ক্রিয়েটিনিন কি?
ক্রিয়েটিনিন এক ধরনের বর্জ্য, যেটি মাংসপেশির কোষ ভেঙে তৈরি হয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখন ক্রিয়েটিনিন উৎপন্ন হয় তখন রক্তের সঙ্গে তা মিশে যায়। পরে রক্ত যখন কিডনির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন কিডনি এই রক্ত ছেঁকে ক্রিয়েটিনিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। তাই রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নির্ণয় করলে বোঝা যায় কিডনি কতখানি কর্মক্ষম আছে। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়গুলো নীচে লিখছি।
আসলে ক্রিয়েটিনিন কমানোর কোনো ওষুধ নাই। মূলত কিছু বিশেষ রোগ হলে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যেসব রোগের কারনে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে সেসব রোগের চিকিৎসা করালেই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন-এর স্বাভাবিক মাত্রা কতো ?
স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থাকে ০.৫-১.১ গ্রাম। স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে এর মান ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম। একটা কিডনী যাদের নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক। শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ২ গ্রাম/ডিএল-এর বেশি হলে মারাত্মক কিডনী দুর্বলতা হয়েছে বলে বুঝা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিন ৫.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের চেয়ে বেশি হলে কিডনী ড্যামেজ হয়েছে বুঝা যায়।
এখানে লক্ষণীয়, প্রতি মিনিটে কিডনি যতটা রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন বের করে দিতে পারে সেটাই ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট।এর মাধ্যমে কিডনি গঠণের একক গ্লোমেরুলাস কতখানি কাজ করতে পারছে তাও বের করা যায়। এটি গ্লোমেরুলাস ফিলট্রেশন রেট বা জিএফআর নামে পরিচিত। প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এ হার ১২৫ মি.লি.। এর অর্থ প্রতি মিনিটে কিডনি ১২৫ মি.লি. রক্ত থেকে সম্পূর্ণভাবে ক্রিয়েটিনিন বের করে দিতে সমর্থ। বয়স, লিঙ্গ ও শরীরের আকৃতির ওপর নির্ভর করে এই হার।
রক্তে ক্রিয়েটিনিনের উচ্চমাত্রার লক্ষণ কি কি?
- কিডনী ফেইলিয়র
- অবসাদ
- ইডিমা বা গায়ে পানি আসা
- শ্বাসকষ্ট
- ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
- বমি হওয়া বা বমিভাব
রক্তে ক্রিয়েটিনিন-এর মাত্রা বৃদ্ধির কারণ কি ?
- উচ্চ রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস
- কিছু ড্রাগ যেমন: সিমেটিডিন, ব্যাকট্রিম ইত্যাদি সেবন
- অধিক পরিমাণে মাংস আহারের পর পর রক্তে সাময়িকভাবে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়ে।
- কিডনীতে জীবাণু সংক্রমণ
- অস্বাভাবিক হারে মাংসপেশী বিশ্লিষ্ট হওয়া
- মূত্রপথে বাধা
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কি করা যেতে পারেঃ
- অতিরিক্ত কসরত ও শারীরিক ব্যায়াম হতে দূরে থাকা, যাতে মাংসপেশীর বিপাক কম হয় ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার ক্রিয়েটিনিনের লেভেল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এই ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক এসিড কিডনিতে পাথর জমতে বাঁধা দেয়।ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার যোগ করে পান করুন। যেকোন বেলায় খাবার পরে এটা খেতে পারেন।
- ক্রিয়েটিন সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ হতে বিরত থাকা।
- প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনা
- দারুচিনি ক্রিয়েটিনিনের লেভেল কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনি গুড়ো একটু পানিতে গুলিয়ে খেলে দ্রুত উপকার হয়।
- রেড মিট বর্জন।
- ডায়াবেটিক থাকলে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
- আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ বাড়িয়োদিতে হবে
- ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী পরিমিত পানি পান করা।
- বেকারি ফুড কম খাওয়া।
©তানিয়া নোভা