মানুষের নাকে গন্ধের অনুভতি বহনকারী ৪০০ রিসেপ্টর আছে যা ১ ট্রিলিয়ন গন্ধ শনাক্ত করতে পারে। কেরোসিন, পেট্রোল, রঙ, নেইল-পলিশ, বৃষ্টির গন্ধ আমাদের অনেকেরই ভালো লাগে। ভালো লাগার এই অনুভূতিকে Euphoria বলে। এসবের গন্ধ ভালো লাগার জন্য এগুলোতে উপস্থিত ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দায়ী। যেমন:
বৃষ্টির ঘ্রাণঃ বৃষ্টির ফলে আমরা মাটিতে যে সোঁদা গন্ধ পাই তা মূলত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার তৈরি জিওসমিন অণু থেকে হয়। বৃষ্টির ফোঁটা মাটি স্পর্শ করলেই জিওসমিন অণু বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার, বৃষ্টির ফলে গাছের যেসব রাসায়নিক সুগন্ধ তৈরি করে তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। আরেকটি কারণ হচ্ছে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক আবেশ তৈরি হয় যার ফলে প্রকৃতিতে ওজন গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পেট্রিকোর নামক এইসব গন্ধ মানুষের স্নায়ুতে পৌঁছে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
কেরোসিন ও ডিজেলঃ এরা পেট্রোলিয়াম থেকে প্রাপ্ত এক ধরনের হাইড্রোকার্বন লিকুইড। কেরোসিন, ডিজেলের ঘ্রাণ আমাদের স্নায়ুতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং মনে হয় যেন অ্যানেসথেশিয়া দেওয়া হয়েছে। যখন আমরা এইসবের ঘ্রাণ নেই তখন আমাদের নাকের আঠালো মিউকাসে গন্ধের অনুভূতি সৃষ্টিকারী উপাদান আটকে যায় এবং আমাদের ভালো লাগা সৃষ্টি হয় যাকে বলে ইউফোরিয়া।
পেট্রোলঃ পেট্রোলে আছে হাইড্রোকার্বন ও বেনজিন। বেনজিন এর প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি গন্ধ আছে যার প্রতি মানুষের নাক সংবেদশীল। বেনজিন ও অন্যান্য হাইড্রোকার্বন গুলো আমাদের স্নায়ুতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যখনই আমাদের অলফেক্টরি স্নায়ুতে পেট্রোলের ঘ্রাণ পৌঁছায় তখনি ডোপামিন নিঃসরণ হয় এবং ভালো লাগা কাজ করে। এটিও ইউফোরিয়ার মধ্যে পড়ে।
আঠা বা সুপার গ্লুঃ আঠা ও সুপার গ্লু দিয়ে আমাদের দেশে নেশা করার প্রচলন আছে। সুপার গ্লুর মূল উপাদান হচ্ছে cyanoacrylate যা আমাদের নাকের মিউকাস মেমব্রেনের সংস্পর্শে এলে এক ধরনের পোড়া অনুভূতি সৃষ্টি করে। আঠা দিয়ে নেশা করলে তা অনেকটা গাঁজার মতো প্রভাব সৃষ্টি করে।
রঙ ও নেইল পলিশঃ কেরোসিন ও পেট্রোল এর মতো রঙে আছে হাইড্রোকার্বন। এই হাইড্রোকার্বনের মিষ্টি গন্ধ আছে। অন্যদিকে, নেইল পলিশের মূল উপাদান হচ্ছে টলুইন। এই টলুইন এর মিষ্টি ঝাঝালো গন্ধ আছে। এইসব গন্ধ আমরা নিঃশ্বাস এর মাধ্যমে নিলে নেশা অনুভূত হয় যা ইউফোরিয়ার মধ্যে পড়ে।
বৃষ্টির ঘ্রাণ নেওয়ার ফলে আমাদের দেহের কোনো ক্ষতি হয়না তবে কেরোসিন, পেট্রোল, সুপার গ্লু, রঙ ইত্যাদির ঘ্রাণ আমাদের স্নায়ুকে ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে আমাদের ঘ্রাণশক্তি কমে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘ্রাণ নিলে বিষক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
©নিশাত তাসনিম (সায়েন্স বী)