"পিরানহা মানুষকে আক্রমণ করে, জীবিত কামড়ে খেয়ে ফেলে!" কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। পিরানহা মানুষকে আক্রমণের ঘটনা বিরল।
পিরানহা মিঠা পানির মাছ এবং এদের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। পিরানহা মাছ দেখতে অনেকটা রূপচাঁদা মাছের মতো তবে এদের শরীর কিছুটা লালচে ও ধূসর। "তীক্ষ্ণ দাঁতযুক্ত রাক্ষস" হিসাবে পিরানহা মাছের কুখ্যাতি আছে। এরা সর্বভুক মাছ। প্রজাতিভেদে পিরানহা মাছ ১২ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার (৫-১৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের হয়। Red Bellied পিরানহা মাছগুলো প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। দাবি করা হয় যে São Francisco পিরানহা মাছ প্রায় ৬০ সে.মি (২৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। বিলুপ্ত Megapiranha যেগুলো আজ থেকে ৮-১০ মিলিয়ন বছর আগে বিচরন করতো তারা প্রায় ৩১ সে.মি (২৮ ইঞ্চি) থেকে ১০০ সে.মি (৪০ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতো।
বর্তমানে প্রায় সব প্রজাতির পিরানহার উভয় চোয়ালে তীক্ষ্ণ, ত্রিকোণাকার ধারালো দাঁত থাকে এবং এই দাঁতের সাহায্যের এরা শিকার করে। শিকারকে এরা একক বা দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করতে পারে। রাক্ষুসে পিরানহা বলতে সাধারণত বুঝায় Black পিরানহা এবং Red Bellied পিরানহা। এরা মানুষের প্রতি আক্রমনাত্মক ও বিপদজনক। পিরানহা মাছকে মিডিয়া, বিভিন্ন মুভিতে ভয়ানক বিপদজনক ও মাংসাশী দেখানো হয়। এতোটাই বিপদজনক যে দলবদ্ধ শত শত মানুষকে কামড়ে খেয়ে ফেলতে পারে৷ পিরানহা নিয়ে কিছু ভয়াবহ মুভি হচ্ছে Piranha 3DD, Piranha 3D, Piranha II, Mega Piranha। এইসব মুভিতে পিরানহা মাছকে যেভাবে পোট্রের্ট করা হয়েছে তা দেখে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভয় পাবে। বাস্তবে পিরানহা মাছ এতোটাও ভয়ানক নয়।
পিরানহা মাছ যে মানুষকে আক্রমণ করেনা তাও নয়। কিছু পরিস্থিতি যেমন: পিরানহা মাছ যদি কোন কারণে বিরক্ত থাকে, শুষ্ক মৌসুমে যখন পানির অভাব থাকে তখন পিরানহা মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তুলনায় বাচ্চাদের পিরানহা আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। এমনকি ২০১৫ ও ২০১২ সালে ৬ বছর বয়সী দুটি শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে এবং পোস্টমর্টেম করে জানা যায় পিরানহা মাছ তাদের মাংস ভক্ষণ করেছে। মাংসাশী প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ পিরানহা মাছই সর্বভুক। পিরানহা মাছগুলো নানা ধরনের ফল, শস্য, উদ্ভিদ, শাক-সবজি, চিংড়ি, উভচর ছোট প্রাণী, মাছ, ইত্যাদি খায়। কিছু প্রজাতির পিরানহা অ্যাকুরিয়ামেও পোষা হয়, তাদের খাদ্য হিসেবে যদি মুরগির মাংস বা গরুর মাংসের টুকরো দেওয়া হয় তবে অনায়েসে খেয়ে ফেলবে।
মানুষ বা মানুষের মাংস পিরানহার খাদ্যাভাসের অংশ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষ এমন কিছু করে যার জন্য পিরানহা মাছ উত্তেজিত হয় বা আকর্ষিত হয়। যেমন: পানিতে শব্দ করা। ২০০৫ সালের এক গবেষণা মতে, পূর্বের ১০ বছরের রেকর্ড থেকে মাত্র ৩০ জন মানুষ পাওয়া গেছে যাদেরকে পিরানহা আক্রমণ করেছে। আক্রমণের কারণ ছিলো শরীরে ক্ষত থেকে রক্ত বের হতে থাকা সত্ত্বেও তারা পানিতে ঘুরাফেরা করেছে, যা পিরানহাকে আকর্ষণ করেছে। পিরানহা সাধারণত নিজের থেকে বড় আকৃতির কোন জীবিত প্রাণীকে কম আক্রমণ করে। তবে তারা মৃত প্রাণীর মাংস খেতে পারে। আবার, পিরানহা যদি নিজের ডিম এর প্রতি কোন হুমকি অনুভব করে তাহলে যেকোন প্রাণীকে কামড় দিতে পারে। তবে পিরানহা মাছ মানুষকে আক্রমণ করেছে এমন ঘটনার সংখ্যা কম।
বাংলাদেশে বর্তমানে পিরানহা মাছ খাওয়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে৷ অনেকেই ভাবতে পারেন পিরানহা মাছ সম্ভবত বিষাক্ত, এটি সত্যি নয়। পিরানহা মাছ খাওয়া যায়। অ্যামাজন এর আশেপাশের অনেক মানুষই পিরানহা মাছ খায়। এর স্বাদ অনেকটা মেছো এবং লবণাক্ত। এই মাছ সাধারণত ভেজে বা আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া হয়। অনেকে আবার মাছ সিদ্ধ করেও খান। পিরানহা মাছ খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ।
লিখেছেন: নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)