১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের মাঝা মাঝি চিকিতসা বিজ্ঞান আজকের মত ছিল না। তখন ভাবা হত সপ্তাহে একবার (পুরুষের!) কিছু পরিমান রক্ত ডান হাত থেকে বের করে দিলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে। নারীদের যেহেতু প্রাকৃতিক ব্যবস্থা আছে তাই নারীদের এটা প্রয়োজন নেই। কতটা উদ্ভট বলে মনে হচ্ছে আমাদের তাই না?!!
জার্মানি তে স্যার হ্যানিম্যান এই পদ্ধতির চরম বিপক্ষে ছিলেন৷ তার ধারনা ছিল এসব করে কারো অসুখ ভাল হয় না। বরং তিনি দিলেন এক নতুন তত্ত্ব। নাম তার "লাইক কিওরস লাইক" অর্থ্যাত কোন অসুখের কারন্নযা তার সুস্থতার কারন ও তাই৷ যেমন, পেয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয়। আবার চোখের এলার্জি হলেও চোখ দিয়ে পানি বের হয় তাহলে পেঁয়াজ হল এলার্জীর একটা ঔষধ।
কিন্তু তাই বলে কি চোখ খুলে পেয়াজের রস ঢেলে দিবে চোখে! এই সমস্যা সনাধানে এগিয়ে আসলেন আবার হ্যানিম্যান নিজেই। দিলেন তার দ্বিতীয় তত্ত্ব৷ বললেন " কোন ঔষুধের ঘনমাত্রা যত কম হবে তার কার্যকারিতা তত বেশি হবে। " ( আমরা পরে দেখব এটার ঘটনা)
এবারে আর নতুন কোন সমস্যা দেখা দিল না৷ মানুষ হোমিও চিকিতসা নেওয়া শুরু করল৷ কারাও কারো অসুখ ভাল হল কারো হল না কিন্তু সে তো সব ওষুধেই হয়। এখনকার যুগেই কি ঔষুধ খেলে সাথে সাথে অসুখ ভাল হয়ে যায়?
হোমিও ঔষধ কোন কোন অসুখের জন্য তৈরি হত?
জ্বর, স্বর্দি কাশি, মাথাব্যাথা, পেট ব্যাথা, ঘুম কম, বাচ্চা বিছানায় পিশাব করে দেয় এসব সহ ডায়বেটিস, আর্থ্রাইটিস, বাতের ব্যাথা, চোখের পানি পড়া এলার্জি সব কিছুর চিকিতসা হয় হোমিও দিয়ে! ( এটলিস্ট হয় বলে দাবি করা হয়)
হোমিও ঔষদের পরিমান নিয়ে কি যেন শোনা যায়?
একদম ঠিক শোনা যায়। ঐ যে হ্যানিম্যানের ২য় সূত্র বলে যে যত কম ঘনমাত্রা তত বেশি শক্তিশালি ঔষধ। চলুন মাওরা বেশ শক্তিশালি একটা ঔষধ বানাই৷
১। ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম ঔষুধ গুড়া দিলাম। তাহলে প্রতি ১ হাজার টি পানির অনুতে ১ টি ঔষুধের অনু আছে৷
২৷ এবারে ভাল করে ঝাকিয়ে ১ লিটার পরুষ্কার পানিতে ঐ খান থেকে ১ গ্রাম ঔষুধ পানি দিলাম৷ তাহলে প্রতি ১ মিলিওনে ১ টি ঔষুধ কনা আছে। অর্থ্যাত 1 ppm.
৩। এবারে আবার ঝাকিয়ে ১ লিটার পরিষ্কার পানিতে ২ নাম্বারের ঔষুধ পানি থেকে ১ গ্রাম দিলাম। এবার ১ বিলিওনে একটা ঔষুধ কনা আছে। একে বলে 1 ppb.
৪। আবার ঐ একই কাজ করলাম। এবার প্রতি ট্রিলিওনে আমার ঔষুধের কনা ১ টি বা সংক্ষেপে 1 ppt.
এভাবে ১০ -১২ বার করলে তৈরি হয় হোমিও প্যাথিক ঔষধ। সত্যি কথা বলতে এই ঔষুধের মধ্যে প্রথম নেওয়া ১ গ্রামের কোন কনা আর থাকে না৷ এইটা অবস্য আমাদের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার রা স্বীকার করে নেন। এবং এইখানে আসে হ্যানিম্যানের হাইপোথিসিস।
হ্যানিম্যান ভাবতেন, ঐ ঔষধ এতবার পানিতে মিসে মিসে যাওয়ার ফলে পানি ওষুধের গুনাগুন মনে রেখেছে৷ কিন্তু যেহেতু পানির মন বলে কিছুই নাই। আর কেমিক্যালি ঐ ঔষুধের কোন অনশিষ্টাংশ আর বেঁচে নাই তাই হোমিওপ্যাথিক ঔষধে কাজ দিয়েছে এমন কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কথার নাই।
তাহলে কি এটা আসলেই সম্পুর্ণ ভুল ভাল?
না হয়ত এমন না৷ মানসিক দিক থেকেও অনেক সময় কিছু হালকা অসুখ সেরে যায়। যেমন ধরুন মাথা ব্যাথা করছিল কারন ঘুম কম হয়েছে৷ হোমিও ঔষধ খেয়ে ভাবলেন ওষুধ তো খেয়েছি কমে যাবে৷ মস্তিষ্কের কোন ক্রিয়ায় হিয় মাথা ব্যাথা এই চিন্তার কারনে কমে গেল৷ আপনি ভাবলেন হোমিও প্যাথিতে কাজ দিয়েছে৷ কিন্তু ঔষুধ সরাসরি কেমিক্যাল বা ফিজিক্যাল চেঞ্জের মাধ্যমে কোন কিছু ভাল করেছে এমনটা বৌজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়।
আচ্ছা তাহলে সাইড ইফেক্ট?
এতক্ষণ ধরে আমরা দেখলাম ঐ ওষুধ গুলো পানি ছাড়া কিছুই না। তাহলে সাইড ইফেক্ট আসার কোন সম্ভাবনাই নাই৷ অর্থ্যাত ঐ ওষুধ খেয়ে কোন সাইড ইফেক্ট হবে এমনটা যেমন ভাবা যাবে না৷ ওটা খেয়ে কিউর হয়ে যাবেন এটাও তো ঠিক না৷ তবে খারাপ দিক আছে। সেটা হল৷ ধরে নিন আপনার পেটে আলসার হয়েছে৷ এবারে আপনি হোমিও ওষুধ খেয়ে খেয়ে বসে আছেন এদিকে আলসার বাবাজি বেড়েই চলেছে। কিংবা আরো ভয়ানক হয় যদি ক্যান্সার হয়। এদিকে আপনি হোমিওর ভরসায় ওদিকে ক্যান্সার ওর কাজ এ ব্যাস্ত৷ বলেন দেখি আপনার শরীরে খারাপ প্রভাব পড়বে কিনা।
এখন সিদ্ধান্ত হোমিও ঠিক নাকি ভুল?
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত যথেষ্ট তথ্য উপরে হাজির করেছি। বাকিটা আপনার বিবেচনা৷
SOURCES:
National Center for Complementary and Integrative Health: “Homeopathy.”
American Institute of Homeopathy: “What Is Homeopathy?”
British Homeopathic Association: “Helping People.”
FDA: “Over-the-Counter Asthma Products Labeled as Homeopathic.”
American Cancer Society:
©আকিব