সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকদিন থেকেই ভাইরাল এই ফ্যাক্টটি! আমাদের গ্রুপেই অন্তত ২০-৩০ বার এর সত্যতা জানতে চেয়ে পোস্ট এসেছে। অনেকে তো আবার #sbq লেখা দেখার পরও সোর্স চেয়ে বসেছেন! যিনি প্রশ্ন করছেন তার কাছেই তথ্যের উৎস চান! সোর্স থাকলে তিনি কি আর সত্য-মিথ্যা জানতে চাইতেন! যাই হোক এটি আসলে গুজব। জানতে চাওয়া পোস্টের কমেন্ট বক্সেই ডিবাঙ্ক করা হয়েছিল, এখন বিস্তারিত ভাবে এই গুজব ডিবাঙ্ক করা হচ্ছে। চলুন ধাপে ধাপে ডিবাঙ্ক করি তথ্যগুলো!
প্রথমে প্রশ্ন করা হয়েছে কাক দ্বিতীয়বার জোঁড়া বাধে না কেন?
গোড়ায় গলদ যাকে বলে সেটাই ঘটেছে এখানে। কারণ প্রশ্নটিই সম্পূর্ণভাবে সঠিক নয়। কাক দ্বিতীয়বার জোঁড়া বাধে না এমন নয়। তারাও দ্বিতীয়বার জোড়া বাধতে পারে। তবে এটি অবশ্যই যুক্ত করা উচিত যে কাক সামাজিক ভাবে কিন্তু মনোগ্যামাস।
আচ্ছা এই মনোগ্যামাসটা কী?
যারা তাদের জীবনের পুরোটা সময় এক সঙ্গীর সাথে কাটিয়ে দেয় অথবা একটি নিদিষ্ট সময়ে কেবল মাত্র একজন সঙ্গীর সাথে বসবাস করে তাদেরকে মনোগ্যামাস বলে৷ যেমনঃ রবিন পাখি! কাকও এই ক্ষেত্রে মনোগ্যামাস এবং এক জন সঙ্গীর সাথেই সারা জীবন কাটায়। তবে তার মানে এই নয় যে তারা অন্য কারো সাথে মিলিত হয় না৷ কারণ কাক সামাজিক ভাবে মনোগ্যামাস হলেও সেক্সুয়ালি এবং জেনেটিক্যালি মনোগ্যামাস নয়। ফলে এক সঙ্গীর সাথে থাকাকালীন সময়েই অঞ্চলভেদে বিভিন্ন কাককে অন্যান্য কাকের সাথে মিলিত হতে দেখা গেছে। উদাহরণ হিসেবে প্রথমে বলা যায় নিউইয়র্কের কথা। সেখানে দেখা গেছে ৮২% শিশু কাকের জন্ম সঙ্গী কাকের সাথে মিলনের মাধ্যমে হলেও বাকি ১৮% শিশু কাক অন্য কাকের সাথে মিলনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে। আবার আরেক গবেষণায় দেখা যায় ২৫ টি স্ত্রী কাকের মধ্যে ৩৬% স্ত্রী কাক সঙ্গী থাকা সত্ত্বেও অন্য কাকের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে৷ তবে এটা পরিষ্কার নয় যে মেয়ে পাখিরা অন্য পুরুষ কাকদের আসলেই সঙ্গম করার চেষ্টা করেছে কিনা!
তবে কিছু সূত্র মতে মেয়ে পাখিগুলো যখন তার সঙ্গী পুরুষ পাখি কর্তৃক যথাযথ ভাবে স্পার্ম পায় না তখন অন্য পাখিদের সাহায্য নেয় বাচ্চা উৎপাদনের জন্য। তবে এই সময়ে তারা নিজের সঙ্গীকে ছেড়েও যায় না। তবে এই গবেষণার যথেষ্ট ভিত্তি না থাকার কারণে এটাকে সত্য বলে মেনে নেওয়াও সম্ভব নয়।
তাহলে কী কাক একবারই মাত্র জোড় বাধে?
সাধারণ ভাবে হ্যাঁ। এক কথায় বলা যায় "They Mate For Life"। তবে যদি কোনো কারণে তার আগের সঙ্গী মারা যায় অথবা বাচ্চা উৎপাদনের অক্ষম হয় তাহলে কাক আবারও জোড় বাধতে পারে। ফলে ফ্যাক্টের প্রথম লাইনটি আংশিক সত্য।
এরপর আসি এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যেটাকে দাঁড় করানো হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা নিয়ে! প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে কাক বুদ্ধিমান পাখি। তাদের মস্তিষ্ক আমাদের বুড়ো আঙ্গলের সমান। তারা মানুষের চেহারা মনে রাখতে পারে। তবে যদি আমাদের বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলনা করা হয় তবে তারা আমাদের ধারেকাছেও নেই। তাদের কাছে আবেগ বা ভালোবাসার যে অর্থ তা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। তাহলে তারা কী আসলেই বুঝতে পারে যে দ্বিতীয়বার যে আসে সে ভালোবাসতে আসে না বরং বিপদে পড়ে আসে? উত্তর হবে, "না।" এত জটিল চিন্তা ভাবনা করার মত মস্তিষ্ক তাদের নেই। আর যদি কোনোভাবে তারা এটা চিন্তাও করে থাকে তাহলেও আমাদের জানার কোনো উপায় নেই! কেন নেই? কারণ তারা কথা বলতে পারে না। তাদের মস্তিষ্কের নিউরনের সিগন্যাল দেখার মাধ্যমেও বোঝার উপায় নেই তারা আসলেই এমন কিছু চিন্তা করছে কিনা!
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে এটি পরিষ্কার যে কাক সাধারণ ভাবে জীবনে একবার জোড় বাধলেও বিশেষ ক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় কিংবা একের অধিক বার জোড় বাধতে পারে। এবং একই সাথে একের অধিক পাখির সাথে তারা মিলিত হয়। আর এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যেই ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে সেটি মোটেও সঠিক নয়। প্রেম ভালোবাসা যদি তারা বুঝতেও পারে তবুও 'দ্বিতীয়বার যে আসে সে ভালোবেসে আসে না' এই ধরণের জটিল চিন্তা ভাবনা করার মতো উন্নত মস্তিষ্ক তাদের নেই!
অতএব, এই ফ্যাক্টটিকে গুজবের খাতায় রাখাই শ্রেয়!
©Science Bee