে চায়। স্তম্ভনে ফেঁসে গিয়ে আসামী গড়গড় করে সব কিছু তদন্তকারী অফিসারকে বলে দেয়।
৪. বশীকরণ: নানা কৌশলে মানুষকে সম্মোহনের মাধ্যমে নিজের বশে এনে বিভিন্ন নির্দেশ দেয়াই বশীকরণ।
চাইলেই অবশ্য কাউকে সম্মোহন করা যায় না। কাউকে হিপনোটাইজ করতে হলে তার সাহায্য লাগবে। মানে সেই ব্যক্তি যদি ইচ্ছে না করেন তাহলে হিপনোটাইজ করা সম্ভব হয় না। সাধারণত সম্মোহিত করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে প্রথমে এক দৃষ্টিতে কোনো জিনিসের দিকে পূর্ণ মনযোগ দিয়ে তাঁকে তাকিয়ে থাকতে বলা হয়। অনেকক্ষণ যাবত যখন লোকটা কোনো কিছুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে তখন এমনিতেই
চোখ এবং মনও কিছুটা ক্লান্ত হয়ে যাবে। তখন তাকে বলা হবে চোখ বন্ধ করতে। চোখ বন্ধ করেই সম্মোহিত ব্যক্তি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে অনেকটা। যদি ঠিক ঠাক সম্মোহিত হয়ে থাকে, তাহলে এই পর্যায়ে হিপনোটাইজড ব্যক্তিকে সম্মোহনকারী ব্যাক্তি বিভিন্ন কথা বলবে, নির্দেশ দিবে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো হিপনোটাইজড ব্যক্তি এই নির্দেশগুলো পালন করতে শুরু করবে!
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে খুব সাধারণ ব্যাপার।
হিপনোটিজমের এতটাই প্রভাব যে, ধরে নিন এখন গ্রীষ্মকাল। কিন্তু, আপনি যাকে হিপনোটাইজ করলেন তাকে আপনি বুঝালেন এখন শীতকাল। সম্মোহিত ব্যাক্তি তখন হিপনোটাইজড থাকা অবস্থায় ঠক ঠক করে কাঁপা শুরু করবে, প্রবল শৈত্য প্রবাহে যেমন করে মানুষ কাঁপে ওমন। সম্মোহিত ব্যাক্তি ঐ নির্দিস্ট সময়টায় নিজেকে কানা, খোঁড়া, অন্ধ, বাক শক্তিহীন সবকিছুই ভাবতে পারে। ধরেন, আপনার কোনো বন্ধু চরম পর্যায়ের বাঁচাল। কিন্তু, হিপনোটিজম করে আপনি তাকে বুঝালেন, তুমি বোবা, তুমি কথা বলতে পারবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঐ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সে সত্যিই বিশ্বাস করবে সে বোবা, এবং কথা বলতে পারবে না! এবং সম্মোহন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তি ওই নির্দিষ্ট সময়ে কী কী ঘটেছে এবং সে কী কী করেছে, তার কিছুই মনে রাখতে পারে না!
ইংল্যান্ডে একজন দাঁতের ডাক্তার ছিলেন। তার নাম ডা. এস ডেল তিনি অবশ করার কৌশল ব্যবহার না করে রোগীকে হিপনোটাইজ করে দাঁত তুলে নিতেন। দাঁত উঠানোর সফলতা কাজে লাগিয়ে হিপনোটিজম ব্যবহার করে তিনি এরপর ফুসফুসের অস্ত্রোপচারও করেন! জটিল অপারেশনের সময় রোগীর মনে যে চাপ পড়ে, দুশ্চিন্তার তৈরি হয় সেসব দূর করা সম্ভব হিপনোটিজম করে।
এতো ভালো দিক বললাম। হিপনোটিজমের অপব্যবহারেরও উদাহরণ আছে অজস্র। ১৯৭০ দশকের কথা। আমেরিকায় থাকতেন এক ভারতীয় গুরু। তার শিষ্য সংখ্যা বেশ ভালোই। একদিন তার কি মতি হলো কে জানে! তিনি তার শিষ্যদেরকে হিপনোটাইজড করে নির্দেশ দিলেন, বিষ পান করতে। একটা বড় ড্রামে তরল বিষ ভর্তি ছিলো। শিষ্যরা সম্মোহিত অবস্থায় গুরুর কথা শুনে এক গ্লাস করে বিষ পান করলো। এই ঘটনায় এক সাথে প্রায় ৭০ জন মানুষ মারা যায়! আমেরিকান সরকার তখনকার এই গণআত্মহত্যায় আতংকিত হয়ে এই ধরণের গুরুকেন্দ্রিক আশ্রম গড়ে তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো।
সুত্রঃ এএনএম নিউজ ডেস্ক