প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল বিশ্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যেখানে বলা হয়েছে যে, মহাবিশ্বে একাধিক পৃথিবী রয়েছে এবং তারা একটি অন্যটির প্রতিরূপ। প্যারালাল ইউনিভার্স আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মতো আরও একটি বা একাধিক ব্রহ্মাণ্ড যা ঠিক আমাদেরই মতো। সেখানকার প্রকৃতি, ভূমণ্ডল এমনকি প্রাণিজগৎও একেবারে আমাদেরই মতো। হুবহু আমাদেরই মতো দেখতে সবকিছু। একেবারে যেন আমাদের যমজ বিশ্ব।
এমনকি এটাও ধারণা করা হয় যে, প্যারালাল ইউনিভার্স এর পৃথিবীর মত যে গ্রহগুলো আছে সেগুলোতে একই ধরণের মানুষ আছে। হতে পারে আপনি যেমন এই লেখাটি এই মুহূর্তে পড়ছেন ঠিক আরেকটি প্যারালাল ইউনিভার্স এ আপনার প্রতিরূপ আরেকজন আছে যে এই মুহূর্তে এই লেখাটিই পড়ছে এবং আপনারা দু’জনেই দু’জনের কথা ভাবছেন। প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে ‘দ্য ওয়ান’ সিনেমাটিতে দেখানো হয় এক লোক পৃথিবীর সবগুলো প্যারালাল ইউনিভার্স এর গ্রহগুলোতে গিয়ে সেখান থেকে তার মত দেখতে মানুষগুলোকে মেরে ফেলছে।
আসলে এই প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণার অন্যতম উৎপত্তিস্থল হলো বর্তমানের সবচেয়ে আধুনিক এবং প্রমাণিত থিওরী কোয়ান্টাম মেকানিক্স। যেখানে এই জগতে এইসব কোয়ান্টাম পার্টিকেল (মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণা, মহা বিশ্বের বিল্ডিং ব্লকও বলতে পারেন) আপনার সাথে সবসময় লুকোচুরি খেলবে। এইমাত্র এক জায়গায় দেখলেন, আর আবার মুহুর্তের মধ্যেই দেখলেন গায়েব হয়ে গিয়েছে। আবার একই সাথে দুই জায়গায়ও একটা পার্টিকেলকে খুঁজে পাবেন, যেমনটা প্যারালাল ইউনিভার্সে আপনি একই সাথে দুই জায়গায় থাকেন। আবার দেখবেন আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে একটা থেকে অন্য পার্টিকেল ডাটা ট্রান্সফার করে আইন্সটাইনের রিলেটিভিটিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে চাইছে। কিভাবে হচ্ছে এই ব্যাপার গুলো?
একসময় আমরা মনে করতাম এটম সবচেয়ে ক্ষুদ্র পার্টিকেল, তারপর জানলাম এর ভেতরেও আছে নিউক্লিয়াস, প্রোটন আর ইলেকট্রন। এরপরে জানলাম ইলেকট্রন-প্রোটনও বিভিন্ন ধরনের কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। তাহলে কোয়ার্ক কি দিয়ে তৈরি? এখানেই আসে কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরী। কোয়ান্টাম থিওরীতে ইলেকট্রন, প্রোটন, কোয়ার্ক এগুলোকে একই সাথে কণা এবং তরঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। আর এসব কোয়ার্কের জন্ম ১৬ টি কোয়ান্টাম ফিল্ডের ১২ টির আলাদা আলাদা ম্যাটার ফিল্ড থেকে, অর্থাৎ ১২ রকমের পার্টিকেল/তরঙ্গ। আর অন্য ৪ টা ফিল্ড হলো বিভিন্ন ফোর্স সৃষ্টির ফিল্ড। যেমনঃ গ্র‍্যাভিটি, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজাম, স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স এবং উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স।
অর্থাৎ সবমিলিয়ে এই থিওরীতে ১৬ টা আলাদা আলাদা ফিল্ড রয়েছে। আর এই এক এক ফিল্ডে শক্তি দিয়ে এক এক ধরনের তরঙ্গ বা কণার জন্ম হচ্ছে। যেসব কণা দ্ধারা সৃষ্টি হচ্ছে মহাবিশ্বের এক একটি পদার্থের।
প্যারালাল ইউনিভার্স আছে বা নেই এটা নিয়ে অনেক গবেষণা, চিন্তা করছেন বিজ্ঞানীরা।
লেখা: Onu Saba/ কোরা বাংলা