আমার বিষয় যদিও জিবনবিজ্ঞান নয়, তাও শুধুমাত্র জানার ইচ্ছা ছিলো বলেই এই প্রশ্নের উত্তর খানিকটা হলেও জানি। কোথাও ভুল খুঁজে পেলে দয়া করে সেটা বলে দেবেন।
আমি যতদুর জানি হনুমানরা আমাদের পূর্বপুরুষ নয়। এটা বললাম কারণ আমাদের লেজ নেই কেনো? এই প্রশ্নটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হনুমান বা বাঁদর প্রজাতিকে দেখে আমাদের মাথায় আসে। আমাদের সব থেকে কাছের আত্মীয়ও হচ্ছে বন মানুষ বা চিম্পঞ্জি, যারা আজ থেকে মোটামুটি ৪০ লক্ষ বছর আগে নিজেদের লেজ হারিয়েছিল। এবার কেনো হারিয়েছিল সেটা খুব ছোট করে বলার চেষ্টা করছি।
১. বনমানুষ বা হিয়ুমানয়ড প্রজাতিগুলো সবার আগে বিবর্তনের ফলে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সুবিধে পেয়েছিল। তারা চতুষ্পদ থেকে ধীরে ধীরে দ্বিপদ প্রাণীতে বিবর্তিত হয়েছিল। একটি চতুষ্পদ প্রাণীর জন্য লেজ যে সুবিধে দেয়, একটি দ্বিপদ প্রাণীর ক্ষেত্রে সেটা সব সময় খাটেনা। লেজ থাকে চলাফেরার ভারসাম্য বা ব্যালান্স বজাই রাখার জন্য। একটি দ্বিপদ প্রাণীর লেজ থাকলে সেটা পেছন দিকে বাড়তি ওজন দিয়ে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
২. আমাদের পূর্বপুরুষরা বেশির ভাগ সময় টাই গাছে কাটাতো, ফলে লেজ থাকাই তারা গাছের ডাল ধরে ঝুলতে সুবিধে পেতো। আসতে আসতে যখন তারা মাটিতে বাস করতে লাগলো তখন লেজ এর ব্যবহার কমে গেলো। বিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী যেই অঙ্গের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমতে থাকে আমাদের শরীর সেটা একটা সময় পর বর্জন করে দেবে।
৩. একটি লেজ অর্থাৎ একটি আলাদা অঙ্গ তৈরি করতে আমাদের শরীরকে যথেষ্ট শক্তি ব্যয় করতে হয়। যেই অঙ্গের ব্যবহার আমাদের আর নেই বললেই চলে, শরীর কেনো শুধু শুধু তার জন্য শক্তি ব্যয় করবে? এটাও বিবর্তনের নীয়ম মেনেই প্রতিষ্ঠিত।
৪. এটা আমরা অনেকেই জানি যে আমাদের পূর্বপুরুষরা পরিযায়ী ছিল। অর্থাৎ যেখানে সুবিধে মত আবহাওয়া বা পরিবেশ পেতো সেখানেই একটি সময়ের জন্য স্থির হতো। জলবায়ু যদি সুবিধের ঠেকত না তাহলে তারা অনেক ক্ষেত্রে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন জায়গা খুঁজে নিত বাসা বাঁধার জন্য। দ্বিপদ প্রাণীদের ক্ষেত্রে লেজ থাকলে অনেকটা দূরত্ব হেঁটে অতিক্রম করাটা কষ্ট সাপেক্ষ এবং ক্লান্তিকর। ফলে সেটাও একটি কারণ লেজ কে বর্জন করার।
লেজ থাকলে আমাদের কি অসুবিধা হতো মোটামুটি বলে দিয়েছি। এবার সুবিধে যদি কিছু হয় তাহলে এগুলো হতে পারে।
১. লেজ থাকলে আমাদের শরীর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে, কারণ ঠিক মত সাইজ এর লেজ থাকলে সেটা একটা রেডিয়েটর এর মত কাজ করবে।
২. বিভিন্ন বাগধারা ব্যবহার করাটা আরো মজাদার এবং কার্যকারী হবে। যেমন- " তোর লেজ খুব বড়ো হয়েছে দেখছি", " বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর লেজ কেটে দেবো", আদি।
৩. কার লেজ কত বড়ো এই নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবো।
৪. আমি একটি ল্যাজবিশিস্ট শান্তশিষ্ট ছেলে সেটা এবার সবাইকে বিশ্বাস করাতে পারবো।
লেখকঃ সায়নীল মোল্লা