বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের চামড়া কুঁচকে যাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। আসলে বয়স বাড়লে শরীরের চামড়া পাতলা, শুষ্ক ও কম স্থিতিস্থাপক হয়ে যায় এবং ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা হারাতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক তেল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে। একই সাথে ত্বকের গভীর স্তরে থাকা ফ্যাট কমতে থাকে এবং চামড়া ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। এর ফলে চামড়া কুঁচকে যায়। মুখে বলিরেখা ফুটে ওঠে।
মানব শরীরের ত্বকের তিনটি স্তর রয়েছে।
এগুলো হলো: epidermis, dermis এবং subcutaneous tissue বা hypodermis।
১. Epidermis :- এটি ত্বকের একেবারে বাইরের স্তর। এটি ত্বকের একমাত্র স্তর যা আমরা খালি চোখে দেখতে পারি। এই স্তরটি ত্বকের মৃত কোষগুলিকে নিচের স্তরের সাহায্যে তৈরি নতুন কোষগুলো দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এই স্তরে আছে মেলানিন, যা আমাদের গায়ের রঙের জন্য দায়ী। এপিডারমিস ত্বকের ভিতরের স্তরগুলির জন্য প্রতিরক্ষার মতো কাজ করে।
২. Dermis :- এপিডারমিসের নিচের মোটা স্তরের নাম ডারমিস। এই স্তরে সকল ফ্যাট, কানেক্টিভ টিস্যু, নার্ভ, ফ্যাট, ইলাস্টিন ও কোলাজেন থাকে। ডারমিসে ৮০% স্থান জুড়ে থাকে কোলাজেন। প্রোটিন, কোলাজেন শরীরের কানেকটিভ টিস্যুর প্রাথমিক উপাদান। এরা চামড়ায় দৃঢ়তা আনে। ইলাস্টিনের কাজ চামড়ায় স্থিতিস্থাপকতা আনা। তার ফলে চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিলে তা আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়।
৩. Subcutaneous Tissue :- এই স্তরটিকে hypodermis ও বলা হয়। এটি শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
Aging Of Skin:-
বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তিন স্তরের মধ্যে যে গঠনগত পরিবর্তনের ফলে আমাদের চামড়ায় কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনের পেছনে আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া যা শেষ পর্যন্ত চামড়া ঢিলে করে দিয়ে তাকে কুঁচকে দেয়। যেমন: Intrinsic Aging এবং Extrinsic Aging।
Intrinsic Aging :- একে ক্রোনোলজিক্যাল এজিংও বলা হয়। কারণ সারাজীবন ধরেই এই এজিং প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আসলে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সবার শরীরে এই এজিং প্রক্রিয়া চলতে থাকলেও বংশগতির ভিত্তিতে এর গতিপ্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। ২০ বছরের পর থেকে আমাদের শরীর প্রতিবছর ১% করে কম কোলাজেন উৎপন্ন করতে থাকে। কোলাজেন ও ইলাস্টিন যত মোটা ও ঢিলে হতে থাকে, চামড়া তত অস্থিতিস্থাপক ও ভঙ্গুর হয়। এতে বলিরেখা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। চামড়া কুঁচকে যায়। একই সঙ্গে ২০ বছর বয়স থেকে এক্সফলিয়েশন প্রক্রিয়া কমে গিয়ে ত্বকের মৃত কোষ জমতে শুরু করে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে ডারমিস ও এপিডারমিসের মধ্যে আদ্রতা আদান প্রদানের হার কমতে থাকে। এতে ফ্যাট সেল শুকিয়ে যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কম পরিমান তেল উৎপাদন করে। এর ফলে ত্বকের অবয়ব শুষ্ক হয়ে যায় এবং ত্বক কুঁচকে যেতে শুরু করে। মোটামুটি ৪০ বছর থেকে কোলাজেন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ৫০ বছরে পৌঁছে গেলে আমাদের ত্বকের নিচে সঞ্চিত ফ্যাট কমতে শুরু করে। তাতে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির ফলে এটি হয়। রক্ত প্রবাহের পাশাপাশি রক্ত সংবহন কমে যাওয়া এজিং এর জন্য দ্বায়ী। তবে এজিং প্রক্রিয়া খুব ধীরে ধীরে ঘটে বলে চট করে পরিবর্তনটা বোঝা যায় না।
Extrinsic Aging :- শরীরের ভেতরে ঘটে যাওয়া এজিং প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বাইরের পরিবেশগত নানা ফ্যাক্টর চামড়ার কুঁচকানোর কারণ হতে পারে। আবার বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশের সময় মুখের নানা জায়গায় ভাঁজ পড়ে। (যেমন: হাসি) হাসলে আমাদের মুখের যেসব জায়গায় ভাঁজ পড়ে ধীরে ধীরে সেইসব জায়গার চামড়া কুঁচকে যায়। এদেরকে এক্সপ্রেশন লাইন বলে। ধূমপান ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। যখন ধোঁয়া টানা হয়, তখন মুখের কয়েকটি পেশি এই কাজ করতে সাহায্য করে।
বার বার সিগারেট খেলে ওই জায়গাগুলি এক্সপ্রেশন লাইনের মতো হয়ে যায়। তাছাড়া সিগারেটে থাকা নিকোটিন এপিডারমিসের বাইরের স্তরে থাকা রক্তের কোষগুলোকে সরু করে দেয়। ফলে রক্ত সংবহন কম হয়, ত্বক পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় এবং তখন ধীরে ধীরে ত্বক অকালে ঢিলেঢালা হয়ে যায়। দূষণ থেকেও ত্বকের ক্ষতি হয়। পরিবেশে থাকা ফ্রি-র্যাডিক্যাল ত্বকের রাসায়নিক গঠন ও জৈবিক কার্যকারিতার পরিবর্তন ঘটিয়ে এজিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। সূর্যের আলোয় থাকা আলট্রাভায়োলেট রশ্মিও এজিং প্রক্রিয়ার পেছনে বড় ভূমিকা নেয়। একে ফটোএজিং বলে।আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন এর গবেষকরা মনে করেন ৮০% চামড়া এই কারণেই কুঁচকে যায় বলে মনে করে।