মনোফোবিয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+4 টি ভোট
1,204 বার দেখা হয়েছে
"মনোবিজ্ঞান" বিভাগে করেছেন (141,850 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (141,850 পয়েন্ট)
নির্বাচিত করেছেন
 
সর্বোত্তম উত্তর

মনোফোবিয়া: একা হয়ে যাবার ভয়


কেস স্টাডি: ১

দিনা (ছদ্মনাম) তার বিবাহিত জীবনে অসুখী একজন মহিলা। তিনি বিয়ের প্রায় দশ বছরের মাথায় বুঝতে পারেন তার স্বামী আরেকজনের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছেন। দিনার দুটি ফুটফুটে সন্তান আছে। তিনি যথেষ্ট সুন্দরী একজন মহিলা এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। তিনি চাইলেই আলাদা হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু তবুও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংসার করে যাচ্ছেন। কারণ তিনি একা থাকতে ভয় পান। এই সংসারে অন্তত রাতে শোবার ঘরে কেউ থাকে। কিন্তু সংসার ছেড়ে চলে গেলে তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়বেন। তার ধারণা, তিনি একা থাকলে মারা যাবেন অথবা কেউ তাকে মেরে ফেলবে। তার স্বামী মানুষটা যেমনই হোক, তিনি আশেপাশে থাকলেই দিনা নিরাপদ!

কেস স্টাডি: ২

রুপক (ছদ্মনাম) বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বয়স বিশের কাছাকাছি। পড়াশোনায় খুব ভালো। কিন্তু ছেলেটি এখনও তার মাকে ছাড়া কোথাও চলাফেরা করতে পারে না। রাতে মাকে পাশে নিয়ে ঘুমায়, সকালে মা তাকে ভার্সিটিতে রেখে আসে, ফেরার পথে মা তাকে নিয়ে আসে, খাবার সময় মায়ের সাথেই খায়, এমনকি গোসলের সময়ও মাকে দরজার বাইরে থাকতে হয়। রুপকের বাবা খুব বিরক্ত হচ্ছেন। মা নীরবে চোখ মোছেন।

উপরে যে দুটি ঘটনা বলা হলো এখানে দিনা এবং রুপক একটি ফোবিয়ায় আক্রান্ত। এই ফোবিয়ার নাম মনোফোবিয়া।

মনোফোবিয়া হলো একধরনের মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত মানুষ সবসময় একা হয়ে যাবার ভয়ে আতংকিত থাকে। শুধু মানুষই না, পশুরাও এই রোগে ভোগে। মনোফোবিয়া কাটিয়ে ওঠা খুব সহজ কোনো ব্যাপার নয়। সত্যিকার অর্থে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রকাশভঙ্গী এমন হয় যে তার কাছের মানুষকে খুব বেশি ভালবাসছে বলেই তাকে চোখের আড়াল করতে চাইছে না। এমন ইতিবাচক একটি লক্ষণ থাকায় কেউই এটাকে রোগ মনে করেন না। কিন্তু ভুক্তভোগী বিভিন্ন সময় দুশ্চিন্তায় বিভোর থাকেন।

এই রোগকে অটোফোবিয়া বা ইসোলাফোবিয়াও বলা হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সবসময় তার মধ্যে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা এবং একা হয়ে যাবার ভয় পেতে দেখা যায়। ফলে তার ঘুম, খাওয়া, এমনকি একা বাথরুমে যেতেও সমস্যা হয়। মনোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষ স্বাভাবিক কোনো কাজ করতে পারে না। মাঝে মাঝে তার এই অতিরিক্ত সাথে সাথে থাকার প্রবণতা থেকে কাছের মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে, যা তার জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর।

মনোফোবিয়ার লক্ষণসমূহ:

• অস্থির লাগা, মাথা ঘোরা, হাত পা অবশ হয়ে আসা
• কেউ গলা চেপে ধরছে এমন বোধ হওয়া
• ঘন ঘন হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
• প্রচুর ঘাম হওয়া
• বুকে ব্যথা
• বমি বমি ভাব হওয়া
• হঠাৎ করে অসাড় হয়ে যাওয়া

আরও কিছু লক্ষণ:

• বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা
• মারা যাবার দুশ্চিন্তা হওয়া
• কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়
• হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লাগা, আবার গরম লাগা
• জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

মনোফোবিয়ার কারণ:

এই রোগের উৎপত্তি বা কারণ নির্দিষ্ট করে বলা একটু কঠিন। কারো হয়তবা ছোটবেলায় কোনো বড় দুর্ঘটনা থেকে হতে পারে, কারো চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে, কারো বা খুব কাছের মানুষের মৃত্যু থেকেও এমনটা হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে পুষে রাখা দুশ্চিন্তা, সম্পর্কে অবনতি, বাসায় অসঙ্গতিমূলক পরিবেশ ইত্যাদিও মনোফোবিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

এটাও বলা যায় যে, যারা খুব বেশি উদ্বিগ্নতার মাঝে থাকেন, একটা সময় তাদের ভিতর মনোফোবিয়া তৈরি হয়। যে সকল বাচ্চা নিজেদের বাবা-মায়ের কাছে কম সময় পায় বা বাড়িতে গৃহকর্মীদের নিকট বড় হয়, তাদের মাঝেও বিভিন্ন রকম ফোবিয়া দেখা দেয়। যারা মনোফোবিয়ায় ভোগেন তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে। এরা সাধারণত নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটার উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে থাকে।

মনোফোবিয়ার চিকিৎসা:

