পেঁচাকে "নাইট বার্ড" হিসেবে সম্বোধন করা হয় এবং আমাদের মনে এর সম্পর্কে অন্যতম একটি ভুল ধারণা হলো, "পেঁচারা দিনের বেলায় দেখতে পায় না।" বিগত কয়েক বছর ধরে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, এরা দিন-রাত উভয় ক্ষেত্রেই সমান পরিমাণে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বজায় রাখতে সক্ষম। তবে রাতে দৃষ্টিশক্তি প্রখর থাকে বিধায় তারা সাধারণত রাতে শিকারে বের হয়।
পেঁচার রাতে ভালো দেখতে পারার ব্যাপারে অনেক বিজ্ঞানী বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন। প্রথমত, এদের চোখের রেটিনা এবং লেন্সের মধ্যবর্তী দূরত্ব সাধারণ মানুষের চোখের রেটিনা ও লেন্সের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও বেশি। ফলে পেঁচার চোখের রেটিনায় লক্ষ্যবস্তুর প্রতিবিম্ব মানুষের রেটিনায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের তুলনায় কয়েকগুণ বড় দেখা যায়। এছাড়াও, "পেকটিন" নামক এক প্রকার বিশেষ টিস্যুর কারণে পেঁচার চোখের লেন্স দূরবর্তী যেকোনো বস্তুর উপর পূর্ণমাত্রায় ফোকাস করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, পেঁচার চোখের অভ্যন্তরে মানুষের তুলনায় অধিক পরিমাণে "রডকোষ"(রডের মত দেখতে কোষ) ফটোরিসেপ্টর এবং অল্প পরিমাণে "কোন কোষ" রয়েছে। রডকোষ অনেক সংবেদনশীল এবং ম্লান আলোতে অধিক সক্রিয়, আর তীব্র আলোয় সাধারণত তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। রেটিনাল কোন কোষ উজ্জ্বল আলোতে সর্বোত্তমভাবে কাজ করে এবং পেঁচার চোখের কালার ভিউয়ের জন্য দায়ী।
পেঁচার একটি চোখের অভ্যন্তরে এক বর্গমিলিমিটারে প্রায় ১০লক্ষ (প্রতি বর্গইঞ্চিতে প্রায় ১৫৫০টি) রডকোষ রয়েছে; যেখানে মানুষের রয়েছে প্রতি বর্গমিলিমিটারে প্রায় ২লক্ষ (প্রতি বর্গইঞ্চিতে প্রায় ৩১০ টি); আর ঠিক একারণেই পেঁচা যেকোনো সাধারণ মানুষের তুলনায়ও প্রায় ৫গুন অধিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিধারী। আর পেঁচার চোখে "কোন কোষ" -এর তুলনায় অধিক পরিমাণে ম্লান আলোতে সক্রিয় হওয়া "রডকোষ" থাকার কারণে পেঁচা দিনের তুলনায় রাতেই ভালো দেখতে পায়।
এছাড়াও, পেঁচার চোখে "রেড কালার ম্যাটেরিয়াল" নামক এক প্রকার রাসায়নিক প্রোটিন রয়েছে যা এর চোখকে আলোর প্রতি অত্যধিক সংবেদনশীল করে তোলে। এটি পেঁচার চোখের পিউপিল আরো প্রসারিত করে ফেলে বিধায় সকল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।