নিজের গলা রেকর্ড করার পর তা শুনে কি নিজেই আঁতকে উঠেছেন? আপনার গলা হয়তো আরো রুক্ষ বা মিষ্টি শোনাচ্ছে। আমার তো নিজের কন্ঠ শুনে কেমন যেন লাগে। আপনি রেকর্ড করে আপনার কণ্ঠস্বর যেরকম শুনতে পান সেটাই কিন্তু আপনার আসল কণ্ঠস্বর। আমরা যখন কোন শব্দ শুনি তখন সেই শব্দ আমাদের মস্তিষ্কে দুইভাবে পৌঁছতে পারে।
আমরা যখন বাইরে থেকে কোন শব্দ শুনি, সেটা বাতাসের মাধ্যমে আমাদের কানে প্রবেশ করে, তারপর কানের পর্দা বা ইয়ার ড্রাম দিয়ে গিয়ে কানের ভেতরে ককলিয়া (cochlea) অংশে যায়, সেখান থেকে এই শব্দ তরঙ্গ আমাদের মস্তিষ্কে গিয়ে বুঝিয়ে দেয় যে এটা কিসের শব্দ। তাই অন্যকেউ আপনার কথা শুনলে তিনি এই পদ্ধতিতে শুনবেন।
কিন্তু আমরা নিজে যখন নিজের কথাগুলো শুনি, তখন সেই আওয়াজ আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে দুইভাবে। একটা হচ্ছে ওই বাতাসের মাধ্যমে পৌঁছনো। এই শব্দের আরেকটা অংশ আমাদের মাথার হাড়ের মধ্যে দিয়ে ঘুরে গিয়ে সরাসরি ককলিয়ায় যায় এবং তারপর মস্তিষ্কে পৌঁছয়। এটাকে বলে বোন কন্ডাকশন (bone conduction)। আমরা যখন রেকর্ড করি তখন ওই বোন কন্ডাকশনের ব্যাপারটা থাকে না। বোন কন্ডাকশন থাকাকালীন নিজের গলাটা কিছুটা বেশি গভীর বা ভরাট লাগে শুনতে, পরে রেকর্ড করে শুনলে মনে হয় যে আমাদের গলাটা তার চেয়ে আরেকটু অন্যরকম। অর্থাৎ অন্যরা আমার কথা যেভাবে শোনেন আমিও তখন নিজের কথা সেভাবে শুনি ,তাই আলাদা লাগে শুনতে।
এই প্রসঙ্গে বলি, প্রখ্যাত সঙ্গীতস্রষ্টা স্যার Ludwig van Beethoven এই বোন কন্ডাকশনের ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। ভদ্রলোক কম বয়স থেকেই কানে ভাল শুনতেন না। তিনি তার নিজের সৃষ্টি শোনার জন্য তার পিয়ানোর মধ্যে একটা দণ্ড লাগালেন, দণ্ডের আরেক দিক লাগালেন তাঁর দাঁতের মাঝখানে। তখন তাঁর সঙ্গীতের সুর সেই দণ্ডের মধ্যে দিয়ে গিয়ে তাঁর হাড়ের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করার ফলে তিনি তা শুনতে পেতেন। পরে এই বোন কন্ডাকশন ব্যাপারটি কানে শোনার মেশিন বানাতে কাজে লাগানো হয়েছিল। -Shreyashi Bhattacharjee