অল্পতে রেগে যাওয়ার কারণ এবং এটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+1 টি ভোট
719 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (28,310 পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (28,310 পয়েন্ট)
রাগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক অবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ।
ফ্রয়েডের মতে, অন্যের প্রতি আক্রমণ মানুষের নিজের প্রতি ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তির এক রকম আত্মরক্ষামূলক আচরণ (ডিফেন্স) মাত্র। আলবার্ট বান্দুরার মতো মনোবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত রাগ মূলত তিনি পরিবেশ থেকেই শেখেন। তার মতে, ব্যক্তি তার আগ্রাসীভাবের কারণে চারপাশের মানুষের কাছ থেকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয় (তার ইচ্ছা পূরণ হওয়া, অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অপরের ‘সমীহ’ ইত্যাদি)। অনেক সময় অন্যের আগ্রাসনও যখন পরিবার ও সমাজ কর্তৃক নানাভাবে উৎসাহিত হতে দেখে, সেটাও তাকে উৎসাহিত করে। তবে এ বিষয়ে অন্যতম শক্তিশালী তত্ত্ব জন ডোরাল্ডের ফ্রাস্ট্রেশন-অ্যাগ্রেশন মতবাদ। রাগ মূলত মানুষের আশাভঙ্গ, নিষ্ফলতা, ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে সে আশাভঙ্গ বা বিফলতার মাত্রা যদি গ্রহণযোগ্য না হয় বা এর মাত্রা যদি গভীরতর হয়।

উদ্বিগ্ন বা বিষণ্নতা: ব্যক্তি যদি কোনো বিষয়ে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকে, সে ক্ষেত্রেও তার অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা রেগে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
সামাজিক দক্ষতার অভাব: সমস্যা সমাধান বা দৈনন্দিন জীবনের নানামুখী চাপ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারা, অন্যের কাছে সঠিকভাবে প্রকাশের অদক্ষতা ইত্যাদি ব্যর্থতার দায় ব্যক্তি অনেক সময় কাছের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়।

কাজ ও সময়ের চাপ: অনেক কাজ একসঙ্গে এসে গেলে অথবা অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে সেসব যদি ঠাকমতো না হয়, তাহলে অনেকের মধ্যে টেনশন বা হতাশা জমতে জমতে রাগ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

পারিবারিক পরিবেশ: ছোটবেলায় যদি কেউ এমন পরিবেশে বড় হয়, যেখানে মা-বাবা বা অভিভাবকেরা অল্পতেই রেগে যান, সেই পরিবারে শিশুরাও একই ধরনের আচরণ শেখে।
কিছু মানসিক সমস্যা: বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, বিষণ্নতা রোগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতা রোগ, শুচিবায়িতা, মাদকাসক্তি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, কনডাক্ট ডিসঅর্ডার, ডিমেনশিয়া ইত্যাদির অন্যতম উপসর্গ রাগ।

এ ছাড়া খুঁতখুঁতে স্বভাব, হীনম্মন্যতাবোধ, অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব, সবকিছুতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ, ব্যর্থতা মেনে না নেওয়ার মনোভাব ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের মানুষের মধ্যে অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।

রাগ সামলাবেন কীভাবে
সিদ্ধান্ত নিন: রাগ যে আপনার একটি নেতিবাচক আবেগ, যার কারণে আপনার ও অন্যদের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটি আগে নির্দিষ্ট করুন, পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিন।
তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত থাকুন: রেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের কাছে কিছু সময় নিন। দেখবেন এই সময়ক্ষেপণের ফলে আপনার উত্তেজনা বা রাগের তীব্রতা কমে গেছে। ফলে রাগত অবস্থায় আপনি যেমন ধংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, রাগ কমে যাওয়ার পরে আপনি অনেক সঠিকভাবে আপনার মনোভাব অন্যের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

পরিস্থিতি থেকে সরে আসুন
যখন বুঝে যাচ্ছেন আপনি রেগে যাচ্ছেন, তখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থাতেই সেই পরিস্থিতি বা জায়গা দ্রুত ত্যাগ করুন বা কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ হতে থাকলে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলুন অথবা তার সঙ্গে সেই মুহূর্তে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় কিছু ‘রিলাক্সেসন এক্সারসাইজ’, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, গুনগুন করে গান গাওয়া, মজার কিছু ভাবা, মনে মনে নিজেকে শান্ত হতে বলা ইত্যাদি আপনার অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাড়ান
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়ম করে দিনে অন্তত আধা ঘণ্টা জোরে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটা বা যেকোনো ব্যায়াম, প্রতিদিন এক থেকে দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। মানসিকভাবে আপনাকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

গুণগত সময়: আপনার জীবনের গুণগত মান অন্যের ওপরে না, আপনার ভালো থাকার ওপর নির্ভর করে। সুতরাং নিজেকে ভালোবাসুন, ভালো রাখুন, গান শুনুন, বই পড়ুন, পছন্দের কাজ করুন। বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক মেলামেশা বাড়ান, নিয়ম করে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যান। নিজের জন্য প্রতিদিনই কিছুটা গুণগত সময় রাখুন।

আপনার জীবনের মান আপনি নিয়ন্ত্রণ করবেন, আপনার রাগ নয়। কাজেই রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কথায় তো আছেই—রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগ প্রকাশ করে হেরে যাওয়ার তো কোনো মানে নেই।

সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

+14 টি ভোট
1 উত্তর 587 বার দেখা হয়েছে
+14 টি ভোট
1 উত্তর 233 বার দেখা হয়েছে
+2 টি ভোট
2 টি উত্তর 510 বার দেখা হয়েছে
29 জানুয়ারি 2023 "মনোবিজ্ঞান" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Fatema Tasnim (4,950 পয়েন্ট)
+1 টি ভোট
1 উত্তর 435 বার দেখা হয়েছে

10,774 টি প্রশ্ন

18,455 টি উত্তর

4,742 টি মন্তব্য

263,239 জন সদস্য

65 জন অনলাইনে রয়েছে
0 জন সদস্য এবং 65 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. Tasfima Jannat

    110 পয়েন্ট

  2. GenaL8859262

    100 পয়েন্ট

  3. PhilSaltau7

    100 পয়েন্ট

  4. TodHeiman381

    100 পয়েন্ট

  5. ElouiseTherr

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর রক্ত #ask আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী চিকিৎসা #science পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...