সম্প্রতি রেবেকা রবার্টস নামের একজন ব্রিটিশ নারী প্রেগনেন্ট থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার প্রেগনেন্ট হয়ে একটি ‘মেডিকেল মিরাকল’ এর জন্ম দিয়েছেন।
জিনিসটা খুবই ইন্টারেস্টিং এবং একই সঙ্গে জটিল। যতটা পারি বোঝানোর চেষ্টা করছি। ৩৯ বছর বয়সী এই নারী তার প্রেগনেন্সির তৃতীয় মাসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি আবারও প্রেগনেন্ট! অর্থাৎ, তার গর্ভে থাকা সন্তানের সঙ্গে আরেকটি ভ্রুণ বড় হচ্ছে। জমজ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়, এটা কিন্তু তেমন কোনো ঘটনা নয়। এই যে একবার প্রেগনেন্ট থাকা অবস্থায় পুরনায় প্রেগনেন্ট হওয়া, এটাকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ‘superfetation’। এটা এক্সট্রিমলি রেয়ার ঘটনা।
ডাক্তাররা বলছেন এই নারী তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার কনসিভ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাটা ঘটলো কীভাবে?
প্রথমে জানতে হবে একজন নারীর গর্ভধারণ প্রক্রিয়া কীভাবে শুরু হয়। নারীরা প্রতিটি মাসিকচক্রে ক্রমান্বয়ে এক বা একাধিক ডিম্বানু নিঃসরণ করে। যদি পুরুষের শুক্রানু দ্বারা এই এক বা একাধিক ডিম্বানু নিষিক্ত হয়ে জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়, তাহলে সেই মুহূর্ত থেকে গর্ভধারণ শুরু হয় এবং তারপর থেকে আর কোনো ডিম্বানু নিঃসরণ হবে না। তাই অনেকে যদি মনে করেন প্রেগনেন্ট থাকা অবস্থায় সেক্স করলে পুনরায় প্রেগনেন্ট হওয়ার একটা ক্ষীন সম্ভাবনা থাকে, সেটি পুরোপুরিই ভুল।
জমজ সন্তান কিংবা ট্রিপলেটের ক্ষেত্রে দুটি বা তিনটি ডিম্বাণু একই মাসিকচক্রের সময়ে নিষিক্ত হলে দু-তিনটি বাচ্চা একই সঙ্গে হতে পারে। কিন্তু রেবেকার ক্ষেত্রে এসব কিছুই হয়নি। যে মাসিকচক্রে সে প্রেগনেন্ট হয়েছে এবং প্রথম ভ্রুণটি তার গর্ভে এসেছে, সে একই মাসিকচক্রে সে আরেকটি ডিম্বানু নিঃসরণ করেছে এবং সেটি নিষিক্ত হয়ে আরেকটি ভ্রুণের জন্ম হয়েছে। পরবর্তীতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই উভয় ভ্রুণ জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। Superfetation প্রেগনেন্সি আরেকটি কারণে খুবই অস্বাভাবিক। নারীর জরায়ুতে যখন একটি ভ্রুণ প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়, তখন সেটি দ্বিতীয় আরেকটি ভ্রুণকে গ্রহণ করার জন অনুপোযোগী হয়ে যায়।
এইরকম পরিস্থিতিতে যদি সত্যিই দ্বিতীয় কোনো ভ্রুণ জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হতে চায়, তাহলে তাকে এমনভাবে প্রতিস্থাপিত হতে হবে যেটি এই দ্বিতীয় ভুণটির টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত কঠিন। বেকেবার চিকিৎসক বলেছেন এটা সাধারণত দেখাই যায় না যে দুইটা ভ্রুণ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়েছে! এই ব্রিটিশ মায়ের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটাই ঘটেছে। Superfetation প্রেগনেন্সি এতটাই বিরল যে ২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে সারা বিশ্বে এই ধরণের ঘটনা এখন পর্যন্ত দশ বারেরও কম ঘটেছে!
যাইহোক, রেবেকা তার দুই সন্তান নিয়ে অত্যন্ত খুশি। তার একটি অভিব্যক্তিতে সে বলেছে- ‘’মনে হয় লটারি পেলাম, এত খুশি লাগছে!’’ রেবেকা, তার পার্টনার রাইস ওয়েভার এবং দুই সন্তান নোয়াহ এবং তার অপ্রত্যাশিত ছোট্ট বোনের জন্য এক সমুদ্র শুভকামনা।
#সংগৃহীত