ফুলে মধু হয়না, বরঞ্চ মধু বানানো হয়। তাহলে জানা যাক কারা এবং কিভাবে তৈরি হয় মধু :
ফুলে কোনো মধু থাকেনা। ফুলের রস বা মকরন্দ ব্যবহার করে মধু তৈরি করা হয়।
কর্মী মৌমাছিরা ফুলের কাছে গিয়ে তার হুল বের করে যা তার থুঁতনির নিচে লুকানো থাকে। ফুলের রসের পরিমাণ বুঝে ফুল থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী রস সংগ্রহ করে "মধু পাকস্থলি" তে জমা করে। সাধারণত মৌমাছির দুটো পাকস্থলি থাকে। একটি স্বাভাবিক পাকস্থলি আর অন্যটি মধু পাকস্থলি যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৭০ মি.গ্রা। এটিতে রস সংগ্রহ করে। একজন কর্মী মৌমাছি অনেক দূর পথ অতিক্রম করে, হরেক রকম ফুলে থেকে রস সংগ্রহ করে। এই রস মধুতে পরিণত করা শুরু হয় কখন? হ্যাঁ!
মৌচাকে ফেরার পথেই এনজাইম কর্তৃক মধু তৈরি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এই রসে আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে ৬০-৮০% আর্দ্র উপাদান থাকে। আর্দ্রতা কমিয়ে পানি বাষ্পীভূত করে রস থেকে মধুতে পরিণত হয়। আর্দ্রতা বেশী থাকলে রস গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে। মৌচাকে ফিরে কর্মী মৌমাছি ৫০ টি বয়স্ক-অল্পবয়স্ক মৌমাছিকে রসগুলো বণ্টন করে দেয় তারা। এরপর সব মৌমাছি মিলে উক্ত রস গুলো চিবুতে থাকে। ধীরে ধীরে পানি ৩৫-৫০% এ নেমে আসে। এরপর তারা রসবিন্দুটি মোমের কোষের তলায় জমা করে এবং কর্মী মৌমাছিরা ডানা ঝাপটে ঝাপটে মোমের কোষে বাতাস চলাচল জারি রাখে যাতে পানি বাষ্পীভূত হতে পারে। এরকম করতে করতে জলীয় পরিমাণ ১৫% এ নেমে আসলে এনজাইমের ক্রিয়ায় সুক্রোজের পরিমাণ ৫% এ পৌছায়। সাধারণত এই রসের অবস্থাকে মধু বলে। এই কার্যটি সম্পাদিত হতে ২/৩ দিন সময় লাগে। আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বনিম্ন যখন ১৮% এ নেমে আসে তখন এর উপর মোমের একটি আস্তরণ বসে। এই আস্তরণ না দেওয়া হলে মধু পরিপক্কতা লাভ করেনা। আর পরিপক্ক মধু কখনো নষ্ট হয়না। এইভাবেই মৌমাছি দের পরিশ্রমের বিনিময়ে তৈরি হয় আসল বা পিওর মধু।