রাইয়ান কামাল
অন্যান্য অনেক মানসিক সক্ষমতার মত সৃজনশক্তিকেও ঠিক সরাসরি কোন মাপকাঠিতে মাপা সহজ না। তাছাড়া সৃজনশক্তির অর্থও ব্যক্তিভেদে এবং চাহিদার উপরর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়। প্রোগ্রামিং পেশায় সৃজনশক্তি যেভাবে পরখ করা হয়, সেভাবে কপিরাইটারের পেশায় সৃজনশক্তি পরখ করাটা ঠিক হবে না। আলপনা আঁকার জন্য সৃজনশক্তি যেভাবে পরখ করা হবে, বইয়ের প্রচ্ছদ বানানোর কাজ করতে সৃজনশক্তি সেভাবে পরখ করাও ঠিক হবে না। আমি নিজে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও প্রকৌশল সম্পর্কিত পদে চাকরির সাক্ষাৎকার নিই, সময়ের সাথে সাথে এসব পেশায় সৃজনশক্তি পরখ করার কিছু পদ্ধতি আত্মস্থ করেছি। সেখান থেকে একটা উল্লেখ করতে পারি।
এই বিশেষ ক্ষেত্রে আমি সৃজনশক্তি বলতে আমি বুঝি একই সমস্যাকে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করার ক্ষমতা। এর জন্য আমি উন্মুক্ত প্রশ্ন (ইংরেজিতে বলে open-ended question ) দিতে পছন্দ করি। আলোচনা শুরু করতে মোটামুটি হালনাগাদ একটা বিষয়কে ধরে একটা প্রকৌশল সমস্যা দাঁড় করাই। যেমন, যে বছর কানাডায় নির্বাচন হয়েছিল, সেবার একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ইলেকশন্স কানাডা (বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের মত একটা প্রতিষ্ঠান) থেকে প্রত্যেক মুহুর্তে সব আসনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করার সিস্টেম বানাতে হবে। প্রার্থীকে বলি এই সমস্যাটা সমাধান করতে প্রচলিত যন্ত্রপাতি, উপকরণ, সফটওয়্যার ইত্যাদি ব্যবহার করে কাজ চালানোর মত একটা সমাধান দিতে। দুনিয়ার সেরা সমাধান না দিলেও চলবে। যদি কাজ চালানোর মত সমাধান দিতে পারে তাহলে সমস্যাটাকে আস্তে আস্তে কঠিন করতে থাকি। অথবা তার অপশন কমিয়ে দিই, অমুক যন্ত্র বা তমুক সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না। এবার বল দেখি কি করা যায়। সব সময় যে প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি তা না। বরং ভাল প্রার্থিরা আমাকেই নতুন কিছু শিখিয়ে দেয়। যাহোক, আমি লক্ষ্য রাখি কয়বার সেই প্রার্থী নতুন করে বিভিন্ন দিক থেকে সমস্যাটাকে আক্রমণ করতে পারছে। সে হয়ত একটা বিশেষ যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ অথবা বিজ্ঞানের একটা বিশেষ নীতিকে ভিত্তি করে সমাধান বানিয়েছে, সেটা সরিয়ে দিলেও কি সে নতুন আরেকটা সমাধান বানাতে পারে কিনা। এরকম পর পর কয়বার পারে? যে যতবার পারবে, তার সৃজনশীলতার "দৌড়" ততদূর।
খুব সংকীর্ণ অর্থে সৃজনশীলতা পরখ করার একটা পদ্ধতি এটা। জীবনের সব ক্ষেত্রে কাজে লাগবে দাবী করব না। তবে মাঝে মাঝে কাজে লাগতেও পারে।