শীত আসছে। বাইরে এখন শুষ্ক আবহাওয়া। বাতাসে ধুলোবালি। মুখে ব্রণ হওয়ার আদর্শ পরিবেশ। এ যেন গোটা গোটা যন্ত্রণা। একটা সেরে ওঠে তো, পাশে আরেকটা! আয়নার সামনে দাঁড়ালে হাত নিশপিশ করে। পুঁজভর্তি পাকা পাকা গোটাগুলো নখ দিয়ে খুঁটতে মন চায়। সাবধান! মনকে আজই প্রবোধ দিন, ভুলেও আর ব্রণ খোঁচানো নয়। এতে জীবাণুর বিস্তারের সঙ্গে প্রদাহও বেড়ে যায়।
অনেকের আবার ধৈর্য কম। পাকার আগেই কাঁচা ব্রণের ওপর হামলে পড়েন। নখ দিয়ে সেই কাঁচা ব্রণ খোঁটালে বিপদ আরও বাড়বে। ত্বকের অন্যখানে ব্রণের রস লেগে নতুন ব্রণের জন্ম হয়। এ ছাড়া খোঁচানোর কারণে ব্রণের ব্যাকটেরিয়া আশপাশে অন্য ব্রণগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং বাতাসে ভাসমান জীবাণু দ্বারা তা দ্রুতই সংক্রমিত হতে পারে। এই বদভ্যাসের জন্য আপনি আরও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন।
শুধু নখ দিয়ে খোঁটা নয়, ব্রণ আঙুলের চাপে ফাটানোর বদভ্যাসও আছে অনেকের। ফাটা ব্রণ থেকে নির্গত রক্ত ও রক্তরস মুখে ক্ষত ও দাগের সৃষ্টি করে। ব্যাকটেরিয়া ত্বকের গভীরে প্রবেশ করা মাত্র রক্তের শ্বেতকণিকা দ্রুত সেই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে চায়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক গঠনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্বক তার নিজস্ব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়াকে ক্রমাগত ঠেলে বের করে দিতে চায়। এ পরিস্থিতিতে আপনার পূর্বের ব্রণটি আরও ফুলে ফেঁপে একটি ব্যথাযুক্ত বড় ব্রণে পরিণত হয়ে ওঠে। এরপর খোঁটানো না থামালে সেই ব্যথাযুক্ত ব্রণ শক্ত দানাদার গোটা মানে ‘সিস্ট’-এ পরিণত হয়। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু যাঁদের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই, তাঁদের জন্য ব্রণ খোঁটানোর চারটি বিপজ্জনক দিক তুলে ধরা হলো:
খোঁচানো মানেই প্রদাহ বাড়ানো
মুখের পাকা টসটসে ব্রণ দেখে হাত নিশপিশ করছে? নখ দিয়ে খোঁটার আগে ওয়ালস্ট্রিট ডার্মাটোলজির চিকিৎসক জুলিয়া জুর কথাগুলো শুনুন, ‘ব্রণ খুঁটলে ত্বকের ভেতরকার প্রদাহ বেড়ে যায়। এতে ব্রণের সঙ্গে ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোটা ত্বক লালচে হয়ে উঠতে পারে এবং ব্রণ ফেটে চারপাশে সংক্রমিত হয়। এতে ত্বকের প্রদাহ (ব্যথা ও চুলকানি) বেড়ে যায় এবং নতুন ব্রণের সৃষ্টি হয়।’ চিকিৎসকদের মতে, ব্রণ হলো বন্ধ লোমকূপ ও ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে শরীরের প্রতিবাদ। সেখানে নখ দিয়ে খোঁটা মানে শরীরের স্বাভাবিক আরোগ্য-প্রক্রিয়াকে আপনি ব্যাহত করছেন।
নোংরা চর্মরোগ
মুখে ব্রণ হলে তা-ও লোকসমাজে চলতে পারবেন, কিন্তু ব্রণের পাশে নোংরা খোসপাঁচড়া হলে টেকাই দায়। নিজের কাছে নিজেকেই ঘৃণা লাগে! ব্রণ খোঁচালে কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। যে ব্রণটি আপনি নখ দিয়ে খুঁটছেন, সেখান থেকে নির্গত পুঁজ সংক্রমণের মাধ্যমে খোসপাঁচড়ার সৃষ্টি করে। এই খোসপাঁচড়াও ভীষণ প্রদাহ জাগানিয়া, যে কারণে নখ দিয়ে খুঁটতে ইচ্ছে হয়। এটা আসলে একটা চক্র! একবার আপনি এই চক্রে ঢুকে পড়লে সামান্য ব্রণ থেকে ভীষণ বিপদ হতে পারে।
মুখভর্তি দাগ
ব্রণ ক্রমাগত নখ দিয়ে খোঁচালে ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী দাগের সৃষ্টি হয়, যা আপনার স্বাভাবিক মুখশ্রীর জন্য হুমকিস্বরূপ। ত্বকে একবার এই দাগ পড়ে গেলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে মোচন করাও বেশ ঝক্কির ব্যাপার। ব্রণ নখ দিয়ে খুঁটলে সংক্রমণ থেকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয় কালো দাগের অর্থাৎ যত বেশি ব্রণ খোঁচাবেন, তত বেশি কালো দাগে মুখ ভরে যেতে পারে। ডার্মাটোলজিতে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া ইরিন গিলবার্টের ভাষ্য, ‘ব্রণ খুঁটলে কালো দাগ পড়ার আশঙ্কাই বেশি। একবার এই দাগ পড়ে গেলে তা চিকিৎসা করে দূর করাও বেশ কঠিন।’
আসলে চামড়া ছিঁড়ছেন
নখ দিয়ে ব্রণ খোঁটা মানে শুধুই পুঁজ বের করছেন না, আপনি নিজের চামড়াও ছিঁড়ছেন! নিউইয়র্ক সিটির সনদপ্রাপ্ত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সেজাল শাহ বলেন, ‘ব্রণ ফাটানো মানে আপনি আসলে নিজ চামড়া ছিঁড়ছেন। পুঁজ, ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, সেটা আসলে আপনার চামড়া ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট গর্ত।’ অর্থাৎ নখ দিয়ে ব্রণ খুঁটে আপনি নিজের চামড়ায় নিজেই গর্ত করছেন।
শেষ কথা
তৈলাক্ত ও ময়লা ত্বক, খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, ঘুমের সমস্যা এবং হরমোনের কারণে ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে। নখ দিয়ে ব্রণ খোঁটার লোভ সংবরণ করে বরং সচেতন হওয়া জরুরি। ব্রণের প্রতিকারে এমন খাবার খাওয়া যাবে না, যাতে হজমে সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ঘাম ও ধুলাবালি জমে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর লোমকূপের গোড়ায় ময়লা জমে ব্রণের সৃষ্টি হয়। নিয়মিত তাই ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া পানির অভাব পূরণ করতে প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা উচিত।
ক্রেডিট: প্রথম আলো