মানুষের দাঁত পরিষ্কার রাখতে প্রতিদিন নিয়ম করে ব্রাশ করতে হয়। ব্রাশ করলে দাঁত পরিষ্কার থাকার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁতের ক্ষয় রোধ হয়। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ বাদে অন্যান্য প্রানীদের দাঁত মাজার প্রয়োজন হয়না। এর কারণ হচ্ছেঃ
▪️মানুষ যেসব খাবার খায় তা কৃত্রিমভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং এগুলোতে পরিশোধিত চিনিও থাকে। চিনি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে, তাই নিয়মিত দাঁত না মাজলে মানুষের দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়। কিন্তু বন্য প্রানীরা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া কাঁচা খাবার ও ফলমূল খায়। এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের জন্য তাদের দাঁত মাজার প্রয়োজন হয়না।
▪️কিছু প্রানীদের জীবদ্দশায় বহুবার দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত উঠে। যেমন: হাঙ্গর। হাঙ্গরের দাঁত বারবার পড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে এরা প্রতিনিয়ত হাড়ের মতো শক্ত খাবার চিবিয়ে খায়। Carcharhiniformes নামক এক ধরনের বড় প্রজাতির হাঙ্গর আছে যাদের জীবনকালে প্রায় ৩৫,০০০ বার দাঁত পড়ে। এদের দাঁত ক্ষয় হওয়ার আগেই পড়ে যায় তাই দাঁত মাজার প্রয়োজন পড়েনা।
▪️বেশিরভাগ প্রাণীদেরই মানুষের তুলনায় আয়ু কম। নানা পরিস্থিতিতে কিছু প্রানীদের গড় আয়ুর তালিকাঃ
- কুকুর : ১০-১৩ বছর,
- বিড়াল : ২-১৬ বছর,
- বাঘ-সিংহ : ১০-২৫ বছর,
- ঘোড়া : ২৫-৩০ বছর,
- নীল তিমি : ৮০-৯০ বছর,
- শিম্পাঞ্জি : সর্বোচ্চ ৬০ বছর।
সাধারণত দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে অনেক বছর সময় লাগে। তাই এইসব প্রাণীর দাঁত নষ্ট হওয়ার আগেই তারা মারা যায়।
▪️কুকুর, সিংহ, বাঘ, নেকড়ের মতো ক্যানাইন বা শ্বাদন্তদের লালার pH মান অনেক বেশি থাকে। যেমন: কুকুরের লালার pH মান প্রায় ৮.৫। অন্যদিকে মানুষের লালার pH মান ৭.৫ এর মতো। লালার ক্ষারত্ব বেশি হওয়ার তা দাঁতের এনামেল ক্ষয়কারী এসিডকে ভেঙে ফেলে। তাছাড়া কুকুরের লালা তাদের দাঁতকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
▪️কিছু প্রাণীরা নিজেই দাঁত ব্রাশ করে। যেমন: গরু, সিংহ, বাঘ, হাতি। আমরা জানি, গরু বেশিরভাগ সময়ই ঘাস চিবিয়ে চিবিয়ে খায়। এর ফলে ঘাসগুলো ব্রাশের মতো মুখ ও দাঁতের সব জায়গায় যায় এবং দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে৷ আবার বাঘ-সিংহের মতো প্রাণীরা শিকার ভোজন করার সময় তাদের হাড় ও দেহের লোম খেয়ে ফেলে৷ হাড় ও দেহের লোম অনেকটা ব্রাশের মতো কাজ করে।
▪️কুমির তার দাঁত পাখিদের থেকে পরিষ্কার করিয়ে নেয়৷ কুমির ভোজন শেষ করার পর তার পাখি এসে মুখের ভিতর বসে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে লেগে থাকা খাবারগুলো তুলে তুলে খায়। এমন এক প্রজাতির পাখি হচ্ছে Egyptian Plover। এর ফলে পাখিগুলোরও প্রোটিনের জোগান হয়, অন্যদিকে কুমিরেরও দাঁত পরিষ্কার থাকে।
বন্য প্রাণীদের দাঁত মাজার প্রয়োজন না হলেও পোষা প্রাণীদের কিন্তু দাঁত মাজতে হয়। যেমন: কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া ইত্যাদি পোষা প্রাণী।
@ Nishat Tasnim (Science Bee)