প্লাস্টিকের বোতলে আমরা যে জল খাই সেটা মোটেই নিরাপদ নয়। তা ছাড়া আমরা প্লাস্টিক তো শুধু জলের বোতলেই ব্যবহার করছি না, দৈনন্দিন অনেক কাজেই প্লাস্টিক হয়ে উঠেছে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই আমার এই উত্তরটা শুধুমাত্র প্লাস্টিকের বোতলে জলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্লাস্টিকের অন্যান্য ব্যবহারের ওপরেও এখানে কথা বলব।
সব প্লাস্টিক কিন্তু একরকম নয়। বোতলের নিচে দেখবেন এরকম একটা চিহ্ন আছে যেটা আমাদের বলে দেয় যে ওটা কি ধরনের জিনিস দিয়ে তৈরি। ১ থেকে ৭ অবধি নম্বর থাকে, এখানে ছবিতে ১ লেখা। এটাকে বলে রিসাইক্লিং সিম্বল।
উৎস- PET Recycling - Recycle
এবারে এই ১ থেকে ৭ পর্যন্ত চিহ্নগুলি কী বোঝায় আর প্লাস্টিকের নানান উপকরণ আমাদের ওপরে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে সেটা একসাথেই তালিকা দিয়ে বলছি।
- প্লাস্টিক ১- PETE (Polyethylene Terephthalate)- এই প্লাস্টিক জলের বোতল বা সরবতের বোতল তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। এগুলো কিন্তু কখনো গরম করবেন না, কারণ তা করলে সেখান থেকে এন্টিমনি (antimony) বেরিয়ে আসে। শুধু এই ধরনের প্লাস্টিক নয়, কখনো কোন প্লাস্টিকের জিনিস গরম করবেন না, এমনকি রোদেও ফেলে রাখবেন না। শরীরে এন্টিমনি বেশি হলে শ্বাসের সমস্যা বা ত্বকের সমস্যা হতে পারে। এই প্লাস্টিককে পরে কার্পেট বা কাপড় তৈরি করতে পুনর্ব্যবহার করা যায়।
- প্লাস্টিক ২- High Density Polyethylene (HDPE)- এটা খাবার জলের বোতলে থাকে না, কিন্তু ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পুর বোতলে বেশিরভাগ ব্যবহার হয়। এটা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
- প্লাস্টিক ৩ - Polyvinyl Chloride (PVC)- সবচেয়ে ক্ষতিকারক আর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্লাস্টিক। পাইপ থেকে খেলনা, অনেক কিছু বানাতে ব্যবহার হয়। এই প্লাস্টিক ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
- প্লাস্টিক ৪- Low Density Polyethylene (LDPE)- খাবার রাখতে গেলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এই প্লাস্টিক, তবে তাপের সংস্পর্শে এলে nonylphenol নিঃশৃত হয়, যেটা ক্ষতিকারক।
- প্লাস্টিক ৫ - Polypropylene (PP)- ঔষধের বোতল, সট্র বানাতে ব্যবহার হয়। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
- প্লাস্টিক ৬- Polystyrene (PS)- প্লাস্টিকের খাবারের বাক্স বা কফির কাপ বানানো হয় এটা দিয়ে। এটা বানাতে বেনজিন (Benzene) ব্যবহার হয় যেটা শরীরে গিয়ে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর ক্ষতি করে।
- প্লাস্টিক ৭- Other (BPA, Polycarbonate, and LEXAN)- এই Bisphenol A বা বি পি এ জিনিসটি খুব খারাপ। শরীরে অনেক ক্ষতি করে , বিশেষ করে হরমোনের তারতম্য ঘটিয়ে বাচ্চাদের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে দেয়, ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। শুধু প্লাস্টিকে নয়, এমনকি কাচের বা ধাতুর পাত্রের মধ্যেও অনেক সময় এটা ব্যবহৃত হয়।
তাহলে কোনটা ব্যবহার করবেন?
নম্বর ৩,৬,৭ এই তিনটি এড়িয়ে চলুন। ১ নম্বরটি ব্যবহার করলেও একবারের বেশি নয়। তবে যে প্লাস্টিকই নিন না কেন, প্লাস্টিকের পাত্রে কোনদিন কিছু গরম করবেন না বা মাইক্রোওয়েভে দেবেন না, তাতে তার থেকে রাসায়নিক বেরিয়ে আসে। পরিবেশের কথা যদি নাও ভাবি, অন্তত নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে কাচ, কাঠ বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
সম্প্রতি অসমের ধৃতিমান বোরা একটি সুন্দর জিনিস বানিয়ে দেখিয়ে দিলেন। এইযে এরকম বাঁশের বোতল। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার কমিয়ে এনে এরকম পরিবেশবান্ধব জিনিসকে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা। এখনও পর্যন্ত এগুলো অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর কথায়, এই বোতল leak proof এবং আকারে ছোট যাতে করে সহজে ব্যাগে ভরে নেওয়া যায়। কিন্তু তাঁর এই কাজে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলা।
©শ্রেয়সী