পাখির ডিমের আকৃতিতে আশ্চর্যজনক ভিন্নতা দেখা যায়। হামিংবার্ডের ডিম উপবৃত্তকার, প্যাঁচার ডিম গোলাকার। আবার বেলাভূমি বা তটে ডিমপাড়া পাখির ডিম সূক্ষ্মাগ্র ও ডিম্বাকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে ডিমের আকৃতির এই পার্থক্য কেন? নতুন এক গবেষণা বলছে, ডিমের আকৃতি নির্ভর করে পাখির ওড়ার ক্ষমতা ও দক্ষতার ওপর।
পাখির ডিমের আকৃতি নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব চালু আছে। যেমন, নীড় বা বাসার কারণে ডিমের আকৃতিতে ভিন্নতা আসে। উঁচু খাড়া পাহাড়ে বাসা বাঁধা পাখির ডিম মোচার আকৃতির হয়। আঁটো পরিসরে ডিমগুলো থাকতে পারে, তাই এমন আকৃতি। ধারণা করা হতো, কিছু পাখি একবারে পরপর বেশ কিছু ডিম পাড়ে। এই ক্ষমতার কারণে সেসব ডিমের আকৃতি ভিন্ন হয়। এ রকম নানা তত্ত্বে নানাজনের আস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, পদার্থবিদ্যা ও জীববিজ্ঞানের গবেষকেরা নতুন কথা বলছেন। তাঁদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল ও ফিলিপাইনের বিজ্ঞানীরাও আছেন। তাঁরা পাখির ১ হাজার ৪০০ প্রজাতির ৪৯ হাজার ১৭৫টি ডিম নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইতিমধ্যে দুটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা জাদুঘর থেকে তথ্য নিয়েছেন। তাঁদের গবেষণা ২৩ জুন বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত হয়।
এই বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখি কতগুলো ডিম পাড়ে, পরিবেশগত বিষয় বা বাসার চরিত্র ডিমের আকৃতি নির্ধারণ করে না। তাঁরা বলছেন, ডিমের আকৃতির সঙ্গে পাখির ওড়ার ক্ষমতা ও সবদিকে ছড়িয়ে পড়ার সামর্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে। যে পাখি ওড়ার ক্ষেত্রে দক্ষতর তার শ্রোণি বা নিম্নঔদরিক খাঁজ (পেলভিস) সরু বা চাপা হয়। এই সরু বা চাপা শ্রোণির সঙ্গে সমঝোতার কারণে ডিমও সরু হয়। আর সরু ডিমের মধ্যে ছানা ঠিকভাবে যেন থাকতে পারে তাই ডিম লম্বা, উপবৃত্তকার বা অপ্রতিসম হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওড়ার জন্য শরীর নরম ও যথাযথ রাখাতে পাখিরা তেমন ডিমই পাড়ে যেগুলো অপ্রতিসম বা উপবৃত্তকার। পাখিরা ডিমের প্রস্থ না বাড়িয়ে ডিমের আয়তন সর্বোচ্চ করতে পারে। এটাই সরু ডিম্বনালির সুবিধা। আলবাট্রোস ও হামিংবার্ড একদম ভিন্ন ধরনের দুটি পাখি। কিন্তু তাদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উড্ডয়ন দক্ষতার কারণে ডিমের আকৃতি একই ধরনের।