হ্যাঁ অবশ্যই আছে।
বজ্রপাতের উপকারিতা :
বজ্রপাতের সময় নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি করে নাইট্রোজেনের অক্সাইড। এই অক্সাইড জলের সংস্পর্শে পরিণত হয় অতি লঘু নাইট্রিক অ্যাসিডে। বিভিন্ন স্থানের বৃষ্টিতে অ্যাসিডের মাত্রা বিভিন্ন। সাবেক মধ্য রাশিয়াতে প্রতিবছর প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২.৫ টন অতিলঘু নাইট্রিক অ্যাসিড বৃষ্টির মাধ্যমে মাটিতে নেমে আসে। এই পরিমাণ ভারত ও চীন ৩.৫ টন, হ্যানয় অঞ্চলে ৭ টন।
নাইট্রিক অ্যাসিড সহজেই মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মাটির বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সহজেই অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়ে যায়। অ্যাসিড ও ধাতব অক্সাইডের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় নাইট্রেট লবণ; যা উদ্ভিদের অন্যতম পুষ্টি পদার্থ। মজার ব্যাপার হল বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ৭৭.১৬ শতাংশ হলেও, লিথোস্ফিয়ার বা মাটিতে এর পরিমাণ মাত্র ০.১ শতাংশ। প্রোটিন বা অ্যামিনো অ্যাসিডের অপরিহার্য উপাদান নাইট্রোজেন। বায়ুমন্ডলে বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকলেও প্রাণী ও উদ্ভিদ তা গ্রহণে সম্পূর্ণঅক্ষম। অ্যাজোটোব্যাকটর নামের ব্যাকটিরিয়া মটর, ছোলা, প্রভৃতি লিগুমিনাস জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে থেকে বাতাসের নাইট্রোজেনকে যৌগে পরিণত করে। তবে তার পরিমাণ খুবই সামান্য। এর পাশপাশি আবার রয়েছে ডি-নাইট্রোফাইং ব্যাকটিরিয়া, যারা মাটির নাইট্রেট লবণ থেকে নাইট্রোজেন গ্যাসকে মুক্ত করে। অর্থাৎ মাটিতে নাইট্রোজেন বা পরোক্ষভাবে প্রোটিনের উৎস হল বজ্রপাত ও বৃষ্টির দ্বারা তৈরি নাইট্রিক অ্যাসিড।
নাইট্রোজেন আত্তীকরণ (Assimilation) রেখা চিত্র:
বায়ুর নাইট্রোজেন + অক্সিজেন বজ্রপাত নাইট্রোজেনডাই অক্সাইড বৃষ্টির জল নাইট্রিক অ্যাসিড, মাটির ধাতব অক্সাইড দ্রাব্য নাইট্রেট উদ্ভিদ দেহে উদ্ভিজ্জ প্রোট্রিন, প্রাণী দেহে প্রাণীজ প্রোটিন শিল্পাঞ্চলের বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতি আরও বহুপ্রকার গ্যাস থাকে। এইসব গ্যাসের উপস্থিতি বায়ুদূষণ ঘটায়। বায়ুমন্ডলে বজ্রপাত বা বিদ্যুৎ ক্ষরণের ফলে গ্যাসগুলি অতিলঘু অ্যাসিডে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে নেমে আসে। তাই শুধু উদ্ভিদ ও প্রাণীর পুষ্টির জন্যই নয়, দূষণ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরির পেছনেও বজ্রপাতের ভূমিকা অনেক বেশি। ‘সাইবেরিয়ান সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব জিওলজির’ সহ –অধিকর্তা ভি বেগাটভ (V. Bgatov) একটি সুন্দর কথা বলেছেন- "যদি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে বজ্রপাতের ঘটনা না হত, তবে বিশ্বের সকল কারখানাকে নাইট্রোজেন সারকারখানায় পরিণত করতে হত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ধরার বুকে থাকতো না কোন প্রাণস্পন্দন, কারণ প্রথম প্রোটোপ্লাজম সৃষ্টির পেছনেও রয়েছে বজ্রপাতের অবদান।"