Deadpool
Marvel Comics এর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর একটি জনপ্রিয় সুপার হিউম্যান। সুপার পাওয়ারে চাইতেও দুষ্টুমি, ডায়ালগ, ফাইটিং স্কীলের জন্য তার কদর বেশি। তবে আজকে আমরা জানবো তার প্রধান ক্ষমতার পেছনের বিজ্ঞান যা তাকে সুপার হিউম্যান বানিয়ে ফেলেছে। Re-generating power!
Deadpool এর শরীরের Re-generating ক্ষমতা তাকে অন্যান্য হিরোদের থেকে আলাদা করেছে। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত সৃষ্টি হলে Wolverine এর মতো দ্রুত ক্ষত সারানোর ক্ষমতা তো আছেই। কিন্তু Deadpool এর ক্ষেত্রে তার শরীর থেকে কোনো অংশ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তার শরীর সেই অংশকে পুনরায় গঠন করে আগের মতো করে ফেলতে পারে। যদিও চমৎকার এই ক্ষমতা তার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো। সেও ছিলো একজন সাধারণ মানুষ। তার ক্যান্সার সারানোর জন্যই সে একদল Mutant গবেষকদের খপ্পরে পড়ে যায়। ওরা চেয়েছিলো তাকে ব্যবহার করতে একধরনের অস্ত্র হিসেবে। তার শরীরে Mutation ঘটানোর জন্য Serums পুশ করা হয় এবং পাশাপাশি প্রচুর বেদনাদায়ক ট্রিটমেন্ট করানো হয় যাতে করে তার মধ্যে সকল ধরনের ব্যাথা ও যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে তার দেহে Mutation সম্পন্ন হলে তার শরীর আপনা আপনি থেকেই ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। পাশাপাশি তার দেহ কোনো বিচ্ছিন্ন হওয়া অংশ পুনরায় গঠন করার ক্ষমতাও পেয়ে যায়। তবে দুঃখজনক ভাবে Mutation এর ফলে তার চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। যাতে সে অসন্তুষ্ট ছিলো এবং প্রতিশোধ পরায়ণে সে হয়ে ওঠে Deadpool!
এখন নিশ্চয়ই মনে মনে প্রশ্ন জাগছে যে বাস্তবে কি Deadpool হওয়া সম্ভব? কোনো উপায়ে কি আমরা মানুষেরা কি আমাদের হারিয়ে যাওয়া অঙ্গকে নতুন করে পুনর্গঠন করতে পারবো? এর উত্তর দুটোই। 'হ্যাঁ' এবং 'না'!
মানুষের ক্ষেত্রে Deadpool হওয়া সম্ভব না হলেও প্রকৃতিতে কিন্তু ঠিকই Deadpool-এর অস্তিত্ব আছে। তবে সে কোনো সুপার হিউম্যান নয়! জ্বী, আমি 'হ্যাঁ' এর পক্ষে বলছি। নাম তার Axolotl!
Mexican Walking Fish নামে পরিচিত একটি Salamander প্রজাতি Axolotl (অক্সোলোটল)। "Walking Fish" হিসেবে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো মাছ নয় বরং এটি একটি উভচর প্রাণী। Axolotl এর বাংলা অর্থ "জলের দানব" । দৈর্ঘ্যে মাত্র ২৩ সে.মি. কিউট প্রাণীটি কর্ডাটা পর্বের, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ambystoma mexicanum । মহাবিপন্ন এই প্রাণিটি থেকেই মূলত Deadpool এর মতো কাল্পনিক চরিত্র Comics এবং Cinema জগতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাণীটির পা বলুন, লেজ বলুন এমনকি মস্তিষ্কও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তা আবার পুনরায় গঠন করে আগের মতো করে ফেলতে পারে অল্প সময়ের মধ্যেই। পুনরায় বিচ্ছিন্ন বা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ গজানোর পর দেখে যেন মনে হয় কিছুই হয় নি! এমনকি শরীরের একই অংশ বেশ কয়েকবারই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। এদের দেহ কোষ Hyper Re-generation ক্ষমতা সম্পন্ন। যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। মানুষের দেহ থেকে অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি পুনর্গঠন হতে পারে না বললেই চলে হোক সেটা হাড় বা মাংস কিংবা অন্য কোনো কিছু। কিন্তু Axolotl এর কাছে এটি যেন কিছুই না।
Axolotl এর দারুন Re-generation ক্ষমতা দেখে বিজ্ঞানীরা Deadpool না পারলেও মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও এর সাহায্যে দেহ পুনর্গঠনের ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। Genetic Engineering এর সহায়তায় Axolotl এর মতো আমাদের দেহেও Mutation ঘটানো যেতে পারে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা ও প্রচেষ্টা মানুষের হারিয়ে যাওয়া অঙ্গ যেমন আঙুল, হাত-পা বা ক্ষতিগ্রস্ত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা দেহ কোষ-টিস্যু প্রভৃতি অস্ত্রোপচার ছাড়াই পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারবে বলে সবাই আশাবাদী। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও খুব শীঘ্রই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে যা আমাদের মানবজাতির জন্য মঙ্গলজনক। সে হিসেবে Axolotl-কে সুপারহিউম্যান না বলা গেলেও সুপার হিরো বলাই যায়।
তবে একটি প্রশ্ন... জ্বী, এবার ঐ যে 'না' এর পক্ষ থেকে করা প্রশ্ন এটি।
আপনার কি মনে হয়? মানুষের পক্ষে কি সত্যিই Deadpool হওয়া সম্ভব? কি হবে যদি দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় Deadpool হোক বা Axolotl? জানিয়ে দিন কমেন্টে আপনার মতামত!
আর হ্যাঁ, আমি চাই বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রাণীর সন্ধান পাক যার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত মনকে পুনরায় গঠন করতে পারবো। কেননা মানুষ হিসেবে আমরা শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চাইতেও মানসিক ভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
Reference (To know more about Axolotl) : https://youtu.be/uUw4NJmAUNI
লিখেছেনঃ Al Helal Islam, Science Bee-বিজ্ঞান গ্রুপ