মনোফোবিয়ার চিকিৎসা আসলে মানসিকভাবে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধ্যান, কোনো সেমিনারে অংশগ্রহণ করা বা ব্যক্তিগতভাবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে এই রোগের প্রভাব অনেকটা কমিয়ে আনা এবং ক্ষেত্রবিশেষে সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব। হিপনোথেরাপির মাধ্যমেও এর চিকিৎসা সম্ভব। শুধুমাত্র ওষুধ দ্বারা এই রোগের চিকিৎসা করা হয় না। তবে স্নায়ু ঠাণ্ডা করার মতো ওষুধ, হালকা মাত্রার ঘুমের ওষুধ, এন্টি এংজাইটি বা দুশ্চিন্তারোধক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ডাক্তারগণ চিকিৎসা করতে পারেন। কারণ, এই সমস্ত রোগের ক্ষেত্রে রোগীর পর্যাপ্ত মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন।

কাছের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে আপনার যা করণীয়:

আপনি এতদূর পড়ে হয়ত বুঝতে পারলেন আপনার কাছের কেউ ইতোমধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার ভেঙ্গে পড়া চলবে না। আপনি যা যা করতে পারেন তা হলো-

তিনি যে কোনো একটা রোগে ভুগছেন এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা সাধারণত ‘রোগী’ নয়, এমনকি তারা মানসিক রোগীও নয়। এরা সাময়িকভাবে একটা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে যা তারা নিজেরাও জানে না। অতএব তাদের সাথে সেভাবেই কথা বলুন।

স্বাভাবিক থাকুন। তাকে কখনই বুঝতে দেয়া যাবে না আপনি তার সাথে কোনোরকম পরামর্শে যাচ্ছেন যেটা তার কোনো সমস্যার সমাধান দিবে।

সঙ্গ দিন। এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তির ভরসা করার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন।

তার আস্থার ব্যক্তি হন, কিন্তু নির্ভরশীলতার নয়। ব্যাপারটা একটু জটিল হতে পারে। কিন্তু এই রোগ থেকে পরিত্রাণের এটাই উপায়।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা একা চলাফেরা করার সুযোগ করে দিন। সেটা হতে পারে কোনো পার্ক, শপিং মল কিংবা রেস্টুরেন্ট। আপনি সাময়িকভাবে একটু দূরে সরে যেতে পারেন অথবা তাকে একাই কেনাকাটা করতে বলতে পারেন। এই সময় আপনি একটু দূর থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কোনো সমস্যা হলেই যেন আপনি সামনে থাকতে পারেন এমন দূরত্ব বজায় রাখুন।

তাকে আত্মনির্ভরশীল হলে সাহায্য করুন। ‘তুমি একাই পারবে’ এই ধরনের মনোভাব গড়ে উঠতে সাহায্য করুন। বিভিন্ন কাজ তাকে একাই করতে দিন। মাঝেমাঝে হালকা ধাঁচের ধাঁধা সমাধান করতে দিন। পড়তে দিতে পারেন কিছু গোয়েন্দা ভিত্তিক বই। পরবর্তীতে হয়ত শুনে নিলেন সে কেমন বোধ করছে অথবা কাউকে তার দোষী মনে হচ্ছে কিনা।

এই ধরনের মানুষেরা নিজের উপর আস্থা রাখতে পারে না, ফলে যেকোনো বিপদজনক পরিস্থিতিতে কেউ পাশে না থাকলে তার আতংকের সৃষ্টি হয় এবং সে ধরেই নেয় কাজটি তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই তাকে ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীল করে তুলুন।

আমাদের অজান্তেই হয়ত আশেপাশের অনেকেই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত স্নেহপ্রবণতাও এই ধরনের ফোবিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে প্রতিটি মানুষেরই নিজের উপরে নির্ভরশীল হতে শেখা উচিত। ব্যস্ত জীবনে হয়ত সবচেয়ে কাছের বন্ধু অথবা পরিবারের মানুষগুলোই একে অপরকে ঠিকমত সময় দিতে পারে না। এমন অবস্থায় যেন যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা একাই করা যায় এমন মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। আপনি, আমি আমাদের আশেপাশের সবাই যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ফোবিয়ায় নিজেদের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি। তাই নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত  রাখুন। এটাই মনোফোবিয়া থেকে নিরাপদ থাকার প্রধান উপায়। আত্মনির্ভরশীল হোন, সুস্থ থাকুন।

ক্রেডিট: সানজানা এস পায়েল (রোর মিডিয়া)

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+3 টি ভোট
1 উত্তর 272 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 2,311 বার দেখা হয়েছে
+3 টি ভোট
1 উত্তর 1,517 বার দেখা হয়েছে
0 টি ভোট
2 টি উত্তর 235 বার দেখা হয়েছে
21 নভেম্বর 2021 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Hojayfa Ahmed (135,490 পয়েন্ট)

10,826 টি প্রশ্ন

18,535 টি উত্তর

4,745 টি মন্তব্য

841,965 জন সদস্য

47 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 45 জন গেস্ট অনলাইনে

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ পৃথিবী এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল #science কী চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি মাথা স্বাস্থ্য প্রাণী গণিত মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান গরম খাওয়া #জানতে শীতকাল ডিম বৃষ্টি চাঁদ কেন কারণ কাজ বিদ্যুৎ রং রাত শক্তি উপকারিতা সাপ লাল আগুন গাছ মনোবিজ্ঞান খাবার সাদা মস্তিষ্ক আবিষ্কার দুধ উপায় হাত শব্দ মাছ মশা ঠাণ্ডা ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন কালো উদ্ভিদ পা মন কি বিস্তারিত রঙ পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য বাচ্চা হলুদ বাংলাদেশ সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি কান্না দাঁত বিড়াল আম
...